শিরোনাম
‘সরকার নিশ্চিত ক্রেতা হলে ঢাকার বাইরে ইন্টারনেট সম্প্রসারণ সম্ভব’
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:০২
‘সরকার নিশ্চিত ক্রেতা হলে ঢাকার বাইরে ইন্টারনেট সম্প্রসারণ সম্ভব’
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের একটি প্লাটফর্ম আইএসপিএবি। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে আইএসপিএবি অর্থবহ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রতিটি পর্যায়ে আইএসপিএবি’র রয়েছে সক্রিয় অংশগ্রহণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম সম্প্রসারণে আইএসপি তার ভূমিকা অব্যহত রাখতে চায়।


সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানস্থ আম্বার আইটি লিমিটেডের কার্যালয়ে বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম। দীর্ঘ আলাপের চুম্বক অংশটুকু বিবার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরছেন- উজ্জ্বল এ গমেজ।


বিবার্তা : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আইএসপিএবির ভূমিকা কি?


এম এ হাকিম : ডিজিটাল বাংলাদেশের কোনো ডেফিনিশন অথবা আওতা নির্দিষ্ট করা কঠিন। আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবসায়ী আমরা মনে করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে হচ্ছে দেশের প্রতিটা ঘরে ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছে যাওয়া। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) নামে যারা কাজ করছেন তারা মনে করছেন, প্রত্যেকটা অফিস-আদালত অটোমেশন বা পেপারলেস হয়ে যাওয়াটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা তাদের মতো করে চিন্তা করছেন যে, এই সেক্টরটা যদি এভাবে উন্নতি হয় তাহলে সেটা হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। অন্যদিকে ব্যাংকিং সেক্টরে যারা কাজ করছেন তারা ভাবছেন যে, আমাদের ক্যাশলেস ট্রানজেকশনটা যদি এনসিওর করা যায়, টাকার লেনদেনটা যদি পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর হয় এবং নিরাপত্তাব্যবস্থাটা শক্তিশালী হয় তাহলে এটাই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।


আমি মনে করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যেকটা সেক্টর, প্রত্যেকটা কম্পানি নিজের মতো করে চিন্তা করছে। আসলে ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার রূপায়ন। দেশের উন্নয়নের জন্য যতগুলো সেক্টর রয়েছে সবগুলোই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে গেছে। এখন এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন ইন্টানেট। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, প্রশাসন, ব্যাংক সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এখন ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে তো আর জনগণ প্রযুক্তির সেবা গ্রহণ করতে পারবে না। আমার মতে, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি কানেক্টেড হবেন ততক্ষণে ডিজিটাল বাংলাদেশের কোনো অবজেক্টিভস দৃশ্যমান হবে না। যেমন আপনি একটা অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরি করলেন। এটা যে কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করতে ইন্টারনেটের দরকার হবে। একইভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যত ধরনের প্রযুক্তি তৈরি করা হচ্ছে এগুলোর সাথে ইন্টারনেট সংযোগের কাজটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই জনগণ যাতে কম খরচে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে এর জন্য সরকারী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে আমরা রাজধানীর সব এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছি।



বিবার্তা : আপনাদের ব্রডব্যান্ড ব্যবসাটা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। কেন?


এম এ হাকিম : আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যারা আছেন সবাই কিন্তু ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা ব্যবসার পরিধি সম্প্রসারণ করতে চাইবেনই, সেটাই স্বাভাবিক। যেখানে ব্যবসা আছে সেখানে ব্যবসায়ীরা অটোমেটিক্যালি চলে যান। যেমন আপনারা সাংবাদিক। কোনো একটা ঘটনা ঘটলে সেটা যদি সংবাদ হওয়ার উপযোগী হয় তাহলে সেখানে সাংবাদিকরা এমনিতেই চলে যাবেন। আমরা ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করছি। এখন যদি ঢাকার বাইরে ব্যবসা থাকে তাহলে আমরা সেখানে অবশ্যই পৌঁছাতে চেষ্টা করব।


