শিরোনাম
চীনা প্রতারকদের ফাঁদে অতিরিক্ত সচিব: ২ চীনা নাগরিকসহ গ্রেফতার ৪
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩, ২২:৩৭
চীনা প্রতারকদের ফাঁদে অতিরিক্ত সচিব: ২ চীনা নাগরিকসহ গ্রেফতার ৪
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

অনলাইনে কাজ করার মাধ্যমে আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে যাচ্ছে চীনে পাচারের ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছেন দেশের একজন অতিরিক্ত সচিব। বিদেশি এসব প্রতারকদের কাছে তিনি কয়েক ধাপে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৩ টাকা খুইয়েছেন। প্রতারক চক্র আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করলে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা থানায় গত মঙ্গলবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করেন।


এ ঘটনায় করা মামলার একদিন পর বুধবার (২ আগস্ট) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই চীনা নাগরিকসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।


গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, প্রতারণার শিকার হওয়া ওই মামলার বাদী ছিলেন একজন অতিরিক্ত সচিব। যার নাম আবুল কালাম। তিনি সর্বশেষ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। বর্তমানে পিআরএলে রয়েছেন। প্রতারণার ফাঁদে পড়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে আবুল কালামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।


তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের দক্ষিণের উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে টাকা উপার্জনের ফাঁদে ফেলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে এই বিদেশি চক্রটি। মানুষকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে হুন্ডির মাধ্যমে চীনে পাচার করছে। শুধু এই কাজের জন্যই চীন থেকে দুই দফায় চারজন ব্যক্তি দেশে এসেছিলেন।


পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমেরিকা ভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আমাজন নামে প্রতারণা করত এই একমাত্র চক্রটি। আমরা তাদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছি।


মামলা ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, মামলার বাদী ওই অতিরিক্ত সচিব একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমাজন নামক কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পান। বিজ্ঞাপনে বলা হয় দৈনিক গড়ে ১৫–২০ মিনিট অনলাইনে কাজ করার মাধ্যমে দিনে ২০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে ইচ্ছুকেরা আবেদন করতে পারেন। সেখানে আবেদন করতেই শিকদার ডায়না (দারাজ আমাজন) নামের অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত করে দেয়।


পরে কথাবার্তার একপর্যায়ে কয়েক ধাপে বিকাশে ৪৪ হাজার, ৯৫ হাজার ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ১ লাখ ১৯৫ হাজারসহ মোট তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে নেন।


ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এসব টাকা নেওয়ার পর মামলার বাদী কাছে মূল টাকাসহ লাভের টাকা দেওয়ার জন্য অগ্রিম কর হিসেবে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪০২ টাকা দিতে বলেন। টাকা না দিলে মূল ও লাভের কোনটাই দেবেন না বলেন জানান। পরে বুঝতে পারেন তিনি ফাঁদে পড়েছেন। তখন গত মঙ্গলবার রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলা করেন।


মামলার একদিনের মাথায় অভিযান চালিয়ে চীনা নাগরিক ঝ্যাং সিং, ঝ্যাং ইরউয়াসহ দুই বাংলাদেশি যুবক সিয়াম চৌধুরী ও মো. আবীর হোসেনকে গ্রেফতার করেন। তারা চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় তাদের কাছে থেকে ২০টি ফোন, একটি ল্যাপটপ, দুটি পাসপোর্ট জব্দ করে পুলিশ।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এ চক্রের হোতার নাম ডেং শোয়াইমিং। তিনি চায়নাতে বসে আমেরিকা ভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আমাজন নামে ডোমেইন কিনে বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় ফেসবুকে বিজ্ঞাপন হোয়াটসঅ্যাপে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতেন। ডেং শোয়াইমিংয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে এসে প্রতারণার করতেন গ্রেফতার ওই দুই চীনা নাগরিক। সঙ্গে যুক্ত করেন কয়েকজন বাংলাদেশিকে।


পুলিশ বলছে, প্রতারণার কৌশল হিসেবে চক্রটি আমাজনে পণ্য বিক্রি করে লাভের একটা অংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। এই জন্য তারা মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ নগদ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগকারী খুঁজতেন। কেউ বিনিয়োগ করলে সেই লেনদেনের ওপর ১০-১৫ শতাংশ কমিশন দেবেন বলে লোভ দেখাতেন। প্রথমে ছোট অঙ্কের কিছু টাকা লাভসহ ফেরত দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করলেও পরে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে তা ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করতেন। বারবার টাকা ফেরত চাইলে ওই ব্যক্তির নম্বর ব্লক করে রাখতেন।


ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের দক্ষিণের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার সাইফুল রহমান আজাদ বলেন, গত কয়েক মাসে এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেয়েছেন। যারা প্রত্যেকেই ৫-১০ লাখ টাকা করে প্রতারণা শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com