শিরোনাম
‘নিজে উপস্থিত থেকে সম্মাননা নিতে চাই’
প্রকাশ : ২১ মে ২০১৭, ১৯:১৩
‘নিজে উপস্থিত থেকে সম্মাননা নিতে চাই’
ফেরদৌসী রহমান
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৫ ঘোষণা করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণী অনুযায়ী, চলচ্চিত্রের গানে গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন সঙ্গীতাঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তী ফেরদৌসী রহমান। বিশেষ সাক্ষাৎকার পর্বে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।


বিবার্তা : আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন, কেমন লাগছে? নিশ্চয়ই খুব খুশি আপনি?


ফেরদৌসী রহমান : অবশ্যই খুশি। যে কোনো সম্মাননা একজন শিল্পীর জন্য সম্মানের, আনন্দের। তাই আমিও খুশি, আনন্দিত। তবে আমি এই মুহূর্তে কিছুটা অসুস্থ। নিজের শয়নকক্ষ ছাড়া অন্য কক্ষে যাবারও শক্তি নেই। তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাকে পুরস্কার গ্রহণের সময়ের আগে সুস্থ করে তোলেন। আমি নিজে উপস্থিত থেকে এই সম্মানা গ্রহণ করতে চাই।



বিবার্তা : আপনার কণ্ঠেই তো বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম গান প্রচার হয়, তাই না?


ফেরদৌসী রহমান : যতোদূর মনে পড়ে, ঠিক তাই। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার ডিআইটি (এখন রাজউক) ভবনের ছোট্ট একটি অংশজুড়ে একটি টেলিভিশন কেন্দ্র তার গৌরবময় যাত্রা শুরু করেছিল। সেই ছোট্ট টেলিভিশন কেন্দ্রটিই আজকের ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’। শুরুতে এর নাম পাকিস্তান টেলিভিশন থাকলেও ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) নামকরণ হয়। সেই সময় বাংলাদেশ টেলিভিশন ছিল বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল। কলিম শরাফী সাহেব ছিলেন টেলিভিশনের জিএম। তখন মুস্তাফা মনোয়ারও ছিলেন। ‘ওই যে আকাশ নীল হলো আজ সে শুধু তোমার প্রেমে’ - আমার গাওয়া এ গানটিই ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত প্রথম গান। আধুনিক গানটি আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা, সুর করেছিলেন নিপুণ সরকার। অনুষ্ঠানটির ঘোষিকা ছিলেন হেনা কবীর। প্রযোজনা করেছিলেন এম মনিরুল আলম।



বিবার্তা : আপনার হাত ধরেই ‘এসো গান শিখি’র ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু। এর শুরুটা জানতে চাচ্ছিলাম..


ফেরদৌসী রহমান : বিটিভি উদ্বোধনের দু’দিন পর টেলিভিশনে আমার ডাক পড়ে। বলা হলো, একটা অনুষ্ঠান শুরু হবে, সেখানে বাচ্চাদের গান শেখাতে হবে। গান শেখানোয় খুব আপত্তি ছিল আমার। ততোদিনে আমি বেশ প্রতিষ্ঠিত এবং বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেলেও আমার মনে হচ্ছিল গানের ভুবনে নিজেই তো শিক্ষার্থী, অন্যদের শেখাবো কী! কিন্তু মোস্তফা মনোয়ার আর কলিম শরাফীর মতো দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বের অনুরোধ অগ্রাহ্য করতে পারিনি। অগত্যা রাজি হতেই হলো। টেলিভিশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো অনুষ্ঠান ‘এসো গান শিখি’। ১৯৬৪ সালের শিশুদের অনেকেই এখন ষাটোর্ধ প্রবীণ।


বিবার্তা : আপনার জন্ম তো পশ্চিমবঙ্গে..


ফেরদৌসী রহমান : আমার জন্ম ১৯৪১ সালের ২৮ জুন পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে। যেহেতু আমার বাবা এদেশের পল্লীগীতির সম্রাট ছিলেন, তাই সঙ্গীতের সঙ্গেই নিত্য ওঠাবসা ছিলো আমার। খুব ছোটবেলা থেকে সংগীতে ঢেলে ছিলাম মনপ্রাণ। পল্লীগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, আধুনিক এবং প্লে-ব্যাক - সব ধরনের গানেই কণ্ঠ দিয়েছি আমি। আমার গানে হাতেখড়ি হয় বাবার কাছে। পরবর্তীতে আমি ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান, নাজাকাত আলী খানের মতো নামজাদা ওস্তাদদের কাছে তালিম নিই।



বিবার্তা : প্রথম প্লেব্যাক করেন কোন চলচ্চিত্রে?


ফেরদৌসী রহমান : ১৯৬০ সালে ‘আসিয়া’ নামের চলচ্চিত্রে আমি প্রথম প্লে-ব্যাক করি এবং রবীন ঘোষের সাথে ‘রাজধানীর বুকে’ নামক চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছিলাম আমি। রবিন আজ নেই, তার কথা পথ চলতে গিয়ে খুব মনে পড়ে। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকটি ছবির মধ্যে ছিল শবনম-রহমান অভিনীত ‘হারানো দিন’র সুরকার ছিলেন রবিন ঘোষ। এই ছবিতে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আমার একটি জনপ্রিয় গান ছিলো ’আমি রূপনগরের রাজকন্যা’।


বিবার্তা : এখন পর্যন্ত কতোগুলো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন চলচ্চিত্রে?


ফেরদৌসী রহমান : চলচ্চিত্রে প্রায় ২৫০টি গান গেয়েছি আমি। বাংলা ছাড়াও উর্দু, ফারসী,আরবী, চীনা, জাপানী, রুশ, জার্মানসহ আরো বেশকিছু ভাষায় গান গেয়েছি আমি। ৩টি লং প্লে­সহ প্রায় ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড এবং ১৮ টিরও বেশি গানের অ্যালবাম বের হয়েছে আমার।


বিবার্তা/অভি/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com