এখন আমরা ঢাকার বাইরে কেন যাচ্ছি না, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে কয়েকটি বিষয়ে একটু আলোকপাত করা দরকার – প্রথমত, ঢাকার সাথে বাইরের শিক্ষার হারের একটা বড় তফাৎ আছে। দ্বিতীয়ত, ঢাকার একজন তরুণের বায়িং ক্যাপসিটি আর বাইরের একজন যুবকের বায়িং ক্যাপাসিটি সমান নয়। ঢাকায় বসে একজন ইন্টারনেটের জন্য প্রতি মাসে এক হাজার টাকা খরচ করছেন কিন্তু ঢাকার বাইরের একজনের পক্ষে একই অংক খরচ করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব না। তাই সবার আগে বায়িং ক্যাপাসিটির এই ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়া বা মিনিমাইজ করা প্রয়োজন।


বর্তমান সরকার ইন্টারনেট সম্প্রসারণে অত্যন্ত আন্তরিক। কাজেই আমি মনে করি, ক্রয়ক্ষমতাজনিত প্রভাবকে মিনিমাইজ করতে সরকারি সম্পৃক্ততা আরো সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। কেননা যে কোনো দেশের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে সরকার। সুবিধাজনক শর্তে যদি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ঢাকার বাইরে অন্য ব্যবহারকারিদের স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি স্থানীয় পর্যায়ে যদি আইএসপি ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক এবং নিশ্চিত ক্রেতা হয় ‘সরকার’, কেবল তাহলেই ঢাকার বাইরে আমাদের সেবা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।


বিবার্তা : সরকার বলছে দেশে সাড়ে ছয় কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, আসলে গ্রাহক সংখ্যা কত? জিডিপিতে এর ভূমিকাই বা কতটুকু?


এম এ হাকিম : ইন্টারনেট গ্রাহকদের সংখ্যা সংক্রান্ত সরকারি ঘোষণা শতকরা ১০০ ভাগ নির্ভুল। কিন্তু জিডিপিতে ইন্টারনেট গ্রাহকদের ভূমিকা কতটুকু, তা নির্নয় করতে হলে প্রথমে এই গ্রাহকরা কে কি ধরণের ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন সে ব্যপারে আলোকপাত করা প্রয়োজন।


বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি গ্রাহকের মধ্যে ৬ কোটি মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক এবং ৬০ লাখের মতো গ্রাহক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গত জুলাই পর্যন্ত হিসেব বিবেচনায় নিলে, আমাদের দেশের প্রতিদিনের ডাটা স্পিট হচ্ছে ৪২৬ জিবিপিএস। ৪২৬ জিবিপিএস এর মধ্যে মাত্র ১৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডইউথ টেলিকম অপারেটররা ব্যবহার করে এবং বাকিটা ব্যবহার করে আইসএসপিরা। অর্থাৎ ৬ কোটি গ্রাহক মোবাইল গ্রাহক সম্মিলিতভাবে যেখানে ১৫০ জিবিপিএস করছেন, সেখানে মাত্র ৬০ লাখ ব্রডব্যান্ড গ্রাহক বাকি ৩৬০ জিবিপিএস ব্যান্ডইউথ ব্যবহার করছেন। এই দুই শ্রেণির গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যবহারের প্যাটার্নেও রয়েছে সুস্পষ্ট পার্থক্য। মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকদের ব্যবহৃত ১৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ এর প্রায় ৮০% ব্যবহার হয় ফেসবুক, অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন এবং ইউটিউব ব্রাউজিংয়ে। অর্থনীতি ও উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ৮০ শতাংশ হচ্ছে নন-প্রোডাক্টিভ ইউজার।


