জিয়াউর রহমান আমাকে পৈতৃক বাড়িতে ঢুকতে দেননি: শেখ হাসিনা
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৪, ১৭:২৫
জিয়াউর রহমান আমাকে পৈতৃক বাড়িতে ঢুকতে দেননি: শেখ হাসিনা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পর তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে জিয়াউর রহমান তাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের পৈতৃক বাড়িতে ঢুকতে দেননি। কিন্তু তাকে গাড়ি-বাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।


১৭ মে, শুক্রবার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা গণভবনে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তাদের উদ্দেশে দেশে ফেরার ঘটনাপ্রবাহের স্মৃতিচারণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে ফিরে এসেছিলাম বলেই বঙ্গবন্ধু যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, কিছুটা হলেও সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে বিদেশে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আশা করেছিলাম আমরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। কিন্তু সেই ফিরে আসা আর হয়নি।


আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি জানতাম না যে, আমাকে এত বড় একটা দায়িত্ব দেয়া হবে। আমি কখনও এটা ভাবতে পারিনি। লন্ডন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুর রহমান টেলিফোন করে বললেন আপনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি তাকে বললাম আমি তো আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চাই না, আমাকে কেন করবে?


১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেদিন সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়েছিল। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বক্তব্য রাখলাম, সব থেকে বড় কথা হলো, আমি যখন যাই, তখন কামাল, জামাল, রোজি, খুকি সবাই বিমানবন্দরে ছিল। আমি যখন ফিরে আসলাম, হাজার হাজার মানুষ, কিন্তু আমি পেলাম বনানীতে সারি সারি কবর।


তিনি বলেন, ৩২ নম্বরে আমরা মিলাদ পড়তে চাইলাম, আমাকে ঢুকতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। উল্টো বলেছিল বাড়ি দেবে, গাড়ি দেবে, সব দেবে। বলেছিলাম, তার কাছ থেকে কিছু নেব না। খুনির কাছ থেকে আমি কিছু নিতে পারি না।


শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন দিল্লিতে ছিলাম, সেখানে গিয়ে জিয়াউর রহমান আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল। তার স্ত্রীও দেখা করতে চেয়েছিল, আমি দেখা করি নাই। লন্ডনে যখন, তখনও দেখা করতে চেয়েছিল, আমরা দেখা করিনি। আমি যখন আসলাম ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেবে না, উল্টো বাড়ি-গাড়ি সাধবে, সেটা তো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না।


দেশে ফিরে কোথায় উঠবেন, থাকবেন সেটা জানতেন না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু আমার পরার কাপড়-চোপড়, দুটো স্যুটকেস ও পুতুলকে (মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) নিয়ে আমি চলে এসেছি। তারপর এই যাত্রা শুরু। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও দলকে গোছানোর চেষ্টা করেছি।


তিনি আরও বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেই, কিন্তু অন্তত এইটুকু বলতে পারি, তার বাংলাদেশ কিছুটা হলেও যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বাধীন করেছিলেন এবং যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, কিছুটা হলেও সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।


আবেগাপ্লুত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলবো, আমার সব শক্তি-সাহস মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। যেদিন আমার বাবাকে হত্যা করা হয়..উনিতো কোনোদিন বিশ্বাস করেননি বাঙালি তাকে হত্যা করতে পারবে। আমার মা কখনো জীবন ভিক্ষা চাননি।


তার নির্বাসিত সময়, দেশে ফেরার পরের পরিস্থিতি এবং আওয়ামী লীগ সংগঠন গোছানোর বিষয়গুলোর উল্লেখ করে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।


তিনি বলেন, সেদিন ফিরে এসেছিলাম। এত বড় দল পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা ছিল না, ছাত্রলীগ করার সময় নেতা হওয়ার চেষ্টা করি নাই। দলের প্রয়োজনে যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেটাই পালন করেছি। কিন্তু যখন এ দায়িত্ব (আওয়ামী লীগ সভাপতি) পেলাম, এটা বড় দায়িত্ব।


শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী বড় সংগঠন। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দল আওয়ামী লীগ। প্রতিবার চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।


সরকার প্রধান বলেন, কী পেলাম, না পেলাম, সেই চিন্তা করিনি। ভবিষ্যৎ কী, সেই চিন্তাও করি না। চিন্তা করি দেশের মানুষের ভবিষ্যৎটা আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলে দিয়ে যাব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।


দলীয় নেতাদের তিনি বলেন, এটাই মনে রাখবেন, একটা দল করি শুধু নেতা হওয়া না, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কী দিয়ে গেলাম, এটাই রাজনৈতিক মানুষের জীবনের বড় কথা। এই কথাটা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।


সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আর যেন যুদ্ধাপরাধী, খুনিরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।


১৫ আগস্টের ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এই ঘাতকের দল মনে হচ্ছিল একটি পরিবারকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করবে। শুধু পরিবার না, আমাদের যারা আত্মীয়-স্বজন আছে তাদেরও।


৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।


তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সংগ্রাম করলেন সারাটা জীবন, সেই বাংলার মাটিতে, বাঙালির হাতেই তাদের মৃত্যুবরণ করতে হলো। তাও স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিনবছরের মধ্যে।


বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার তো বিচার চাইবার অধিকার ছিল না। মামলা করতে গিয়েছি, মামলা নেবে না, করা যাবে না। কারণ খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে, তাদের হিরো বানানো হয়েছিল।


১৯৭৫-পরবর্তী যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী-এমপি-উপদেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যারা করছেন তারাই অপরাধী হয়ে গেল। যারা বিরোধিতা করেছিল, গণহত্যা করেছিল, তারাই ক্ষমতায়। ওই অবস্থায় দেশে ফিরেছিলাম। আমার তো কিছুই ছিল না। একটা বিশ্বাস ছিল, দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী। এরপর লড়াই-সংগ্রাম করে এইটুকু বলতে পারি, পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসেছে।


আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যদি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা না থাকে, দেশপ্রেম না থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় না থাকে, তাহলে সেটা এগোতে পারে না। পঁচাত্তরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছিল, দেশের কোনো উন্নতি করতে পারেনি। আজকে আমরা বলতে পারি, দেশটা বদলে যাওয়া, বদলাতে পেরেছি। সামনে আরও বদলাতে হবে। কারণ আমার বাবার একটাই স্বপ্ন ছিল, দেশটাকে গড়ার। আমাদের পরিকল্পনা সেটাই আছে।


আওয়ামী লীগের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, কারফিউ, প্রতি রাতে মার্শাল ল, দেশের মানুষের কোনো আশা নেই, শুধু হতাশা। এই হতাশ জাতিকে টেনে তোলা যায় না। তাদের মাঝে আশার আলো জাগাতে হয়, ভবিষ্যৎ দেখাতে হয়, উন্নত জীবনের চিত্র তুলে ধরতে হয়। তবেই মানুষকে নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি।


আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত থাকায় করোনাভাইরাস সকল দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দলের প্রত্যেকটা সদস্য জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সমানতালে কাজ করেছে বলেই আমরা এ সাফল্যটা দেখাতে পেরেছি। তাছাড়া কোনোভাবে সম্ভব ছিল না। আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের জনগণের জন্য আত্মত্যাগ অন্য কেউ করে না। আজ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দল আওয়ামী লীগ। প্রতিবার চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com