তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন, এর শেষ কোথায়?
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৪, ১৪:৪০
তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন, এর শেষ কোথায়?
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

আল্লাহ, মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে... আবহমান বাংলার সুপরিচিত একটি গান। বৈশাখের শুরুতে তীব্র তাপদাহে জনজীবন যখন স্বস্তি হারায় তখন বৃষ্টির প্রার্থনায় বাংলার ছেলে বুড়ো রমণী সকলের মুখেই শোনা যায় এই গান। প্রার্থনার সুরে ধরণীতে নামে স্বস্তির বৃষ্টি। তবে এবার সেই স্বস্তির দেখা মেলা ভার হয়ে উঠছে বারবারই। চলতি বছর এপ্রিলের পর মে মাসেও প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশ।



জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব এবং বাতাসে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পাওয়াসহ বৃক্ষ নিধন ও জলাধার ভরাটের বিরূপ প্রভাবে আর্দ্রতা হারিয়ে উত্তপ্ত হচ্ছে বায়ুমণ্ডল, উত্তপ্ত হচ্ছে ভূপৃষ্ঠও। এ কারণে দেশব্যাপী তাপদাহের ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদ এবং পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞগণ।




২০২৩ সাল ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক উষ্ণতম বছর। চলতি বছরের উষ্ণতা গত বছরকেও ছাড়িয়ে যাবে এমন আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যে তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। চলতি মাসেও প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসী।


মে মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।


উল্লেখ্য, এপ্রিল মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এমন অবস্থা গত ৭৬ বছরে হয়নি বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছিল। মে মাসের শুরুতে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও এখন তা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। ঘর থেকে বের হলেই যেন মরুভূমির লু হাওয়া। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে আর্দ্রতা জ্বালা ধরাচ্ছে শরীরে। দরদর করে ঝরছে ঘাম।



আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা একটু বেশি থাকতে পারে। তবে তা এপ্রিলের মতো অবস্থায় যাবে না। তাপপ্রবাহ এত দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে না। মে মাসে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা ধরনের কালবৈশাখী হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আর দুই থেকে তিন দিন বজ্র–শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি ও তীব্র কালবৈশাখী হতে পারে।



মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের হার ২৭৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার। তবে গত এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮১ ভাগ কম বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় বৃষ্টি কম হয়েছে ৯১ শতাংশ। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এপ্রিলে কোনো বৃষ্টিই হয়নি। চলতি মে মাসের মাঝামাঝি দেশের তাপমাত্রা আবারও বাড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় দেশের পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি বাড়বে।



গত এপ্রিলে টানা দীর্ঘমেয়াদী তাপপ্রবাহে পড়ে দেশের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল। এসময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত ৫২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখী ও বজ্রসহ বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা অনেকটাই সহনশীল ছিল। কিন্তু আবারও শুরু হয়েছে তীব্র তাপদাহ। মে মাসের শুরুতে টানা বৃষ্টির পর দেশের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ ৬৪ জেলায় বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা ‘হিট অ্যালার্ট’ চলছে। এরই মধ্যে বৃষ্টির সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।



বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, শুক্রবার (১৭ মে) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।



শনিবার (১৮ মে) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তরপূর্বাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং এছাড়া দেশের অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।


রোববার (১৯ মে) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি দেশের উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বর্ধিত ৫ (পাঁচ) দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা রয়েছে এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।


আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৯৪৮ থেকে হিসাব করলে গত ৭৬ বছরের মধ্যে এবারের তাপদাহের স্থায়ীত্ব বেশি। আর এই তাপদাহ বিস্তৃত হয় বিশাল এলাকা নিয়ে। তীব্র এ তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত রাজধানী ঢাকার জনজীবন। এর কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। যার ফলে পরিবেশে তৈরি হয়েছে অত্যাধিক গরম। গত ৭ বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। যা বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) করা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা মহাখালী এবং গুলিস্তান এলাকার।


নেদারল্যান্ডের ওয়েজেনিগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ড. এম. এম. মাজেদুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে এই বছর তীব্র গরমের সমস্যা হচ্ছে, এর একটা কারণ এল নিনো। তবে মূলত তিনটি বিষয়ের সামগ্রিক প্রভাবে তীবে তাপদাহ হচ্ছে। প্রথমত, এল নিনোর প্রভাব তো আছেই, দ্বিতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সারা বিশ্বে গড় তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। এটা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।


