সফল ব্যবসায়ী আদম তমিজি হকের জন্ম ১৯৭৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর, রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায়। তবে পারিবারিক কারণে ছেলেবেলায়ই পাড়ি জমাতে হয়েছে বিদেশে। সেখানে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে যুক্ত হন ব্যবসায়। বর্তমানে হক গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি জাতির জনকের আদর্শ লালন, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সব সময়ই অবদান রেখে চলেছেন তিনি। একই সাথে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার আগ্রহ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে হক গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজে তার নিজস্ব কার্যালয়ে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় বিবার্তার সঙ্গে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌফিক ওরিন।
বিবার্তা : আপনি তো বর্তমানে বাংলাদেশে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ব্যবসায় আসার শুরুটা কেমন?
আদম তমিজি হক : আমার বাবা ব্যারিষ্টার তমিজুল হক ভারতের অাসাম রাজ্যর তিনসুকিয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও ১৯৪৭ সাল থেকে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং ১৯৪৭ সালে হক গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজ সততা, শ্রম ও মেধা দিয়ে কম্পানিটিকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছান। আমি ২০১০ সালে দেশে এসে কম্পানির দায়িত্ব গ্রহণ করি এবং এর সুনামের ধারা অব্যাহত রাখতে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। নতুন নতুন পণ্য আর পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে হক গ্রুপকে নতুন মাত্রা দিতে কাজ করে যাচ্ছি।
বিবার্তা : আপনার কম্পানির বর্তমান অবস্থা কেমন?
আদম তমিজি হক : হক গ্রুপের শ্রমিক, কর্মচারী, পরিবেশক, সাপ্লাইয়ার সবাই মিলে এটি একটি পরিবার। এই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে আমরা আমাদের গ্রাহকদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। হক পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের প্রতিটি স্থাপনা সঠিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় সন্নিবেশিত।
বিবার্তা : আপনি তো খুব ছোটবেলা থেকেই প্রবাসে। বিদেশে বসবাস করে স্বদেশকে চিনলেন কিভাবে?
আদম তমিজি হক : আমি নয় বছর বয়সে বিদেশ গমন করেছি এবং সেখানেই পড়াশুনা শেষ করেছি। কিন্তু মন পড়ে ছিল দেশে। সময় পেলেই দেশে আসতাম। কারণ দেশ আমাকে সব সময়ই টানতো। আমি পারিবারিকভাবে দেশকে চিনেছি ও বুঝেছি বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে। কারণ বাবার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনেছি। আমার বাবার কলকাতায় লেখাপড়া করার সুবাদে বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। বাবাই আমাকে বুঝিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। কারণ, তিনিই আমাদের দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।
আমার মনে সব সময় একটি বিষয় পীড়া দিত এই কারণেই, যে ব্যক্তিটি দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে একটি দেশ ও পতাকা পেয়েছি, সেই মহান ব্যক্তিকে কিভাবে এই দেশের কিছু ষড়যন্ত্রকারী হত্যা করেছে। শুধু হত্যা করেই নয়, তার নামটাও স্বাধীনতাবিরোধীরা মুছে দিতে চেয়েছিল। এগুলো আমি মানতে পারতাম না। তাই আমার লক্ষ্য ছিল পড়াশুনা শেষ করে দেশে গিয়ে বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন, সেই সোনার বাংলা বিনির্মাণে একটু হলেও অবদান রাখার চেষ্টা করবো।
বিবার্তা : ব্যবসার পাশাপাশি আপনি কি অন্য কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন?
আদম তমিজি হক : ব্যবসার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন সামজিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করি। বর্তমান দেশের একটি অন্যতম সমস্যা রোহিঙ্গা সমস্যা। এই বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছি। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে কম্পানির পক্ষ থেকে তাদের জন্য ত্রাণ পাঠাচ্ছি।
আমি টঙ্গী, গাজীপুরে বেশ কয়েকটি মসজিদের উন্নয়নসহ আঞ্জুমান হেদায়াতুল উম্মত এতিমখানার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিয়েছি।প্রতিবছর শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল বিতরণ করছি। এছাড়াও কক্সবাজারের হিমছড়িতে তমিজুল হক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছি।
বিবার্তা : আপনি নিজেও একজন তরুণ ব্যবসায়ী এবং দেশের একটি বড় অংশ তরুণ। তাই তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আপনার মনোভাব কেমন?
আদম তমিজি হক : অবশ্যই বর্তমানে তরুণ নেতৃত্ব খুবই জরুরী। পুরাতন যারা রয়েছেন তারা কেউই খারাপ কাজ করছেন না। তবে তরুন প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে তরুণ নেতৃত্বই। বর্তমান দেশ পরিচালনার জন্য এডভান্সড, এডুকেইটেড ও সফিস্টিকেটেড লোক প্রয়োজন। যার সবগুলোই তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। কয়েক বছর পরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে একটি শক্ত অবস্থান অর্জন করবে। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন।
বিবার্তা : শোনা যাচ্ছে রাজধানীর গুলশান এলাকায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনি নৌকার প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন?
আদম তমিজি হক : আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ মানেই জননেত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তিনি এই বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। সব তো উনার হাতেই। আমি নিজের থেকে কিছু করতে চাই না। নেত্রী যদি আমাকে রাজনীতিতে যোগ্য মনে করেন তাহলে আমি রাজনীতিতে আসবো। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। উনি যদি বলেন কিছু একটা কর তাহলে আমি রাজনীতিতে মুভ করবো, আর যদি বলেন এখন চুপ থাকতে তাহলে চুপ থাকবো।
রাজনীতিতে আসার বিষয়ে আমার অবস্থান অবশ্যই ইতিবাচক। আমি মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা নিয়েই রাজনীতিতে আসার চিন্তাভাবনা করছি। কারণ, আমি জনগণের জন্য কিছু করতে চাই।
বিবার্তা : বর্তমান রাজনীতির সব কিছুই কি আপনার ভালো লাগে?
আদম তমিজি হক : সব কিছু ভালো লাগে এটা ঠিক না। বাংলাদেশের রাজনীতির কিছু কিছু বিষয় লজ্জা দেয়। আমাদের জাতির জনকের শাহাদাৎ দিবস ১৫ই আগস্টে আমরা দেখি বিএনপির চেয়ারপার্সন জন্মদিন পালন করেন। এটি আমাদের জন্য সত্যিই লজ্জার। এই জিনিসগুলো সাধারণ মানুষের কাছেও খুবই বিব্রতকর।
বিবার্তা/ওরিন/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]