বিশ্বব্যাপী করোনা টিকা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪, ১৩:৩০
বিশ্বব্যাপী করোনা টিকা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

চাহিদা না থাকায় বৈশ্বিকভাবে নিজেদের সব করোনা টিকা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিখ্যাত টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা।


৭ মে, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি জানিয়েছে, ‘করোনা ভাইরাস’ নামের যে ভাইরাসটির বিস্তার প্রতিরোধে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে ২০২০ সালের শেষ দিকে যে টিকা বাজারে এনেছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা, তা এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়, এই ভাইরাসটির যে-সব ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছিল সেগুলোও এখন আর প্রাণঘাতী নয়।


বর্তমানে বাজারে করোনার ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বৈশ্বিকভাবে টিকার আর সেভাবে চাহিদাও নেই। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা গ্রহণের কারণে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এমন একটি ঘটনায় সম্প্রতি ব্রিটেনের আদালতে ১০ কোটি পাউন্ড ক্ষতিপূরণের মামলা হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে। মামলার কার্যক্রম চলার মধ্যেই এই ঘোষণা দিলো কোম্পানিটি।


গত ফেব্রুয়ারিতে এক নথিতে এই টিকা নেওয়ার ফলে টিটিএস বা থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসিটোপেনিয়া সিনড্রোমের (রক্ত জমাট বাধা) শিকার হওয়ার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাজ্যে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হয়ে ২০২০ সালের টিকাদান কর্মসূচির শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।


মঙ্গলবারের বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, নিরপেক্ষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছাড়পত্র পাওয়ার পর এক বছরে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩০০ কোটি করোনা টিকার ডোজ ব্যবহার করা হয়েছে পৃথিবীজুড়ে। এসব টিকার ডোজ প্রাণ বাঁচিয়েছে বিশ্বের ৬৫ লাখেরও বেশি মানুষের।


এর আগে আদালতের নথিতে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাটি প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছিল যে, তাদের তৈরি করোনা-প্রতিরোধী টিকা বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তবে সেটা খুবই বিরল বলে উল্লেখ করা হয়। দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।


যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাক্সজেভরিয়া করোনা-প্রতিরোধী টিকার অনুমোদন দেওয়ার পর থেকেই তা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ গ্রহণ করেছে।


গত কয়েক মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর সামনে আসে। অনেকেরই রক্ত ​​জমাট বাঁধা এবং রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে টিটিএস বলা হয়।


গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে দায়ের করা আদালতের নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে যে তাদের তৈরি টিকা থেকে এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যা খুবই বিরল।


টিটিএস-এর কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং প্ল্যাটিলেট কমে যায়। যুক্তরাজ্যে এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এখন পর্যন্ত ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রিটিশ হাইকোর্টে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে।


কিন্তু অ্যাস্ট্রাজেনেকা জোর দিয়ে বলেছে যে, ভ্যাকসিন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আদালতের মামলার কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বলছে,এটা কাকতালীয় ঘটনা।


এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বিশ্বব্যাপী তাদের তৈরি করোনা-প্রতিরোধী টিকার অবদান নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। বিশ্বে করোনা মহামারি শেষ করার ক্ষেত্রে তাদের এই টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সংস্থাটির দাবি, করোনার প্রথম বছরেই ৬৫ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে তাদের তৈরি টিকা। এছাড়া বিশ্বব্যাপী তারা ৩০০ কোটি ডোজ সরবরাহ করেছে।


অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, করোনা-প্রতিরোধী একাধিক টিকা তৈরি হওয়ায় সর্বশেষ ভ্যাকসিনগুলো বেশ সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ফলে ভ্যাক্সজেভরিয়ার চাহিদা কমে গেছে, যা আর তৈরি বা সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই তারা ইউরোপের মধ্যে এই টিকা বাজারজাতের অনুমোদন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com