''সারাবিশ্বে বাড়ছে অনলাইনে কেনাবেচার চাহিদা। দিন যত বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে অনলাইনে ব্যবসার নানান সুযোগ। বর্তমানে অনলাইনের বাজারে পরিচিত হয়ে ওঠা এই ব্যবসার নাম ই-কমার্স। আর উন্নত বিশ্বের মতো বর্তমানে আমাদের দেশেও ই-কমার্স একটি বিকাশমান খাত। বর্তমানে দেশে ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসাটা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাগডুম এর মধ্যে একটি।''
একান্ত আলাপে এসব কথা বলছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম লাইফস্টাইল ই-কমার্স প্লাটফর্ম বাগডুমডটকম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিরাজুল হক।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে বাগডুমডটকম-এর প্রধান কার্যালয়ে লাইফস্টাইল ই-কমার্স প্লাটফর্মটির বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ ও নানান বিষয় নিয়ে বিবার্তা২৪ডটনেটের প্রতিবেদকের সাথে আলাপ করেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও মিরাজুল হক। তার সাথে দীর্ঘ আলাপের কিছু চুম্বক অংশ বিবার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ।
বিবার্তা : বাগডুমডটকম-এর শুরুটা কীভাবে?
মিরাজুল হক : বাগডুমডটকম একটা লাইফস্টাইল ই-কমার্স প্লাটফর্ম। এটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করে। এর আগে এটি এখনইডটকম নামে ছিল। এখনইডটকম এর প্রতিষ্ঠাতা শামীম আহসান এবং সৈয়দা কামরুন। এটাকে পরে বাগডুমডটকম নামে প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশে একটি উচ্চমাত্রার ই-কমার্স। এটিকে নিয়ে আমাদের সুদূরপ্রসারি চিন্তা আছে।
বিবার্তা : মার্কেটে বাগডুমের বর্তমান অবস্থান কেমন?
মিরাজুল হক : ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে এটির পরিচিতি অনেক বেড়েছে। এটি ফ্যাশন সেগমেন্টে এক নম্বরে আছে। গেজেটের দিকে আছে দুই নম্বরে। গত বছর এটি চালু হওয়ার পর এর ব্যাপক সফলতার কারণে বর্তমানে বাগডুমকে এখন সবাই চেনে। এটি এখনইডটকম থেকে বাগডুমডটকম হয়েছে। মার্কেটে এর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। পজেটিভলি বলতে গেলে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাগডুমকে সবাই ভাল জানে।
বিবার্তা : দেশে অসংখ্য ই-কমার্স সাইট রয়েছে। ক্রেতারা বাগডুমে আসবে কেন?
মিরাজুল হক : কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স বলে একটা বিষয় আছে। আমাদের লক্ষ্য এই কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স বৃদ্ধি করা। এখানে আমরা একটি পণ্যের অ্যাড দিচ্ছি এবং ক্রেতার নিকট পৌঁছে দিচ্ছি। এখানে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, এর মধ্যে যেন কোনো রকমের ঘাটতি না থাকে এবং ক্রেতাদের কোনোরকম খারাপ অভিজ্ঞতা যাতে না হয়। ১০টি অ্যাড দেখে একটি ভাল লাগলে ক্রেতা অর্ডার করেন। আমরা চাই, ক্রেতা একটি অ্যাড দেখেই সাথে সাথে বাগডুমে তা অর্ডার করুক। আমরা সময়মত তাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি এবং তাদের ফিডব্যাক নিচ্ছি। তারা তাদের এক্সপেরিয়েন্স অনুযায়ী তাদের মতামত জানাচ্ছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানের পলিসি হলো ক্রেতাদের পছন্দ ও রুচি অনুসারে তাদের কাছে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয়া।
বিবার্তা : ই-কমার্স ব্যবসায় কারো কারো বিরুদ্ধে ধোঁকাবাজির অভিযোগও উঠছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
মিরাজুল হক : আমাদের পণ্য রিটার্ন রেট সবচেয়ে কম। তবুও এ ব্যাপারে আমরা খুবই সচেতন আছি। প্রতিটি পণ্যের কোয়ালিটি যাচাই করেই ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেই, যাতে কোনো ক্রেতা আমাদের এখান থেকে পণ্য কিনে প্রতারিত না হন। এ ব্যাপারে আমাদের সব ডিপার্টমেন্টে কোয়ালিটি যাচাই করার ব্যবস্থা চালু আছে। যা অর্ডার করা হয়েছে তা অরিজিনিয়াল এবং সাপলাইয়ার তার শিওরিটি দিলে তবেই পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেয়া হয়। পণ্যের কোয়ালিটির ব্যাপারে বাগডুমের সব সময়ই বিশেষ নজর রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা মার্চেন্ডারের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নেই। যেমন, কাপড়ের ক্ষেত্রে প্যারামিটার বলে একটি কথা আছে। এক্ষেত্রে আমরা তা চেক করি। স্টক ঠিক আছে কিনা, কাপড়ের মান কেমন, কাপড়ের স্টক আপডেট করা হয়েছে কিনা এগুলো ভালভাবে চেক করি, ক্রেতা যাতে ভাল পণ্যটি হাতে পান।
বিবার্তা : ক্রেতাদের জন্য বিশেষ কি সুবিধা রয়েছে?
