ঢাকা লিট ফেস্ট: ইলোরা হালিম চৌধুরীর 'এথিক্যাল এনকাউন্টার' বইয়ের আলোচনা
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪০
ঢাকা লিট ফেস্ট: ইলোরা হালিম চৌধুরীর 'এথিক্যাল এনকাউন্টার' বইয়ের আলোচনা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা লিট লিট ফেস্ট ২০২৩-এর জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের তৃতীয় দিন চলছে আজ শনিবার (৭ জানুয়ারি) । তৃতীয় দিনের আয়োজনে সকালেই ছিল ইলোরা হালিম চৌধুরীর 'এথিক্যাল এনকাউন্টার' বইয়ের আলোচনা।


আলোচনায় আলোচকরা বলেন, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা নারীর জীবন, বয়ান এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন কীভাবে তা ভাবতে হবে। দীর্ঘদিন চুপ ছিলেন যে নারীরা তারা বর্তমানে সামনে আসছেন, নিজেদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন নিয়ে কথা বলছেন। বিষয়টি বাংলা উপন্যাস, সিনেমা ও প্রবন্ধে কীভাবে তুলে আনা যায় সেটি ভাবতে হবে।


ইলোরা হালিম চৌধুরী ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস বোস্টনের উইমেনস, জেন্ডার অ্যান্ড সেক্সুয়ালিটি স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ট্রান্সন্যাশনালিস্ম রিভার্সেদ: ওমেন অর্গানাইজিং এগেইনস্ট জেন্ডারের ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ এর লেখিকা, যেটি ন্যাশনাল উইমেনস স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশনের গ্লোরিয়া এ. অন্জলদুয়া বুক পুরুস্কার জিতেছেন। তিনি সাউথ এশিয়ান ফিল্মস্কেপস: ট্রান্সরিজিওনাল এনকাউন্টার্সের সহ-সম্পাদক; মানবাধিকারের আন্তঃবিভাগীয় পদ্ধতি: ইতিহাস, রাজনীতি, অনুশীলন; এবং ভিন্নমতের বন্ধুত্ব: নারীবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, এবং ট্রান্সন্যাশনাল সলিডারিটি।


বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান হলে সকাল ১০টায় আয়োজিত 'বীরাঙ্গনা' সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেরদৌস আজিম। তিনি বলেন, 'নারীপক্ষ' দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি নিয়ে কাজ করছে। তাদের উপস্থিতিতে যৌন নির্যাতন বিষয়ক সাধারণ বোঝাপড়াও সেখানে থাকতে হবে।


বীরাঙ্গনা নারীরা ১৯৭১ সালের পর যে অসম্মানিত হয়েছিলেন, আদৌ কি সমাজের সেই মানসিকতা বদলেছে মনে করেন? এখনও ধর্ষণের শিকার নারীর ক্ষেত্রে একইরকম অসম্মান এবং ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টাকে কীভাবে দেখেন প্রশ্নে ফেরদৌস আজীম বলেন, বীরাঙ্গনা বিষয়ে ভাবনা বদলেছে বলা যাবে না, বদলাচ্ছে বলা যাবে। নারীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে সংগঠন 'নারীপক্ষ' প্রতিটি জেলায় একটি বীরাঙ্গনা চত্বর করার কথা ভাবছে। সেটি কেবল সেই বীরাঙ্গনা নারীদের উদ্দেশ্যে করা হবে তা নয়। জায়গাটি সে সব নারীদের জন্য যারা স্বাধীনভাবে ভাবতে চান এটি তাদের জন্য দৃশ্যমান একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে। যেটি আমাদের প্রচলিত মাইন্ডসেট বদলাতে কাজ করবে।


ইলোরা হালিম চৌধুরী সিনেমায় বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের তুলে ধরার প্রসঙ্গ তুলতে গিয়ে রুবায়াৎ হোসেনের 'মেহেরজান' সিনেমার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি তার বইতে মেহেরজান ও ইয়াসমিন কবীরের স্বাধীনতার কথা তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার শেষ দৃশ্যের কথা উল্লেখ করে ইলোরা বলেন, ক্যামেরায় দেখানো হয়েছে গুরুদাসি কীভাবে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন- আপনারা কেন এসেছেন। তিনি কথা বলবেন না, বলতেও চান না। এর বাইরে তার ক্ষোভও স্পষ্ট ছিল সেখানে। শেষে দেখা যায় নৌকায় বসে গুরুদাসি তার ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কথা বলছেন। পরে নৌকা থেকে নেমে পেছন ফিরে তিনি যখন বলেন, “আমার সঙ্গে এসো” তখন সেটা ক্যামেরায় ডাক দেওয়া বুঝায়নি। বরং এটা সামগ্রিকভাবে তাদের পাশে থাকা কেন জরুরি সেই বার্তা দিয়েছে। তাই আমাদের যুদ্ধসময় ও পরবর্তী সময়ের নির্যাতনকে যুক্ত করে ভাবা শিখতে হবে। আর শিল্পের সাহায্য নিয়ে যখন এটা করবো তখন বুঝে নিতে হবে এটা সঠিক উপস্থাপন হচ্ছে কিনা। ‘বীরাঙ্গনাদের তুলে ধরবেন কীভাবে- ভাবুন’ প্রসঙ্গে ইলোরা এসব কথা বলেন।


উল্লেখ্য, ইলোরা হালিম চৌধুরীর ‘এথিক্যাল এনকাউন্টারস’ হল নারীবাদ, মানবাধিকার এবং স্মৃতির সংযোগস্থলের একটি অন্বেষণ যাতে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে হিংসাত্মক উত্তরাধিকারকে স্মরণ করার ভিজ্যুয়াল অনুশীলনগুলি মানবতার অগ্রগতির জন্য বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্রের কল্পনাকে জাগ্রত করতে পারে। সেই চিন্তা থেকেই লেখিকা ও শিক্ষাবিদ এলোরা হালিম চৌধুরী তার দীর্ঘদিনের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা থেকে লিখেছেন বইটি। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ‘ টেম্পল ইউনিভার্সিটি প্রেস’ প্রকাশনী থেকে চলতি বছর এ বইটি বের হয়েছে। ‘এথিক্যাল এনকাউন্টারস’ বা নৈতিক সম্মুখীন বইটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ট্রান্সন্যাশনাল ফেমিনিজম, হিউম্যান রাইটস এবং বাংলাদেশের যুদ্ধ সিনেমা।


বিবার্তা/সাইদুল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com