শিরোনাম
ওপারে গিয়েও গাইবেন আব্দুল জব্বার...
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০১৭, ১১:০৭
ওপারে গিয়েও গাইবেন আব্দুল জব্বার...
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার আর নেই। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। গেলো ফেব্রুয়ারিতে বিবার্তার সাথে আলাপনে মেতে উঠেছিলেন তিনি। তার কন্ঠের অসংখ্য কালজয়ী গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বিশেষ করে, তার গাওয়া ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি একুশে ফেব্রুয়ারিসহ সব ধরনের রাষ্ট্রীয় দিবসে বাজানো হয়ে থাকে।


দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে মহান এ কণ্ঠশিল্পী ৭১’র অগ্নিঝরা দিনগুলোতে স্বাধীন বাংলাবেতার কেন্দ্রে যোগদান করেছিলেন। তার অনলবর্ষী কন্ঠের গান শুনে মুক্তিযোদ্ধারা প্রেরণাদীপ্ত হয়েছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-অভি মঈনুদ্দীন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ তা পুণঃপ্রকাশ করা হলো।


ভাষা আন্দোলন নিয়ে আপনার স্মৃতিচারণ করুন-
ভাষা আন্দোলনের সেই দিনগুলোর কথা আমার এখনও স্মৃতিতে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় আমি দশ-এগারো বছরের কিশোর। কেবল প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে এসেছি। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে এ আন্দোলনের কথা শুনেছি। পশ্চিম পাকিস্তানিরা অন্যায়ভাবে আমাদের উপর উর্দু চাপিয়ে দিচ্ছে জানতে পেরে মনের ভেতর ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছিল। সেই সময় থেকেই আমি দেশের প্রতিটি সংকটে-সংগ্রামে সচেতন থেকেছি।


ভাষা আন্দোলনের ফলে দেশীয় সঙ্গীতে কোনো ধরনের পরিবর্তন এসেছে বলে আপনি মনে করেন-
ভাষা আন্দোলনের পর থেকে এ দেশের সঙ্গীতে আমূল পরির্তন ঘটেছে। ভাষা আন্দোলন ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন। রক্ত দিয়ে ভাষার দাবি আদায়ের পরে আমরা প্রাণ খুলে বাংলা গান গাইতে শুরু করেছি। এর আগে গান গাওয়ার উপর অনেক ধরনের বিধি-নিষেধ ছিল। বিশেষ করে, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া এক প্রকার বে-আইনি এবং রাষ্ট্রবিরোধী কাজ ছিলো। তবুও শত বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রতিবাদী শিল্পীরা গানের মাধ্যমে সাধারণ জনতাকে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ করেছেন।


আপনার গাওয়া ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটির জন্ম কথা সম্পর্কে বলুন-
‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ শিরোনামের গানটি আমার কাছে শুধু একটি গান নয়; একটি আন্দোলন, একটি অভ্যুত্থান এবং জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনও বটে। আমাকে বঙ্গবন্ধু [শেখ মুজিবুর রহমান] পাগলা বলে ডাকতেন। একদিন বললেন পাগলা একটা গান বানাতে হবে। গানটিতে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সকল যোদ্ধাদের কথা উঠে আসবে। তার আদেশ পেয়ে আমি এবং গীতিকার ফজল-এ খোদা একটি গান তৈরি করতে বসে যাই। ফজল-এ খোদা খুব দ্রুত গানটি লিখে ফেললেন। আমি গানটিতে তৎক্ষণাৎ সুর আরোপ করে কন্ঠে ধারন করে ফেলি। এরপর গানটি বাবাকে [বঙ্গবন্ধুকে তিনি বাবা বলে ডাকতেন] গেয়ে শোনাই। তিনি গানটি শুনে ভীষণ পছন্দ করলেন। এরপর থেকে গানটি সব মাধ্যমে প্রচার শুরু হয়। এটি একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সর্বাধিক পরিবেশিত একটি গান। মাতৃভাষা দিবস ছাড়াও গানটি স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে সর্বত্র পরিবেশন করা হয়।


বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের গানে ভাষা এবং দেশ প্রেমের উপস্থিতি উপলদ্ধি করেন কী?
এখনকার শিল্পীরাও তাদের গানের কথা-সুরে দেশাত্মবোধের স্বাক্ষর রাখছেন। এর জ্বলন্ত প্রমাণ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের সাম্প্রতিক আন্দোলন। আমরা দেখেছি শাহবাগের জাগরণী মঞ্চে বেশ কয়েকজন সঙ্গীতশিল্পী তাদের রচিত দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেছেন। আমি মনে করি, এরা সবাই এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা। আমি এই সব শিল্পদের সংগ্রামী অভিন্দন এবং সালাম জানাই।


আপনিও তো জাগরণী মঞ্চে গান গেয়েছেন-
আমি পরপর চার-পাঁচ দিন সেখানে গান গাইতে গিয়েছিলাম। জাগরণী মঞ্চে গান গাইতে গিয়ে বারবার ৭১’র রণাঙ্গনে ফিরে যাচ্ছিলাম।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তো আপনার গান খুব পছন্দ করেতেন-
আমি জাতির জনকের মুরিদ। তিনি খালি গলায় আমার গান শুনতেন। তিনি বেঁচে থাকলে দেশীয় সংগীত অঙ্গন অন্য রকম হতো।


গান নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত গান গেয়ে যেতে চাই। বাংলা গানের উৎকর্ষ সাধনে আমি আজীবন কাজ করে যাবো। আমি চাই নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা বাংলা গানের মান বাড়াতে এগিয়ে আসুক।


আপনি গান গেয়ে কতটা তৃপ্তি লাভ করেছেন?
আমি গান গেয়ে এখনও আত্মতৃপ্তি অর্জন করতে পারিনি। প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে মনে হয়, জীবনের সেরা গানটি আজও গাইতে পারলাম না। আমি এখনো হন্যে হয়ে সুরের পিছে ছুটছি।


‘আব্দুল জব্বার’ এবং ‘গান’- এই দুটি বিষয় আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
এ দুটি বিষয় একে অন্যের পরিপূরক। এ দুই সত্তার মরণ নেই। আমি মরে গেলেও গান ছাড়বো না। শুধু তাই নয়, বেহেশতে গিয়েও বাংলা গান গাইতে চাই।


আপনার কন্ঠে ‘ওরে নীল দরিয়া’ কিংবা ‘আমি তো বন্ধু মাতাল নই’ গানগুলো এখনো মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, কেমন লাগে আপনার?
ওরে নীল দরিয়া গানটি আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত সারেং বউ ছবির গান। গানটি নায়ক ফাররুকের লিপে গেয়েছিলাম। অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো গানটি। আমার জীবনে এই একটি গান প্রতিটি শোতেই আমাকে গাইতেই হয়েছে। এই গানটি গাওয়া ছাড়া আমি মঞ্চ থেকে নামতেই পারিনি। ‘আমি তো বন্ধু মাতাল নই’ গানটি রুহুল আমিন পরিচালিত ‘বেঈমান’ ছবির গান। এই গানটি নায়ক রাজ রাজ্জাকের লিপে গেয়েছিলাম। এই গানটিও অসাধারণ। এখনো শ্রোতারা গানটি মনে রেখেছে যে এটা ভাবতেই ভালোলাগে।


বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com