মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে স্থিতধী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার অকাট্য প্রমাণ তিনি দিয়েছেন ১/১১ এর পর থেকে অদ্যাবধি প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে। যার পুরস্কারস্বরুপ তিনি পরপর দু’বার দলের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন। তিনি স্বল্পভাষী, সৎ, নির্লোভী, বিনয়ী একজন মানুষ। যা বলেন ভেবে চিন্তেই বলেন। সস্তা জনপ্রিয়তা কিংবা হাততালি পাওয়ার জন্য চমকপ্রদ কোনো কথা বলেন না।
২০১৬ সালের জুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় তিনি বলেছিলেন ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরিতে জাসদ দায়ী। এ দল থেকে মন্ত্রী বানানোর জন্য আওয়ামী লীগকে আজীবন প্রায়শ্চিত্ত করে যেতে হবে।'
উনার প্রদত্ত বক্তব্য নিয়ে জাসদ হইচই-চেঁচামেঁচি শুরু করেছিল এবং মানব বন্ধন করেছিলো।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেছিল, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, হাসানুল হক ইনু যখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে সৈয়দ আশরাফের এই বক্তব্য জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করবে।”
জাতীয় ঐক্যের দোহাই দিয়ে অপকর্মের পাপ থেকে সেদিন মুক্তি পেতে চেয়েছিলো যদিও জাসদ নিজেই আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয় ঐক্য প্রথম বিনষ্ট করেছে।
সৈয়দ আশরাফ তখন যা বলেছিলেন সম্পূর্ণ স্বজ্ঞানে বুঝে শুনে দ্বায়ভার নিয়েই বলেছিলেন এবং "হঠকারি দল’ জাসদ সম্পর্কে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তিনি যে তেমন কথা সেদিনই প্রথম বলছিলেন এমন নয়। এর আগেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেশরত্ন শেখ হাসিনার সামনে জনসভায় বলেছিলেন, "বাবার খুনিদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে, ঘর করা যায় না।’
তাঁর সেদিনের সেই বক্তব্য যে সম্পূর্ণ সত্য ও সময়োপযোগী ছিল তার অকাট্য প্রমাণ সম্প্রতি জাসদ সভাপতি ইনুর বক্তব্য।
সৈয়দ আশরাফের সেই দিনের বক্তব্যের প্রায় দেড় বছর পর জাসদ আবার তার পুরানো কদর্য রুপ প্রদর্শন করেছেন সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় জনসভায় অহমিকা পূর্ণ বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে। ইনু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আপনি (আ.লীগ নেতা) আশি পয়সা। আর এরশাদ, দিলীপ বড়ুয়া, মেনন আর ইনু মিললে এক টাকা হয়। আমরা যদি না থাকি, তাহলে আশি পয়সা নিয়ে রাস্তায় ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরবেন। এক হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখবেন না।’
তার এমন দাম্ভিকতাপূর্ণ বক্তব্য দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর জন্য চরম অবমাননাকর। তার এমন তাচ্ছিল্যপূর্ণ অরুচিকর বক্তব্যে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলে তিনি একদিন পর সংবাদ সম্মেলন করে পূর্বের সুরেই কথা বলেছেন এবং তার ও তার দলের অতীত ইতিহাসের জন্য কোনোরূপ অনুতাপ না করে বরং আরো দাম্ভিকস্বরে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরিক সকল দলের অতীত ইতিহাস জেনে শুনে বুঝে এই ঐক্যকে গড়ে তুলেছেন।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী জাসদ সভাপতির আওয়ামী লীগ নিয়ে তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্যকে খুবই হালকাভাবে নিয়েছেন বর্তমান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং অত্যন্ত মোলায়েম শব্দগুচ্ছ প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষীণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি ইনুর বক্তব্যকে "অভিমানের বোমা ফাটানো’ অবিহিত করে রোমাঞ্চিত হয়েছেন।
অবশ্য ২০১৬ সালের জুনে সৈয়দ আশরাফের সেই বক্তব্যের পর উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে তিনি তখনও এরকমভাবেই বিষয়টিকে হালকা করে দিয়েছিলেন , "এ বক্তব্য তাঁর (সৈয়দ আশরাফের) ব্যক্তিগত, দলের নয়’ বলে যদিও সৈয়দ আশরাফ তখন দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং একটি রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছিলেন। দলের সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক মঞ্চের ভাষণ ব্যক্তিগত হতে পারে না।
আমার মনে হয়েছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দলের মুখপাত্রের বক্তব্য না দিয়ে ১৪ দলের মুখপাত্রের বক্তব্য দিয়েছেন।
বিবার্তা/আমিরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]