‘৭ মার্চের ভাষণ আজও বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে উদ্দীপ্ত করে'
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:০১
‘৭ মার্চের ভাষণ আজও বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে উদ্দীপ্ত করে'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিকামী বাঙালিকে মুক্তির বাণী শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার অবিসংবাদিত নেতার নির্দেশনা শুনতে সেদিন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মিলন মোহনায় পরিণত হয় রেসকোর্স ময়দান।


বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সেদিন সকাল থেকেই জনস্রোতে তিল ধারণের ঠাই ছিল না রেসকোর্সে। স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু জনসমুদ্রের মঞ্চে আসার সাথে সাথে চারদিকে থেকে স্লোগান ওঠে- ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। মঞ্চে উঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে ভাষণ শুরু করেন। শেষ করেন ৩টা ৩ মিনিটে।



ঐতিহাসিক ওই ভাষণে জাতির পিতা বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে উদ্দেশ্যে করে সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর...’।



ঐতিহাসিক এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নিরস্ত্র বাঙালিকে মুক্তির মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম জনযুদ্ধে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক এই ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।


পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে ছিল ঐতিহাসিক ভাষণটি। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে আবারো প্রকাশ্যে বাজানো শুরু হয় কালজয়ী এ ভাষণ। কালের পরিক্রমায় এক সময়ে নিষিদ্ধ থাকা ঐতিহাসিক ভাষণটি স্থান করে নেয় বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণের একটি হিসেবে। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা বা ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ বা বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অমূল্য দলিলে পরিণত হয়েছে।


আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি অবিস্মরণীয় দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক এ ভাষণ বিশ্বের সকল লাঞ্ছিত-বঞ্চিত ও নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির সনদ।


তারা বলছেন, ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার চূড়ান্ত প্রেরণা। বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক দলিল। কালজয়ী এ ভাষণ আজও বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে উদ্দীপ্ত করে, পথ দেখায়। বাঙালি জাতির সাফল্যে সকল যাত্রায় শক্তি যোগায়। স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে শক্তিশালী করে।


জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বিবার্তাকে বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। মূলত সেদিনই স্বাধীন দেশ হিসেবে একপ্রকার বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ লাখের বেশি জনসমুদ্রে পাকিস্তানি শাসকের হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে রেসকোর্স ময়দানে ২৩ বছরের বঞ্চিত, অবহেলিত ও শোষিত বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন। তাঁর অসামান্য সেই ভাষণে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় মেলে।


তিনি বলেন, ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি স্তরে অগ্রসেনানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫২–এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬–এর ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ—তাঁর নেতৃত্বের ক্যারিশমা দেখেছে জাতি, পুরো বিশ্ব। অবশেষে তাঁর নির্দেশে, দেখান পথে একাত্তরে বাঙালি অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয়।


হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর সর্বজনীনতা। এই ভাষণ দেশ-কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে সর্বজনীন হয়েছে। অলিখিত বক্তৃতাটিতে কোন পুনরুক্তি ছাড়াই একটি জাতির স্বপ্ন, সংগ্রাম আর ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এই ভাষণ একটি জাতির প্রত্যাশার আয়নায় পরিণত হয়েছে। এই ভাষণের এমনই শক্তি যে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধেও এই ভাষণ বাঙালিকে প্রেরণা জুগিয়েছে। আজও বাঙালি জাতি, বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে এ ভাষণ উদ্দীপ্ত করে, পথ দেখায়।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবার্তাকে বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণার অনিবার্ণ শিখা হয়ে অফুরন্ত শক্তি ও সাহস যুগিয়ে আসছে। সারাবিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত বঞ্চিত মানুষের আশার আলো, অনুপ্রেরণার উৎসস্থল হিসেবে কাজ করেছে। বিশ্বের সকল লাঞ্ছিত-বঞ্চিত নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির সনদ।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। বাঙালি জাতির সাফল্যে সকল যাত্রায় এ ভাষণ আমাদেরকে শক্তি প্রদান করে, উদ্দীপনা দেয় এবং জাগ্রত করে। স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে জোরদার করে, শক্তিশালী করে।


আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বিবার্তাকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার চূড়ান্ত প্রেরণা। বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক দলিল। রেসকোর্স ময়দানে ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পুরো জাতিকে পথ দেখিয়েছিলেন- যে দেশকে স্বাধীন করা ছাড়া বিকল্প নেই। তাঁর বক্তব্যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন থেকে সমগ্র বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।


তিনি বলেন, এটি একটি কালজয়ী ভাষণ। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এরপর বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছে। এই ঐতিহাসিক ভাষণ এখন সারা পৃথিবীর মানুষের শৃঙ্খলমুক্তির মূলমন্ত্র।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com