গাড়ির আগে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে মানুষ
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:১৪
গাড়ির আগে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে মানুষ
মো. নকিবুল হাসান
প্রিন্ট অ-অ+

যানজটের কারণে গাড়ির চাকা থেমে থাকলেও সময় থেমে থাকে না। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় দেড় কোটি লোকের বসবাস মাত্র ৩০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে। দিন দিন নগরীর লোকসংখ্যা বেড়েই চলছে। যানজটে প্রতিদিন মানুষের বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্টের পাশাপাশি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। এতে সাধারণের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। উন্নতির বদলে দিনের পর দিন পরিস্থিতির অবনতিই হচ্ছে। রাজধানীতে যানজট একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও দিনদিন তা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, প্রায় সময় পায়ে হেঁটে গাড়ির আগে গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে। আর এই যানজটে আটকা পড়ে প্রতিদিন রাস্তায় অপচয় হচ্ছে কর্মস্পৃহা ও কর্মঘণ্টা।


যাত্রীরা বলছেন, দশ মিনিটের রাস্তা পেরোতে লাগে এক ঘণ্টা। সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যা যখন-তখন, যেখানে-সেখানে যানজট। রাজপথ, গলিপথ, ফুটপাত কোথাও স্বস্তি নেই। সর্বত্র ভিড় আর ভিড়, গাড়ির ভিড়, মানুষের ভিড়। যানজটের ভিড়ে একবার আটকে গেলে কখন মুক্তি পাওয়া যাবে- তা কেউই বলতে পারবে না। এতে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে অগণিত শ্রমঘণ্টা। এর অর্থমূল্য নির্ণয় করা গেলে দেখা যেত প্রতিদিন কী বিশাল অঙ্কের অর্থের অপচয় হচ্ছে যানজটের কারণে। যানজট মোকাবিলা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করার জন্য বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ মোতায়ন করা হলেও এতে সমস্যা সমাধানে তেমন কোন কাজ হচ্ছে না।


তবে যানজট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা তেমন কোন কাজে আসছে না। কারণ যানজট নিরসনে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ। বিচ্ছিন্নভাবে একক পদক্ষেপ নিয়ে এই সর্বগ্রাসী সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। রাজধানীর রাস্তার তুলনায় যানবাহনের আধিক্য যানজটের অন্যতম কারণ। এর পাশাপাশি রাস্তায় কার পার্কিং, ট্রাফিক আইন না মানা, ফুটপাত অবৈধদখল, চালকদের অসচেতনতা, পরিকল্পনাহীন স্থাপনা নির্মাণ, আইন অমান্য করলে জরিমানা ও শাস্তি যথাযত বিধান প্রতিপালন না করা যানজটের অন্যতম কারণ।


এদিকে যানজটে সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থার মধ্যে পরে রোগী ও রোগীর স্বজনেরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের যানজটে আটকে থাকতে হয়। রোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স যখন যানজটে আটকে পড়ে তখন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমনকি পথিমধ্যে যানজটের কারণে রোগীর মৃত্যুও ঘটে।


সরেজমিনে দেখা গেছে, এমরান নামের একজন রোগী অ্যাম্বুল্যান্সে করে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসার পথে বাংলামোটর যানজটে আটকে একেবারে অসহায় হয়ে পরেন। বাংলামোটর যানজটে আটকে থাকা বসুমতি বাসের চালক বিবার্তাকে বলেন, যানজটের জন্য তাদের অনেক সময় নষ্ট হয় এবং আর্থিক লোকসানও হয়। সড়কে জায়গার তুলনায় প্রচুর পরিমাণে সিএনজি, রিক্সা এবং পথচারীদের আনাগোনার জন্য যানজট আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে এবং যানজটের কারণে বাসের যাত্রীরাও অসহায় হয়ে পড়েন বলেও জানান তিনি।


যানজটের কারণে মিরপুর থেকে পল্টনে অফিসে আসতে প্রতিদিন প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা বা তারচেয়েও বেশি সময় লাগে শোভন মিয়ার। তিনি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। কষ্ট নিয়েই তিনি বিবার্তাকে বলেন, যানজটের কারণে মিরপুর থেকে পল্টন মোড়ে অফিসে আসতে প্রতিদিন প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা বা তারচেয়েও বেশি সময় লাগে।



কাকরাইলে যানজটে বাসে আটকে থাকা তোফায়েল আহমেদ নামে এক যাত্রী বিবার্তাকে বলেন, যানজটের কারণে ঢাকা শহরে স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যানজট শুধু আমাদের অমূল্য সময়ই কেড়ে নিচ্ছে না। নাগরিক জীবনেও ডেকে আনছে নানা দুর্ভোগ।


একইচিত্র দেখা গেছে বাংলামোটর, শাহবাগ, কাকরাইল, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মৌচাক, মগবাজার, যাত্রাবাড়ীসহ অন্যান্য এলাকায়। এসব এলাকার সড়কে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ট্রাফিক সিগনাল অতিক্রম করা যাচ্ছে না।


যানজট নিয়ে বিবার্তার সাথে কথা হয় মামুন আহমেদের। তিনি একটি ঔষধ কোম্পানিতে কাজ করেন। মামুন জানান, দোলাইরপাড় বাসা থেকে শাহবাগে অফিস যাওয়ার জন্য সময় দিনকে দিন বাড়ছে। আগে যে সময় হাতে নিয়ে বের হতেন এখন তার চেয়ে আরো ত্রিশ মিনিট সময় বেশি হাতে নিয়ে বের হতে হয় তাকে।


পরশ মিয়া নামে একজন চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বিবার্তাকে জানান, তার বাসা রাজধানীর বাসাবোতে। আর তার কর্মক্ষেত্র ফার্মগেটে। বাসাবো থেকে সাধারণত এক ঘণ্টা সময় লাগে অফিস যেতে। কিন্তু আজ তার প্রায় দুই ঘণ্টা লেগেছে। যানজটের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সময়মত করতে পাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।


রাজধানীতে যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শাহিনুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আর যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং, পথচারীরা নিয়ম মেনে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন না এবং রাস্তা নির্মাণের কাজের জন্য যানজট বেড়ে গেছে। তবে যানজট কমাতে কাজ করা হচ্ছে।


রাজধানীতে যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জয়নুল আবেদীন বিবার্তাকে বলেন, গাড়ি ও মানুষের তুলনায় সড়কপথের স্বল্পতা, জনসাধারণের ট্রাফিক আইন বিষয়ে অসচেতনতা, অপরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক-আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং চাকুরী, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল ধরনের কার্যক্রম একই সময়ে শুর হওয়ার কারণে যানজটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।


জয়নুল আবেদীন বলেন, ঢাকা শহরে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এই কাজগুলো দ্রত শেষ হলে এবং সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক আইনের বিষয়ে সচেতন করা গেলে ধীরে ধীরে যানজটের তীব্রতা কমে যাবে।


বিবার্তা/নকিব/রোমেল/বিএম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com