নিরন্ন মানুষের ভরসা ভালো কাজের হোটেল
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০০
নিরন্ন মানুষের ভরসা ভালো কাজের হোটেল
সানজিদা আক্তার
প্রিন্ট অ-অ+

দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির মাঝে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে ইফতার ও সেহরিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন একদল তরুণ। প্রতিদিন ভালো কাজের বিনিময়ে তাদের দেয়া হচ্ছে খাবার।


সাধারণত দুপুর ও রাতের খাবারের আয়োজন করলেও রমজান মাসে তারা  সেহেরি ও ইফতারের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন ভালো কাজের হোটেলের মাধ্যমে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে সাজানো হয় তাদের প্রতিদিনের আয়োজন। খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের নিরন্ন মানুষের শেষ ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে ভালো কাজের হোটেল।


গত ৩১ মার্চ সেহরিতে সাদা ভাতের সাথে গরুর গোস্ত রান্না হয়েছিল ভালো কাজের হোটেলে। যা ঘুরে ঘুরে বিতরণ করা হয়েছে বস্তিতে বস্তিতে। 


বস্তির আব্দুর রহমান বলেন, আশেপাশের অনেকেই হাড়িতে পান্তা ভাত রেখে ঘুমায় সেহরির নিয়ত করে। হয়তো আল্লাহর নিকট দোয়ার বরকতে তারা হাজির হয়েছিল উছিলা হয়ে।


ইফতারে আয়োজন করা হচ্ছে তিন ধরনের খাবার। জনপ্রতি কত খরচ হচ্ছে তাও তাদের পেজে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম মেন্যুতে আছে: ডিম খিচুড়ি, খেজুর, শরবত ও পানি (ওয়ান টাইম গ্লাস) যা জনপ্রতি খরচ ৪৮ টাকা।


মেন্যু- ২তে রাখা হয়েছে চিকেন খিচুড়ি (ডিম সহ), খেজুর, শরবত ও পানি (ওয়ান টাইম গ্লাস) যার জনপ্রতি খরচ ৬৫ টাকা। 


তৃতীয় মেন্যুতে রাখা হয়েছে চিকেন বিরিয়ানি, খেজুর, শরবত ও পানি (ওয়ান টাইম গ্লাস)। এতে জনপ্রতি খরচ হয়  ৮২ টাকা।


স্বেচ্ছাসেবক বোরহান উদ্দিন সাকিব বিবার্তাকে জানান, নামেই কাঁচা বাজার। জিনিসপত্রের যা দাম। হাত দিলে বুঝা যায়, যেন আগুন লেগে আছে। রোজার আগে যেখানে প্রতিদিন ১২০০-১৩০০ মানুষ খাবার খেত। সেখানে ৮০০-৯০০ জনের জন্য ইফতার আয়োজন করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ইফতার আয়োজন ছিল ৮৫২ জনের। প্রতিদিনই শত শত মানুষকে কেবল পানি আর শরবত খাইয়ে বিদায় দিতে হচ্ছে।  


রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারার মোড়ে খাবার গ্রহণকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে কথা হয় বিবার্তা প্রতিবেদকের। যেখানে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ জন মানুষকে আপ্যায়ন করা হয় ভালো কাজের বিনিময়ে।


খাবার গ্রহণকারী মনসুর আলী বিবার্তাকে বলেন, আমি আজকে এক পাগলকে গোসল করিয়ে আমার একটা লুঙ্গি পড়িয়ে দিলাম। তারপর তাকে খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসছি। 


অন্যদিকে আব্দুর রব বিবার্তাকে তার ভালো কাজের বিষয়ে জানায়, একজন বৃদ্ধ মহিলা রাস্তায় কান্না করছিল। তার টাকার ব্যাগ চোরে নিয়া গিয়েছে। পরে তিনি তাকে ৫০ টাকা দিয়া গাড়িতে তুলে দিয়ে উপকারে করে। এটাই তার আজকের ভালো কাজ ছিল বলে জানান।


আজকে আমার ভালো কাজ হইল এক প্রতিবন্ধীরে রেল লাইন পারাপার করে তার জায়গায় বসাই দিছি ভিক্ষা করার জন্য- আরেকজন খাবার গ্রহণকারী রাজ্জাক মিয়া বিবার্তাকে এমনটিই বলেন।


ভালো কাজের হোটেলের উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, এই হোটেলের মোট ছয়টি শাখা রয়েছে। ঢাকার মধ্যে ৫টি। রাজধানীর কারওয়ান বাজার ছাড়াও চারটি স্থানে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি- স্থানগুলো হলো বনানী, সাত রাস্তার মোড়, খিলগাঁও, কমলাপুর এবং ঢাকার বাহিরে চট্টগ্রামেও একটি শাখা আছে। এই হোটেলে খাবার আয়োজনের জন্য টাকার জোগান দেন ডেইলি ডের মেম্বার আর কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী।  


তিনি আরো বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় মানুষ বিভিন্ন খারাপ কাজ করে। যদি তাদের পেট ভরা থাকে এসব খারাপ কাজে তারা লিপ্ত হবে না। এ জন্য খাবারের আয়োজন করি, যাতে তারা খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকে। 


রমজান বাদে শনি থেকে বৃহস্পতিবার অসহায় মানুষকে অন্তত একটি ভালো কাজের বিনিময়ে খাবার পরিবেশন করেন এসব তরুণরা। শনিবারে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে এ কার্যক্রম। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে বেলা দেড়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত।


শুক্রবার তারা খাবার নিয়ে ছুটছেন রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায়। মসজিদের সামনে বসা নিম্ন আয়ের মানুষদের হাতে যেমন খাবার তুলে দিচ্ছেন, তেমনি এতিমখানায় গিয়ে এতিমদের খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দেন। এভাবে ১০০০ থেকে ১২০০ জনকে খাওয়ান।


প্রতি শনিবার রাতে পিকনিক হয় ভালো কাজের হোটেলে। বিকেল থেকে রান্না চলে ফুটপাতেই। মেন্যুতেও রাখা হয় বিশেষ খাবার। এই যেমন- কোনোদিন সাদা ভাত আর গরুর গোস্ত। অথবা পোলাউ, বিরিয়ানি।


দূর-দূরান্ত থেকে মেহমানরা আসে। চোখের সামনে রান্না হয়। অনেক মেহমান স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে হাত লাগায়। ঠিক যেন একটি পরিবার। 


বিবার্তা/সানজিদা/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com