ড. এম. এম. মাজেদুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, একুশশো শতকের শেষে গিয়ে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি পর্যন্ত বা তারো বেশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। মানুষ যদি এখনই এই বিষয়ে সতর্ক হয়, সচেতন হয়, তাহলে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিটাকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব। এই দুটো হচ্ছে বৈশ্বিক কারণ। তৃতীয়তটি হচ্ছে আমাদের নিজস্ব বিষয়। আমাদের মধ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব। আমরা নির্বিচারে গাছ কাটছি, জলাশয় ভরাট ও অবৈধভাবে দখল করছি। জলাশয় ভরাট করে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে, ফলে ঢাকা শহর কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। আবার তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে মানুষ এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এয়ার কন্ডিশনার ঘরের ভেতরে ঠান্ডা রাখছে কিন্তু ঘরের বাইরে অনেকটা তাপ বের করে দিচ্ছে। ফলে মানুষ নিজে উপকৃত হচ্ছে কিন্তু অন্যের অসুবিধার কারণ হচ্ছে। এই মুহূর্তে খুব বেশি প্রয়োজন, জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার করা, সেখানে পানিপ্রবাহ বাড়ানো। এখানে সরকারের যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি জনগণেরও ভূমিকা প্রয়োজন। গাছ কাটা কমাতে হবে, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। আমরা পরিবেশ দূষণ করি, পানি দূষণ করি, বায়ু দূষণ করি, সব মিলিয়ে যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে উত্তরণ সম্ভব না। ক্রমান্বয়ে ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।


ব্যবসা উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মশিউর রহমান বিবার্তাকে বলেন, নির্দিষ্ট কোনো কারণ এই তীব্র তাপদাহের জন্য দায়ী না। পাশের একটি দেশে যদি অনেক বেশি কার্বন নিঃসরণ হয়, এর প্রভাব নিজের দেশেও পড়বে। এই যে আমরা ৭৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছি, এটা তো একদিনে হয়নি। একদিকে কলকারখানা বাড়ছে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, অন্য দিকে বন উজাড় হচ্ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড হিট ট্র্যাপ হিসেবে কাজ করে, পৃথিবী থেকে তাপমাত্রা বের হয়ে যেতে পারে না। আগে যে সহনীয় তাপমাত্রা ছিল, সেটাতে তো রাতারাতি ফেরত যাওয়া সম্ভব না। দীর্ঘমেয়াদী পরিকলনায় ভাবতে হবে কীভাবে আবার প্রকৃতিগত অবস্থায় ফেরত যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে বৃক্ষরোপন করতে হবে, বন উজাড়ে বেদখল হওয়া জমিগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে, নদীগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড রিডিউস করার বিকল্প নেই। এটা এক বছরে বা রাতারাতি সম্ভব না, সকলের সম্বনিত প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হবে।


এ পরিস্থিতির সঙ্গে মানুষকে কীভাবে খাপ খাইয়ে নেয়া যায় সেই পদ্ধতি রপ্ত করার কথাও জানান মশিউর রহমান।



আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইন বিবার্তাকে বলেন, আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণ নির্বিচারে বৃক্ষ উজাড় করা, জলাশয়-পুকুর ভরাট করা। আমরা জলাধারগুলো একেবারে বন্ধ করে ফেলেছি। এই মৌসুমে, মার্চ-এপ্রিল-মে, বিশেষ করে এপ্রিল-মে মাসে সূর্য বাংলাদেশে খাড়াভাবে কিরণ দেয় বাতাস আসে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম থেকে। পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমের বাতাস যে আর্দ্রতা তৈরি করে, সেই আর্দ্রতা বৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত নয়। তখন এই বাতাস বাংলাদেশে ঢুকে আভ্যন্তরীণ কিছু আর্দ্রতা তৈরি করে। রাতের বেলা গাছ বাতাসে পানি ছেড়ে দেয়, তারপর জলাশয় থেকে জলীয়বাষ্প আকারে বাতাসে পানি আসে। সব মিলিয়ে একটু বৃষ্টির ফোঁটা তৈরি হতো বাতাসে। এখন বাংলাদেশে জলাশয় ও গাছের ছেড়ে দেওয়া পানি থেকে যথেষ্ট আর্দ্রতা তৈরি হয় না। বাতাসে বৃষ্টির জন্য জলীয়বাষ্প যথেষ্ট হয় না, কিন্তু ভ্যাপসা গরম বেড়ে যায়। এপ্রিলে এভাবেই ভ্যাপসা গরম হচ্ছিল আর সূর্য খাড়াভাবে কিরণ দেওয়ায় তাপদাহের এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। এখন গাছপালা নিধন ও জলাশয় ভরাট করে আমরা দেশের যে ক্ষতি করেছি তা পূরণ করতে দল-মত নির্বিশেষে সবার সম্মিলিত প্রয়াস লাগবে।