অন্যদিকে, ব্রডব্যান্ড গ্রাহকদের ৩৬০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের প্রায় পুরোটাই ব্যবহার হয় প্রডাক্টিভ কাজে। বেশকয়েকটি গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক গবেষণার ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একটি উন্নয়নশীল দেশে প্রতি ১০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন বাড়লে জিডিপি’র ১.৩৭ প্রবৃদ্ধি হয়। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির আলোকে চিন্তা করলে এই ৬০ লাখ গ্রাহকের ভূমিকাকেই কেবল বিবেচনায় নিতে হবে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বাইরে থেকে শুধু আউসোর্সিং করে বছরে ৫ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের সরকারি পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে হলে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে ব্রডব্যান্ড খাতের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যেতে হবে। আমি নিশ্চিত, বর্তমান প্রযুক্তিবান্ধব সরকার ব্রডব্যান্ড খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন।



বিবার্তা : দেশের আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্ভাবনা কেমন?


এম এ হাকিম : আমি মনে করি, বাংলাদেশে বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবতায় ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু এই সম্ভাবনা এবং বিকাশের অনুকূল পরিবেশকে আমরা কতটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি, তার উপর নির্ভর করছে এই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত। একটা পরিসংখ্যান দিই – আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা বলি দেশে ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের সংখ্যা ৬০ লাখ। আবার বিটিআরসি’র অফিসিয়াল ভাষ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা ৪০-৪৫ লাখ। মজার বিষয় হচ্ছে, দুটি তথ্যের একটিও ভুল নয়! কিন্তু কিভাবে? ব্যাখ্যা করছি – প্রত্যেকটি আইএসপিকে বাধ্যতামূলকভাবে বিটিআরসিকে গ্রাহক সংখ্যা জানাতে হয়। বিটিআরসি পরিবেশিত সংখাটি হচ্ছে এই ধরনের রিপোর্টে পাওয়া সমস্ত গ্রাহকের যোগফল। অপরদিকে, বাংলাদেশে প্রচুর অবৈধ (লাইসেন্সবিহীন) আইএসপি আছে, যারা অনুমিতভাবেই বিটিআরসিকে কোনোপ্রকার তথ্য প্রদান করে না। লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সবিহীন সব আইএসপির গ্রাহক মিলে সংখ্যাটি এমনকি ৬০ লাখেরও বেশি।


২০ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে আমরা এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ লাখ গ্রাহককে প্রডাক্টিভ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে কানেক্ট করতে পেরেছি - সাফল্যের বিচারে এটা উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু আমি মনে করি, সম্ভাবনা ও প্রয়োজনের নিরিখে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্রুতগতির সম্প্রসারণ সময়ের ব্যাপার মাত্র, যদি আসলেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের সত্যিকার ফসল ঘরে তুলতে আন্তরিক হই।


বিবার্তা : এক্ষেত্রে সরকারের কী কোনো ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন?


এম এ হাকিম : অবশ্যই। যেকোনো জাতির সার্বিক উন্নয়নে সরকারই প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে বেসরকারী অংশগ্রণ ও সহযোগিতা ছাড়া সরকার আমাদের সব সমস্যা সমাধান করে দেবে, এটা আশা করা বোকামি। উন্নয়ন, বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্ব। দেশের প্রতিটি ব্যবসায়িক খাত যেন সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা এবং যোগ্যতার নিরিখে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে যেতে পারে সেটা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।


ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিটি সংগঠনই নিজ নিজ ইন্ডাস্ট্রির দৃষ্টিকোণ সরকারের নীতিমালা ও পরিকল্পনায় সংযোজন-বিয়োজন দেখতে চায়। এই চাওয়া যে সবসময় অন্যান্য ব্যবসায়িক খাতের চাওয়ার সমান্তরাল হয় তা কিন্তু নয়। প্রত্যেক ব্যবসায়ীক প্লাটফর্মের প্রতিনিধিরা তাঁদের নিজেদের সদস্যদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে চান। সরকার সব রকম প্রস্তাব, আবেদন, অনুরোধ বিবেচনা করার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের নিরিখে। এটা খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।


