২০০৮ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে এলজি মোবাইল কোম্পানিতে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মু. তৌফিকুল ইসলামের মোবাইল ব্যবসা ক্যারিয়ারের। ধারাবাহিকভাবে স্প্রিন্ট, আই মোবাইল, মালাটা, কল-মি, সিসিআইটি, লেমন, জিওনিসহ কয়েকটি চায়নিজ ব্র্যান্ডের মোবাইল নিয়ে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালের ০১ নভেম্বর ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেড (ডিসিএল) হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ডের মোবাইল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল কম্পিউটার লিমিটেডের (ডিসিএল) মোবাইল ফোন বিভাগের প্রধান হিসেবে শুরু থেকেই তিনি গ্রাহকদের কাছে সাশ্রয়ী দামের মোবাইল পৌঁছে দিতে কাজ করছেন। ইতোমধ্যেই ৯ টি মডেলের ফিচার ও স্মার্টফোন বাজারজাত করেছেন তিনি।
সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগান ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে বিবার্তার সাথে কথা বলেন মু. তৌফিকুল ইসলাম। একান্ত আলাপে জানালেন বাজারে ডিসিএল মোবাইল ব্যবসার শুরু, নানা চ্যালেঞ্জ, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন উজ্জ্বল এ গমেজ।
বিবার্তা : বাজারে ডিসিএল ব্র্যান্ডের মোবাইল এলো কীভাবে?
মু. তৌফিকুল ইসলাম : আমরা মূলত দুটি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছি। একটা হলো ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড লি-ফোন, অন্যটা ডিসিএল মোবাইল। লি-ফোনের ফিচার ও স্মার্টফোন দু'টাই আছে। ২০১৬ সালের মে থেকে লি-ফোন বাজারে ছাড়া হয়। আমাদের বেশিভাগ লি-স্মার্টফোনই ৪জি প্রযুক্তিসম্পন্ন। কিছুদিন মার্কেটে ব্যবসা করার পরে দেশীয় ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরির টার্গেট নিয়ে প্রযুক্তিপণ্য ব্যবসা শুরু করে ড্যাফোডিল গ্রুপ।
বিবার্তা : ডিসিএল মোবাইলের বিশেষত্ব কী?
মু. তৌফিকুল ইসলাম : ২০১৬ সালের নভেম্বরে শুরু হয় ডিসিএল মোবাইল প্রোডাকশনের কাজ। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাজারে ছাড়া হয়। ডিসিএলের সব মোবাইলই আমাদের ডিজাইন করা। ওডিএম প্রজেক্ট। দেশের অধিকাংশ মোবাইল সাধারণত ওইএম প্রজেক্ট বা স্টক প্রজেক্ট। এ কারণে ওই মোবাইল কোম্পানিগুলো কম দামে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু ড্যাফোডিলের প্রোডাক্টগুলো সবার থেকে আলাদা। দাম কিছু কমবেশি হতে পারে কিন্তু প্রোডাক্টের গেটআপ, ভেতরের যে টেকনোলজি, কালার ভেরিয়েশন ইত্যাদি সবকিছুইতেই একটা ভিন্নতা আছে। অন্য কোম্পানির একই রেঞ্জের ফোনে যদি ৩০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ারের বেটারি দেয়, সেখানে দামের কথা চিন্তা না করে ক্রেতাদের সুবিধার জন্য আমরা ৬০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ারের ব্যাটারি দিচ্ছি।
আমাদের সর্বনিম্ন স্মার্টফোন টু জিবি র্যাম, ১৬ জিবি রম। চায়নিজরা এই প্রোডাক্টকে বলে বুলেটপ্রুফ গ্লাসের স্মার্টফোন। এই সেট ফেলে দিলে বা স্ক্র্যাচ করার চেষ্টা করলেও দাগ পড়বে না বা গ্লাস ভাঙবে না। আগে যেমন গরিলা গ্লাস ব্যবহার করা হতো এটা এখন সেটা হবে বুলেটপ্রুফ গ্লাস। কিন্তু এটার জন্য আমরা বেশি দাম রাখছি না।
বিবার্তা : বাজারে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন আসছে। ডিসিএল এই চ্যালেঞ্জকে কীভাবে মোকাবেলা করছে?