মিরাজুল হক : ক্রেতাদের জন্য সব সময়ই আমাদের সাপ্তাহিক ছাড় চলছে। কিছুদিন আগে উইনটারের ছাড় দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে চিটাগংএ ছাড় দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে আমাদের চার সপ্তাহে চারটি ছাড় থাকে। এ ছাড়াও বছরে ২০০০ টাকার পণ্য কিনলে থাকছে ৩০০ টাকার একটি গিফট ভাউচার, যার দ্বারা পরে আপনি অন্য পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়াও আছে ১০০০ টাকার পণ্য কিনলে ঢাকার মধ্যে ডেলিভারি ফ্রি। আমাদের সাইটে সাইন-আপ করলেই ৩০০ টাকার ফ্রি ডিসকাউন্ট ভাউচার।
বিবার্তা : গ্রামাঞ্চলে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে ই-কমার্সের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের নানান অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাগডুমডটকম-এর অবস্থা কেমন?
মিরাজুল হক : অনেকে মনে করে বাগডুম শুধু ঢাকার মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। আসলে তা নয়। আমাদের ৪৫ শতাংশ অর্ডার আসে ঢাকার বাইরে থেকে। আমাদের নিজস্ব ডেলিভারি টিম আছে। এছাড়াও আমাদের ৮টি ডেলিভারি পার্টনার আছে। আমরা তাদের মাধ্যমে দেশের গ্রামাঞ্চলে ই-কমার্স হিসেবে সবচেয়ে দ্রুত ডেলিভারি দিয়ে থাকি। পণ্য ডেলিভারির বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কাজ করছে বাগডুমডটকম-এর ডেলিভারি টিম। তবে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা থেকে বেশিরভাগ অর্ডার আসে। এখন কুমিল্লা থেকেও অর্ডার পাচ্ছি।
বিবার্তা : বাগডুমের পণ্য ক্রয়ের পদ্ধতিটা জানতে চাই।
মিরাজুল হক : এটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব সহজে করা যায়। ফেসবুকের মতই সহজ পদ্ধতি। যদি বাগডুম সাইটে সাইন-আপ করা থাকে তাহলে একটি পণ্য কিনতে আপনার সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড এবং সাইন-আপ করে পণ্য কিনতে সর্বোচ্চ দেড় মিনিট সময় লাগবে।
বিবার্তা : আর পেমেন্ট কিভাবে?
মিরাজুল হক : ক্যাশ অন ডেলিভারি, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ ছাড়াও সব ক্ষেত্রেই পেমেন্ট করা যায়। বর্তমানে ৭৪% পেমেন্ট হয় ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে। তবে বিকাশ, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। এখন ক্রেতারা পণ্য ঠিকভাবে হাতে পাচ্ছের বলে কার্ডে পেমেন্ট দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই মিউচ্যুয়াল ব্যাংক ও ব্রাক ব্যাংকের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। সিটি ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। ব্রাক ব্যাংক মহিলাদের জন্য একটি বিশেষ কার্ড চালু করেছে, যা হ্যাপী আওয়ার নামে পরিচিত। এটি বৃহস্পতিবার ৬টা-১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা বিশেষ সার্ভিস দিবে।
বিবার্তা : ই-কমার্স ব্যবসার চ্যালেঞ্জগুলো কি?
মিরাজুল হক : একটি ই-কমার্স সাইট চালু করা অনেক সহজ, কিন্তু এটাকে মার্কেটে ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা বা ব্র্যান্ড তৈরি করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। ক্রেতার অর্ডারের পরে যদি তার অভিজ্ঞতা ভালো হয় তাহলে সে আপনার কাছ থেকে আরও আরও পণ্য নেবে। আর কাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা না পেলে দ্বিতীয় বার আর ওই সাইটে আসবেন না। ক্রেতাদের মানসম্পন্ন সেবা দিয়ে ধরে রাখাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য ই-কমার্সের ক্ষেত্রে কাস্টমার আনার চাইতেও ধরে রাখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেদিক থেকে আমরা এই বিষয়গুলো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে মোকাবেলা করছি।
বিবার্তা : বাগডুমের ভবিষৎ পরিকল্পনা কি?
মিরাজুল হক : আমরা বাগডুম.কমকে বিশ্বব্যাপী চিনাতে চাই। এর জন্য আমরা বড় মার্চেন্ডার যেমন- এলজি, এসিআই, ট্রান্সকমের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছি। তবে ইতোমধ্যেই আমরা বাগডুমকে একটি ই-কমার্সের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। আমরা চাই ছোট যে মার্চেন্ডার আছে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত স্থানে নিয়ে গিয়ে সবার কাছে পরিচিত করা। তাদের নামে সবাই তাদের চিনবে, বাগডুমের নামে নয়। তাদের আর্থিক সাপোর্ট দিয়ে ক্ষুদ্র থেকে এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ে নিয়ে যেতে। আশা করি, বাগডুম আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে এবং বাগডুমকে আমরা আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো।
বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]