একইভাবে আইএসপি ব্যবসায়ীদেরও সরকারের কাছে কিছু চাওয়া আছে - এর মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের খরচ কমিয়ে আনা। আমরা মনে করি, এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো দরকার যাতে করে তাঁরা যথেচ্ছ মূল্য নির্ধারনে সক্ষম না হয়। তাছাড়া আইএসপি খাতে করের হার কমানো জরুরি বলেও আমরা মনে করি। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে এসব দাবি তুলে ধরেছি। আশার কথা হচ্ছে, সরকারের তরফ থেকেও আমাদের এই দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে বিবেচনা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।



বিবার্তা : আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একটা বড় অভিযোগ হচ্ছে, তারা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে তার ঝুলিয়ে নগরীর সৌন্দর্য হানি করছে। এটার সমাধান কি হতে পারে?


এম এ হাকিম : আপনাকে যখন সৌন্দর্য আর প্রয়োজনের মধ্যে থেকে যেকোন একটাকে বেছে নিতে বলা হবে তখন যৌক্তিকভাবেই আপনি প্রয়োজনকে বেছে নেবেন। এই ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার প্রযোজ্য। যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁদেরকে আমি খুব একটা দোষ দিতে চাই না। কারণ কারো কাছে যদি পুরো একটা ব্যবস্থার শুধুমাত্র একটা অংশ দৃশ্যমান হয় তাহলে মিসজাজমেন্টাল হওয়াটাই স্বাভাবিক। ব্যাপারটা অনেকটা অন্ধের হাতি দর্শনের মতোই। প্রথমত, বর্তমানে খুবই পরিকল্পিত নগরায়ন এবং নগরের সম্প্রসারণ দেখা গেলেও, নগরায়নের একদম শুরুতে পরিকল্পনার কোনো বালাই ছিলো না। বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের শহরগুলো গড়ে ও বেড়ে উঠেছে। ফলে স্বভাবতই সব জায়গায় আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইন বসানো এখনো সম্ভব হয়নি, বেশ কিছু পকেট থেকেই যাচ্ছে। কারো বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ দিতে গেলে বৈদ্যুতিক খুঁটির একটি বিকল্প হচ্ছে এডিসিএল-এর মাধ্যমে যাওয়া। বিটিভির এডিসিএল-এর মাধ্যমে গেলে ৬৪.১৬৮ কেবিপিএস-এর উপরে উঠার সুযোগ নেই। আরেকটা বিকল্প ওয়্যারলেস। কিন্তু সেক্ষেত্রেও ফ্রিকোয়েন্সির অপ্রতুলতা রয়েছে। তৃতীয় বিকল্প হতে পারত ডায়ালআপ। কিন্তু তাতে ৮ কেবিপিএস-এর উপর ট্রান্সমিশন সম্ভব না। দেখা যাচ্ছে তিনটা বিকল্পের একটাও একজন আবাসিক গ্রাহকের ৩-৫ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ এর চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়।


এবার আসি ইন্টারনেট সংযোগের মূল্য প্রসঙ্গে। এনটিটিএন প্রতি এমবিপিএস-এ আইএসপিকে চার্জ করে ৮০০ টাকা। বর্তমানে আমরা গড়পরতা ১০০০ টাকায় ৩ এমবিপিএস ইন্টারনেট দিচ্ছি। এখন যদি সব সংযোগ এনটিটিএন-এর মাধ্যমে দিতে হতো তাহলে ৩ এমবিপিএস-এর দাম দাঁড়াত ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। কাজেই, বর্তমান বাস্তবতায়, ইন্টারনেট সংযোগ দিতে বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার করতে আমরা আসলে এক প্রকার বাধ্যই হচ্ছি। তবে আমরা আশাবাদী, সরকারী পদক্ষেপ এবং অংশীদারদের আন্তরিক ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী দিকনির্দেশনা এবং তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টার সুযোগ্য নেতৃত্বে শুধু এই সমস্যাই নয়, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের অন্য সব প্রতিবন্ধবতাকে জয় করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com