শিরোনাম
“তৃণমূলের মানুষের সাথে মিশে আছি''
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০১৭, ১৭:২৮
“তৃণমূলের মানুষের সাথে মিশে আছি''
তৌফিক ওরিন
প্রিন্ট অ-অ+

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও ঝিনাইদাহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের জন্ম ১৯৫২ সালের ১২ মার্চ কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের একটি রাজনৈতিক পরিবারে। তার পিতা মরহুম আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন সিমলা রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদের তিন মেয়াদের চেয়ারম্যান। তাই নেতৃত্বকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে। কালিগঞ্জের মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াকালে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। পরবর্তীতে যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে বাবার জায়গায়টি দখল করেন - পরপর তিনবার শিমলা-রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ কালিগঞ্জ পৌরসভায় রূপান্তরিত হলে প্রথম পৌর মেয়র হন। দ্বিতীয়বারও হন। এরপর ২০০৮ সালে ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে আব্দুল মান্নান কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।


সম্প্রতি রাজধানীর কাওরান বাজারে বিবার্তা২৪ডটনেট কার্যালয়ে দীর্ঘ আলাপে তাঁর রাজনীতিতে আসা, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌফিক ওরিন।


বিবার্তা : আপনার রাজনীতিতে আসার শুরুর সময়টা কেমন?


আব্দুল মান্নান : আমার বাবা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে তিন মেয়াদে চেয়ারম্যান ছিলেন। ফলে আমাদের বাড়িতে সব ধরণের মানুষের যাতায়াত ছিল। বাড়িতে তাদের আসা-যাওয়ার কারণে তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে আমি উচ্চ মাধ্যমিক পড়াকালে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়ি। আমার বাবা সবসময় চেয়েছিলেন যেন আমি আমার তাঁর জায়গায় বসি। তাই ১৯৬৮ বা ৬৯ সালে আমি প্রথম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ার‌ম্যান নির্বাচন করি এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত হই। আমার বাবার মত আমিও তিন বার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করি।



বিবার্তা: ইউনিয়ন থেকে সংসদ পর্যন্ত গেলেন কিভাবে?


আব্দুল মান্নান: আমি হঠাৎ করে সংসদে যাইনি। দীর্ঘ দিন রাজনীতি করেই গিয়েছি। আগেই বলেছি, আমি আমার ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এরপর আমি কালিগঞ্জ উপজেলার প্রথম পৌর মেয়র হিসেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হই। পরের মেয়াদেও এলাকাবাসী আমাকে মেয়র নির্বাচিত করে। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯৬ সালে, ২০০১ সালে নির্বাচন করি। এর পর ২০০৮ সালে নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে জয় লাভ করি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হই। কিন্তু আমি নেত্রীর নির্দেশে আমি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে গেছি। এভাবে তৃণমূল থেকে পর্যায়ক্রমে আমি সংসদ পর্যন্ত গিয়েছি।


বিবার্তা : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে কেমন কাজ করছেন?


আব্দুল মান্নান: আমি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলি। সংসদ সদস্য থাকাকালে সরকারী বরাদ্দ আমি তৃণমূলের মানুষের কাজে পৌছে দিয়েছি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি। একই সাথে দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করি ও তাদের সুবিধা অসুবিধা সমাধানের চেষ্টা করি। সম্প্রতি আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য আমাকে আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি করে কেন্দ্র। আমি কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছি।



বিবার্তা: আপনি সংসদ সদস্য থাকাকালে আপনার এলাকায় কেমন ধরণের উন্নয়নমুলক কাজ করেছেন?


আব্দুল মান্নান: ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আমি এলাকায় বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আমার উদ্যোগে কালীগঞ্জে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চালু হয়েছে। আমার এলাকায় আমার বাবার নামে কালীগঞ্জে মহিলা কলেজ ও মায়ের নামে গার্লস হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। নিজের নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি, যা এখনও প্রক্রিয়াধীন। একইভাবে স্কুল কলেজ সংস্কারসহ এলাকার সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরে বিভিন্ন আর্থিক সাহায্য ও মঞ্জুরীর ব্যবস্থা করে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার বা মানোন্নয়নে ভূমিকা পালন করেছি। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে মানুষের পাশে থেকে সকল সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।


আমার নির্বাচনী এলাকার যোগোযোগব্যবস্থার উন্নয়নে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। সংসদ সদস্য থাকাকালে বেশ কিছু নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত করে গেছি। জনগণের ভোগান্তি যাতে না হয় সেজন্য সব সময় নজর রেখেছি।


আমার সময়ে এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে ছিলাম। প্রশাসনের সার্বিক সহায়তায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছি। আমার সময়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ অপরাধ প্রবণতা কমে গিয়েছিল।


আমি কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নতি মাধ্যমে একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে গেছি। প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যোগ্য নাগরিক ও দেশ প্রেমিক হতে তিনি উপদেশ দিয়ে যাচ্ছি।


বিবার্তা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন তৃণমূলের জনপ্রিতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন দেয়া হবে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?


আব্দুল মান্নান: আজকে আমরা দল করি, শেখ মুজিবকে ভালোবাসি, শেখ হাসিনাকে ভালোবাসি। কিন্তু দল করার অর্থ এই নয় যে খারাপ কাজকে ভালো বলে সমাজকে দূষণ করবো। নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যারা তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করবেন তারাই মনোনয়ন পাবেন। আমি আমাদের নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি যে সিদ্ধান্তটা দিয়েছেন সেটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা তৃণমূলের মানুষের সাথে মিশে আছি। এভাবে মনোনয়ন দিলে দেশে শান্তি বিরাজ করবে, সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হবে এবং বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা চেয়েছিলেন সেটি বাস্তবে রূপ পাবে।


বিবার্তা: দলনিরপেক্ষ ভোটারদের ভোট আওয়ামী লীগের ঝুলিতে আনতে আপানারা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বা কেমন ধরণের কাজ করে যাচ্ছেন?


আব্দুল মান্নান: যারা নিরপেক্ষ, তারা প্রার্থী দেখে ভোট দেয়। তার চারিত্রিক আচারণ, তার কার্যক্রম, তার এলাকায় প্রিভিয়াস রেকর্ড, এলাকায় কাজের মান এগুলো দেখে জনগণ ভোট দেয়। তাই আমি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমার করা কাজ জনগণের নিকট তুলে ধরি। একই সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের কর্মকাণ্ড এবং বিএনপি সরকারের আমলের কর্মকাণ্ডের পার্থক্য জনগণের নিকট তুলে ধরছি।


বিবার্তা/ওরিন/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com