মু. তৌফিকুল ইসলাম : এই চ্যালেঞ্জ কিন্তু সব সময় ছিল এবং থাকবে। বর্তমান বাজারে মূলত প্রাইস নিয়ে খেলা হয়। সিম্ফনি-ওয়ালটন যখন মার্কেটে এসেছে তখন মার্কেটে চ্যালেঞ্জ কম ছিল। এখন যদি তারা আসত তাহলে তাদেরকেও কিন্তু একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হতো। দেশীয় ক্রেতারা চায় প্রোডাক্ট কম দামের হতে হবে, কাস্টমার ওরিয়েন্টেড হতে হবে, কিন্তু কোয়ালিটি ১০০ ভাগ থাকতে হবে। আমরা কাস্টমারদের এসব চাহিদার কথা চিন্তা করে সাশ্রয়ী দামে ফোনগুলো বাজারজাত করার চেষ্টা করছি। নতুন ব্র্যান্ড হিসেবে কোয়ালিটির প্রতি বেশি জোর দিচ্ছি। একবার কোনো ক্রেতা যেন ফোন ব্যবহার করে অন্যজনকে বলতে পারেন, ডিসিএল মোবাইলটা ভাল। এছাড়াও বিশেষ সুবিধা হিসেবে আমাদের সকল ফোনে দুই বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছি।
বিবার্তা : প্রান্তিক মানুষের জন্য ড্যাফোডিলের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি ?
মু. তৌফিকুল ইসলাম : সারাদেশে এখনও প্রায় ৬৩ শতাংশ মানুষ ফিচার ফোন ব্যবহার করে। প্রান্তিক মানুষের হাতে সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী ফোন তুলে দিতে মাত্র ৭৬০ টাকায় ডিসিএল মোবাইল বাজারে ছেড়েছে ড্যাফোডিল। ড্যাফোডিল বিশ্বাস করে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের হাতে কম দামে ভালো কোয়ালিটির ফোন দিতে পারলে অবশ্যই তারা এটা গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যেই আমরা ভালো সাড়াও পেয়েছি। এছাড়াও সাধ্যের মধ্যে কয়েকটি স্মার্টফোন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
বিবার্তা : মোবাইল আমদানী শুল্ক বাড়ার কারণে বাজারে কী এর প্রভাব পড়বে?
মু. তৌফিকুল ইসলাম : ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী মোবাইল হ্যান্ডসেটের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সেটাই বহাল রাখলেন। আগে ছিল ৫ শতাংশ। এখন হলো দ্বিগুণ। আবার আমাদের ১ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্যাক্স ছিল সেটাও বহাল আছে। আগে ছিল ২৩.৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে এর সাথে সরকারের অ্যাডিশনাল ১.২৫ শতাংশ আরো চার্জ আছে। তাহলে হচ্ছে ২৫ শতাংশ। এখন এর সাথে আরো ৫ শতাংশ যোগ হলে শুল্ক হবে ৩০.৭১ শতাংশ। মোবাইল শুল্কে ভ্যাট, ট্যাক্স, ইআইটি সব যোগ হয়। আমাদানি শুল্ক বাড়ার ফলে হ্যান্ডসেটের মূল্যেও এর প্রভাব পড়বে।
বিবার্তা : ডিসিএলের ভবিষ্যৎ বাজার সম্পর্কে বলুন
মু. তৌফিকুল ইসলাম : আমাদের খুব দ্রুত বাজার দখলের পরিকল্পনা নেই। বাজারে একটা বেইজ তৈরি করে, কাস্টমারের ফিডব্যাক নিয়ে ধীরে ধীরে নীতিতে, পরিকল্পিতভাবে বাজার দখল করতে চায় ডিসিএল। একদিনের জন্য নয়, সারা জীবনের জন্য প্রযুক্তি বাজারে ব্যবসা করতে চাই আমরা। ড্যাফোডিলকে যেমন সবাই চেনে ডিসিএলকেও যেন সবাই এক নামে চিনতে পারে। একবার ডিসিএলের মোবাইল কিনে কাস্টমার যেন বলে, এই প্রোডাক্টটা ভাল।
কম্পিউটারের মতো মোবাইলটাকেও দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে শক্ত অবস্থানে নিতে হলে আমাদের দেশেই অ্যাসেম্বলিং করতে হবে। গত বছর থেকেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ধীরে ধীরে কাজ করা হচ্ছে। দেশে অ্যাসেম্বল করার জন্য ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে বিটিআরসি, এনবিআর, সিসিটির সাথে কয়েকবার আলাপ করা হয়েছে।
গাজীপুর কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে জায়গা নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামীতে ওখানে ডিসিএল কম্পিউটার ও মোবাইল অ্যাসেম্বলিং করার টার্গেট রয়েছে। বাংলাদেশে দু'জন বা পাঁচজন যদি ফোন অ্যাসেম্বল করে, আমরা যেন তাদের মধ্যে থাকতে পারি। আমরা চাই আমাদের দেশেই পণ্য উৎপাদন করতে এবং দেশীয় পণ্য ব্যবহারেই সকলকে উৎসাহিত করতে।
বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]