এই পরিস্থিতে করণীয় সম্পর্কে সজীব হোসাইন বিবার্তাকে বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে গাছপালা রোপন করতে হবে। সেক্ষেত্রে, ফলজ উদ্ভিদ লাগানোটাই বেশি ভালো। দ্বিতীয়ত, জলাশয় যা ভরাট হয়েছে সেখান থেকে ফেরত আসতে হবে, আর জলাশয় ভরাট করা যাবে না। জলাধার যেন যথেষ্ট থাকে সে বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করতে হবে। আমরা খালি চোখে বুঝতে পারছি না জলাশয় বা পুকুর ভরাট করলে কী হয়, প্রভাবটা দেখাই যাচ্ছে। সামনের বছর এরকমই থাকবে। হ্যাঁ, এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব থাকে, এখন এল নিনোর প্রভাব আছে, দুই তিন বছর থাকবে। তখন হয়তো বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে। এই বছর বৃষ্টি কমে যাওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে, ভূমধ্যাসাগর থেকে কিছু আর্দ্রতা আসে। কিন্তু ওমানে-দুবাইয়ে অত্যাধিক বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় যথেষ্ট আদ্রর্তা বাংলাদেশে আসেনি। এটা প্রধান ইস্যু না, আমাদের যদি নিজেদের আর্দ্রতা থাকত তাহলে তো বৃষ্টি এমনিতেই হতো, কিন্তু সেটা আমাদের নেই।


ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেমকে এই বিষয়ে জানতে কল দেওয়া হলে তিনি সিটি কর্পোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ নুরুজ্জামান খানের কাছে তথ্য আছে বলে জানান, তবে জনাব মো. নুরুজ্জামান খানকে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা জনাব মো. আবু নাছের বিবার্তাকে বলেন, আমরা খাল খনন, খালগুলো থেকে নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ করছি। আমরা পাঁচটা খাল থেকে যার মধ্যে একটি প্রকল্পের আওতায় এবং একটি খাল নিজস্ব অর্থায়নে বর্জ্য অপসারণ ও সীমানা নির্ধারণ ইতোমধ্যে করে ফেলেছি। সেখানে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এই পাঁচ খালের দুই পাড় ঘেষে আগামী তিন বছরের মধ্যে এক লক্ষেরও বেশি বৃক্ষরোপন করবো। জলাধার আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে যদি থাকে সেগুলো সংরক্ষণে আমরা অবশ্যই উদ্যোগ নিবো। কিন্তু ব্যক্তিগত জলাধার ভরাট করলে সেখানে কর্পোরেশনের করার কিছু নেই। পরিবেশবিদরা যেটা বলছেন সেটা সঠিক নয়। চুয়াডাঙ্গা, যশোরে যথেষ্ট গাছ আছে, তারপরও সেখানে ঢাকার চেয়ে তাপমাত্রা বেশি কেন? উত্তরাঞ্চলে যথেষ্ট গাছপালা থাকলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে তিনি আবহাওয়াবিদদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন।


আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইন বিবার্তাকে বলেন, ধরুন সিলেটের কথা। সিলেটে কিন্তু যথেষ্ট আর্দ্রতা আছে। হাওর অঞ্চলে তাপমাত্রা শীতলীকরণের একটা প্রক্রিয়া হয়। সিলেটের দিকে এখনো জলাধার ও গাছপালা দুটোই আছে, তাই অত্যাধিক তাপ বৃদ্ধি বা তাপ হ্রাস কোনোটাই হয় না। কিন্তু, উত্তরাঞ্চলের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, ক্ষতি করে ফেলেছি আমরা, উত্তরাঞ্চলে পানি একদম কমে গিয়েছে। পানির সেই ঘাটতি পূরণ না করা পর্যন্ত সেখানে আবহাওয়ার উন্নতি হবে না।



পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে কথা থেকে যায় অসমাপ্তই। শেষ পর্যন্ত সেই প্রশ্নটিই সামনে এসে দাঁড়ায়, তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন, স্বস্তির পথ কোথায়?



সচেতন হয়ে দেশকে রক্ষার প্রচেষ্টায় সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে নিজেকে এবং বাংলাদেশকে বিরূপ আবহাওয়া থেকে রক্ষার আর কোনো উপায় নেই বৈকি। স্বীকার করতেই হবে, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়ার এখনই মোক্ষম সময়।


বিবার্তা/এসবি/লিমন/রোমেল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com