
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত এই যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যুবকদের এই সংগঠন আমাদের জাতির পিতার চিন্তা, চেতনা, স্বপ্ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ। একটি মননশীল জাতি গঠনের উদ্দেশে জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৩ সালের ১১ নভেম্বর যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনো পর্যন্ত সংগঠনটি একটি মুক্ত উদার গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মানে কাজ করে যাচ্ছে।
যুবলীগের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের বর্তমান কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যতের নানা বিষয় নিয়ে বিবার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। সাক্ষাতকারের চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌফিক ওরিন।
বিবার্তা : দেশের রাজনীতি এখন পরিচালিত হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে যুবলীগের আগামী নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনাটা কি?
ওমর ফারুক চৌধুরী : নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভাবনা জনমত সৃষ্টি করা। সত্য মিথ্যার প্রভেদ মানুষকে বুঝিয়ে দেয়া। নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের কাজগুলো মানুষকে তুলে ধরবো। একই সাথে বিএনপি-জামাতের নৃশংসতা জনগণকে মনে করিয়ে দেব। আওয়ামী লীগের সাথে অনান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভেদ বুঝিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত গঠন আমাদের মূল লক্ষ্য।
বিবার্তা: যুব লীগের ৬ষ্ঠ জাতীয় কংগ্রের মধ্য দিয়ে আপনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এবং সুনাম অর্জন করেছেন। সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহনের পর আপনারা বিশেষ কোন ধরণের কাজ করেছেন, যা অন্যান্য সংগঠন থেকে আপনাদের পৃথক করেছে?
ওমর ফারুক চৌধুরী: আমরা যুব সমাজকে পড়াশুনা ও জ্ঞান চর্চায় আগ্রহী করে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য আমরা বিভিন্ন প্রকাশনা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছি। আমাদের বর্তমানে চারশ’র অধিক প্রকাশনা রয়েছে। আমরা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণয়ন করি। আমরা চাই বিএনপিও প্রকাশনায় এগিয়ে আসুক। আমি আমাদের প্রতিপক্ষকে বলবো প্রকাশনার মাধ্যমে এগিয়ে আসুন।
শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জনগণের ক্ষমতায়নের পতাকাবাহী সংগঠন। এর মূল কথা জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠন। এই দর্শন জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এর মূল কাজটি করেছে যুবলীগ।
আমরাই প্রথম পত্রপত্রিকায় রাজনৈতিক ক্রোড়পত্র বের করেছি। সেখানে বিভিন্ন সরকারের আমলের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের পার্থক্য জনগণের নিকট তুলে ধরি। বিরাট খরচের কারণে এটি সবসময় করতে পারি না, মাঝে মধ্যে বের করি। পত্রিকায় এই বিজ্ঞাপন আকারে দিলে সারাদেশের জনগণসহ সারাবিশ্বে কর্মকাণ্ডগুলো ছড়িয়ে দিতে পারি।
আমরা আমাদের বিভিন্ন সভায় লেখক, শিক্ষক, সাংবাদিক, অভিনেতাসহ পেশাজীবীদের বক্তৃতা করার সুযোগ দিয়ে থাকি। সেখানে অনেকে আমাদের সমালোচনা করে থাকেন। আমি এই সমালোচনাকে ভাবি প্রশংসার নামান্তর। এর মাধ্যমে সেখান থেকে বের হয়ে আমরা আমাদের ভূল ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে পারি।
বিবার্তা: বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী বলে আপনারা দাবি করেন। সংগঠন শক্তিশালী করার পেছনে আপনাদের গোপন রহস্যটা কি?
ওমর ফারুক চৌধুরী: নেতা কর্মীদের পরিশ্রম সমন্বয় সাধন করতে পারলেই যে কোনো সংগঠন শক্তিশালী হয়। এজন্য সবাইকে সুযোগ দিতে হয়, আমরা সেটা করি। আমরা আমাদের যে কোনো কর্মসূচিতে সকল নেতাদের বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ করে দেই। আমাদের যে কোনো সম্মেলনের স্টেজ বিশাল আকারে করে থাকি।
আমরা সাধারণত যেটা ভাবি সেটা বিরোধীদলে থাকলে সংগঠন শক্তিশালী হয়। সে সময় বজ্র কণ্ঠে বক্তৃতার মাধ্যমে শব্দ বোমা তৈরি করি। আমরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। আমাদের আন্দোলন কোথায়?
