শিশুদের খুঁজে পাওয়ার নতুন চেষ্টা গাজার বাবা-মায়েরা
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ২০:২৭
শিশুদের খুঁজে পাওয়ার নতুন চেষ্টা গাজার বাবা-মায়েরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যুদ্ধের ভয় আর অনিশ্চয়তার এমন চরম মুহূর্তে সন্তানদের চিন্তায় নতুন কৌশল নিতে বাধ্য হচ্ছেন গাজার বাবা-মায়েরা। যেকোনো সময় সন্তান হারিয়ে যেতে পারে, কিংবা বোমার আঘাতে আহত হয়ে হয়ত কোনো হাসপাতালে পড়ে থাকতে পারে, তখন যাতে খুঁজে পাওয়া যায়, সেজন্য তাদের শরীরে নাম লিখে রাখছেন বাবা-মায়েরা।


জনাকীর্ণ হয়ে ওঠা গাজার হাসপাতালগুলোতে এমন অনেক শিশুর দেখাও মিলছে।


গাজার আল-আকসা মার্টিয়ার্স হাসপাতালের মর্গে স্টিলের ট্রেতে তিনটি শিশুর মরদেহ রাখা। তাদের পায়ের দিক থেকে প্যান্ট ওপরের দিকে তুলে দেখা হচ্ছিল, কালো কালিতে কোনো নাম লেখা আছে কী না।


হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল রহমান আল মাসরি বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি ঘটনায় দেখেছি, বাবা-মায়েরা সন্তানদের পা কিংবা পেটে তাদের নাম লিখে রাখছে।


যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে এবং হয়ত তখন সন্তানদের শনাক্ত করা যাবে না, এমন শঙ্কায় ভুগছেন অভিভাবকরা।


এর মানে হচ্ছে, তারা ভাবছে, যে কোনো সময় তারা (হামলায়) আহত হবে নয়ত মারা যাবে।


এই হাসপাতালের যে কক্ষে মরদেহ গোসল করানো হয়, সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের পায়ে নাম লিখে রাখছেন, যাতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কিংবা হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের বিমান হামলার পর খুঁজে পাওয়া যায়। এটি নতুন একটি কৌশল, যা গাজায় সম্প্রতি শুরু হয়েছে।


“এরই মধ্যে অনেক শিশু নিখোঁজ হয়েছে, অনেক শিশু এখানে এসেছে, যাদের মাথার খুলি ভেঙ্গে গেছে…তাদের চেনাই মুশকিল। শুধু এমন লেখা (পায়ে নাম লেখা) থাকলেই সম্ভব।”


ইসরায়েলের বিমান হামলায় আহত বাবা-ছেলের চিকিৎসা চলছে গাজার আল-শিফা হাসপাতালে।


গাজায় বিমান হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল ‘পুরোপুরি অবরোধ’ আরোপ করায় ওষুধ, খাবার, পানি, জ্বালানিসহ জরুরি সব সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকরা কোনো ধরনের ব্যথানাশক ছাড়াই আহতদের অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার।


সরবরাহ কমতে থাকার অর্থ হচ্ছে, অস্ত্রোপচারে সঠিক মাত্রায় ব্যথানাশক ব্যবহার হচ্ছে না, সঠিক মাত্রায় মরফিন ব্যবহার হচ্ছে না, বলেন জেরুজালেমে এই গ্রুপের মিশন প্রধান লিও কান।


তিনি বলেন, আমাদের এখন মরফিন ছাড়াই অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুটি শিশুর ক্ষেত্রে এটি করতে হয়েছে। আমাদের কাছে আহত যারা আসছে, দুর্ভাগ্যবশত তাদের মধ্যে অনেক শিশু থাকছে।


আমি আমাদের একজন সার্জনের সাথে কথা বলেছি, যিনি ১০ বছর বয়সী একটি শিশুকে ব্যথানাশক ছাড়াই চিকিৎসা দিয়েছেন। শিশুটির শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।


বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি ওষুধ সরবরাহে বাধা দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই, বলেন লিও কান।


যে কেউ যে কোনো সময় মারা যেতে পারে, এমন শঙ্কা থেকে গাজার অভিভাবকরা সন্তানদের পায়ে-উরুতে নাম লিখে রাখছেন, এমন খবর তিনিও পেয়েছেন বলে জানান কান।


কান বলেন, তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, বাঁচা-মরা একসাথেই- এমন ভাবনায় অনেক পরিবারের সব সদস্য মিলে একটি কক্ষে দিন কাটাচ্ছে।


গাজায় এখন সবচেয়ে বেশি অভাব জ্বালানির। কারণ হাসপাতাল, পানির পাম্পগুলো চালাতে জ্বালানি ছাড়া উপায় নেই। এরই মধ্যে জ্বালানি সঙ্কট অনুভব করতে পারছেন চিকিৎসকরা।


গাজার আল-শিফা হাসপাতালে ঠাঁই নেই অবস্থা। ইসরায়েলের হামলায় আহত শিশুটির জায়গা হয়েছে চেয়ারে।


পানি লবণাক্ততা মুক্ত করতে প্ল্যান্টগুলোতে জ্বালানি জরুরি দরকার। জ্বালানি পাওয়া না গেলে বিশুদ্ধ পানিও পাওয়া যাবে না, বলেন লিও কান।


গাজার বাসিন্দারা ইতিমধ্যে অপরিশোধিত পানি পান করতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।


হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, সেখানে আল-শিফা হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের চিকিৎসক প্রধান ফুয়াদ আল-বুলবুল বলেছেন, জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে তার চিকিৎসাধীনে থাকা সব শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে।


ইসরায়েলের বিমান হামলায় আহত সন্তানদের নিয়ে গাজার আল-শিফা হাসপাতালের মেঝেতে বসে বিহ্বল এই নারী। ছবি রয়টার্স।


বিদ্যুৎ বন্ধ হলে এই ইউনিটে বিপর্যয় ঘটবে; ভেন্টিলেটরে থাকা এখানকার বেশিরভাগ শিশু মারা যাবে। কারণ একজন-দুইজনকে বাঁচাতে পারব, সবাইকে না।


তার বিভাগে ইনকিউবেটর রয়েছে ৪৫টি এবং এখানে অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।


ডা. আল-বুলবুল জানান, রোববারের মধ্যেই তার হাসপাতালে সারফ্যাকট্যান্ট ও ক্যাফেইন সাইট্রেট ফুরিয়ে গেছে। এ ধরনের জটিলতা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাধারণত এই দুটি উপাদান ব্যবহার করা হয়।


বেশিরভাগ শিশুর অবস্থাই জটিল এবং তার টিমের সদস্যরাও টানা ১৮ দিন ধরে কাজ করে ভয়ানক ক্লান্ত।


গাজার দক্ষিণাঞ্চলের আল নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, অক্সিজেনের ওপর নির্ভর অপরিণত শিশুরা মারা যাবে, যদি জরুরিভাবে সরবরাহ না পাওয়া যায়।


হাসপাতালটির নবজাতক বিভাগের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রধান ডা. হাতেম ইধাইর জানিয়েছেন, ভেন্টিলেটর, মনিটরের মতো জরুরি যন্ত্রগুলো চালানোর মতো জ্বালানি পাওয়া না গেলে ইউনিটে থাকা ১১ শিশুর একজনকেও বাঁচানো যাবে না।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com