যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২ দেশে রফতানি হচ্ছে চলনবিলের শুঁটকি
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২৫
যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২ দেশে রফতানি হচ্ছে চলনবিলের শুঁটকি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের বৃহৎ জলাভূমি চলনবিলের পানি অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে। ফলে বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে মাছ ধরার উৎসবে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলেরা। সুতিজাল, বেড়জাল, পলো দিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা। পাশেই বাঁশের ছাউনিতে বসানো হয়েছে শুঁটকির অস্থায়ী চাতাল। সেই চাতালে মিঠাপানির বিভিন্ন ধরনের মাছ শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুঁটকি।


চলনবিলের সুস্বাদু শুঁটকি মাছ এখন রফতানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। চলতি বছর এ অঞ্চলের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ৩৫ কোটি টাকা মূল্যের ১৩০ থেকে ১৪০ টন শুঁটকি রফতানির আশা করছেন।


চলনবিলের মিঠাপানির সুস্বাদু শুঁটকি মাছের চাহিদা দেশ-বিদেশে বাড়ছে। পানি কমতে থাকায় বিলের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ধরা পড়ছে পুঁটি, খলসে, চেলা, টেংরা, কই, মাগুর, শিং, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, গুচিবাইম, বোয়াল, ফলি, কাতল, লওলা, শোল, গজারসহ নানা জাতের মাছ। বিভিন্ন প্রজাতির মাছকে কেন্দ্র করে পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলার চলনবিল অধ্যুষিত ১৪ উপজেলায় তিন শতাধিক শুঁটকির চাতাল গড়ে উঠেছে। কাঁচা মাছ কিনে চাতালের রোদে শুকিয়ে উৎকৃষ্ট মানের সুস্বাদু শুঁটকি তৈরি করেন চাতাল মালিকরা। পরে উৎপাদিত শুঁটকি পাঠানো হচ্ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।


শুঁটকি উৎপাদনে এ সব চাতালে এখন কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রায় তিন হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক। সরব হয়ে উঠেছে বিলপাড়ের শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্য। শুঁটকি উৎপাদনে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
বর্তমানে বিলাঞ্চলে জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা মাছ ধরা ও শুকানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শুঁটকি তৈরির চাতাল মালিকরা এখানে আস্তানা গেড়েছেন।


আড়ুয়া পাঙ্গাসী এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী ফকির। গত বছর তার চাতালে প্রায় ২০০ মণ শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এবার তার চেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে এ ব্যবসায়ীর। তার কাছ থেকে ঢাকা ও সৈয়দপুর এলাকার পাইকাররা শুঁটকি কিনে নিয়ে যান।


ইউসুফ আলী জানান, আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত শুঁটকি তৈরি হয়। প্রতি মণ তাজা মাছ শুকালে ১৫ কেজি শুঁটকি পাওয়া যায়। এভাবে প্রায় তিন মণ তাজা মাছ শুকালে এক মণ শুঁটকি হয়।


স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাতাল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বড় ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাতাল থেকে পছন্দের শুঁটকি কিনে নিয়ে যান। ভালো মানের শুঁটকি মাছ যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ ১২ দেশে রফততানি হচ্ছে।


সাধারণত প্রবাসীদের মাঝে রয়েছে চলনবিলের সুস্বাদু শুঁটকি মাছের কদর। মহিষলুটি এলাকার চাতাল মালিক আমির হোসেন জানান, চলনবিলের দেশীয় প্রজাতির মাছের শুঁটকির চাহিদা ব্যাপক। আরেক চাতাল মালিক মোবারক হোসেন এ অঞ্চলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শুঁটকি সংরক্ষণে হিমাগার গড়ে তোলার দাবি জানান।


পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী সমকালকে বলেন, চলনবিল এলাকায় যত চাতাল রয়েছে তা দেশের আর কোথাও নেই। এতেও চলনবিল অঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখানের উৎপাদিত শুঁটকির চাহিদা শুধু পার্শ্ববতী ভারত নয়, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বেসরকারিভাবে প্রায় ১২ দেশে শুঁটকি রফতানি হচ্ছে।


বিবার্তা/পুলক/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com