আমাদের আন্দোলন হচ্ছে শেখ হাসিনাকে মানুষষের সামনে তুলে ধরা। আমরা সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে শেখ হাসিনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করি।
আন্দোলন মানে শুধু মিছিল করা না। আমার কাজ যুবলীগের পরিবারকে সম্মান দেয়া। তাদের মঞ্চে বসাতে হবে, বক্তৃতা দিতে হবে। আমাদের ব্যর্থতাকে বের করে সেটা সমাধান করা।
বিবার্তা: দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কমিটিগুলো নেতাদের পছন্দ নির্ভর হয় বলে অভিযোগ ওঠে। আপনাদের সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিও কি একই অভিযোগে অভিযুক্ত?
ওমর ফারুক চৌধুরী: এই অভিযোগ মোটেই প্রযোজ্য নয়। আমি রাজনীতি বলতে বুঝি স্বতস্ফুর্তভাবে জনগণের কল্যানে নিয়োজিত মানবীয় কাঠামো। আর শেখ হাসিনা আমাকে শিখিয়েছেন রাজনীতি মানে সমোঝতার শিল্প। আমি যে সম্মেলন করেছি সেখানে আগে গিয়েছি দেখতে যে, কারা এটিতে বাধা দিতে পারে। তাদের সাথে সমন্বয় করে সম্মেলন পরিচালনা করি। আমাদের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন থাকে সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন। ওপেন স্টেজে ভোটের মাধ্যমে আমাদের নেতা নির্বাচিত হন। তবে সম্মেলনে সবসময় একটা উত্তেজনা থাকে।
সম্মেলনে নবীনের উদ্যম প্রবীনের প্রজ্ঞার সমন্বয় করি। আমরা সবার সাথে কথা বলে তারপর সম্মেলন করি।
বিবার্তা: সম্প্রতি সময়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিষয়টিতে আপনাদের অনুভূতি কেমন?
ওমর ফারুক চৌধুরী: এত বছর পর সাত মার্চের ভাষন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল শুধু শেখ হাসিনার জন্য। জিয়া এই মূল্যবান দলিল ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল।
সেদিন শেখ মুজিব বুকে জমানো কথাগুলো বলেছিলেন, সেটিই হলো ইতিহাস। আর বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সেদিন বঙ্গবন্ধুকে নিজের উপর ভরসা রাখতে বলেছিলেন। নিজের উপর ভরসা করে বুকে জমানো কথাগুলো আজ বিশ্ব দলিল।
বিবার্তা: ঐতিহাসিক এই ভাষণ জনগণের কাছে ছড়িয়ে দিতে দেশের যুবকদের নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন হিসেবে যুবলীগ কি করেছে?
ওমর ফারুক চৌধুরী: বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে আমরা পকেট বুক হিসেবে তৈরি করেছি। ইংরেজি-বাংলা দুই ভাষায় আমরা সেটি করেছি। এছাড়া আমরা সিডি বা ডিভিডি আকারে ছড়িয়ে দিয়েছি। এই ভাষণ নিয়ে এখন বিশ্বব্যাপী গবেষণা হচ্ছে।
বিবার্তা : আপনি তো যুবলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আপনার মতে কারা যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারবে?
ওমর ফারুক চৌধুরী: মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাল হচ্ছে যৌবন কাল। যুবকরাই দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে। মূলত ছাত্রলীগ থেকে যারা অবসর নিয়েছে তারাই যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হতে পারবে।
বিবার্তা: মাঝে মাঝে যুবলীগ নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়। যেটি একটি অপ্রিয় সত্য। দলের চেয়ারম্যান হিসেব বিষয়গুলোকে আপনি কিভাবে দেখেন?
ওমর ফারুক চৌধুরী: কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় অনেক নেতা কর্মী জড়িত থাকে। তবে অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে অনেক ঘটনা আছে যেগুলোয় আমাদের কেউ জড়িত না থাকলেও খবরে তাদের নাম দেয়া হয়। যেমন : মাঝে দেখলাম এক ট্রাক ড্রাইভাররে যুবলীগ নেতা বানানো হয়েছে!
বিবার্তা: বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর বের হয়েছে যে, যুবলীগ চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের একটি অসন থেকে নির্বাচন করবেন। খবরটির সত্যতা কতটুকু?
ওমর ফারুক চৌধুরী: আমি নিজে সে খবরগুলো দেখেছি। কিন্তু আমার যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে সেটি সঠিক নয়। রাজনীতির মূল লক্ষ্য এমপি হওয়া না। জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। নোবেল ওর্কার হতে হবে। জনমত সৃষ্টি করাই আমার কাজ। আমি উত্থান-পতন দুটোই দেখেছি। এ কারণে এমপি মন্ত্রী হতে চাই না।
বিবার্তা/ওরিন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]