শিরোনাম
বিপ্লব ঘোষ রাহুলের উঠে আসার গল্প
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:৩৪
বিপ্লব ঘোষ রাহুলের উঠে আসার গল্প
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

বিপ্লব ঘোষ রাহুলের জন্ম বরিশালে। টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে। পরে ইউনিভার্সিটি অব হংকং থেকে মার্কেটিং সার্ভিস নিয়ে এমবিএ করেন। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি কাস্টমার ম্যানেজার হিসেবে তিন বছর চাকুরি করেন মোবাইল অপারেটর রবি অজিয়াটা লিমিটেডে।


২০১০ সালে চার বন্ধু মিলে ‘ড্রিম হল্ড লিমিটেড’ নামে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি শুরু করেন। ওই ব্যবসায় সফলতা না আসায় আবার প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি নেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসে (বেসিস)। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছেন কিছুদিন। তারপর আবার ‘সফট কল’ নামে কল সেন্টার কম্পানি শুরু করেন। এত কিছু করার পরেও শান্তি পাচ্ছিলেন না তিনি। নতুন ও ব্যতিক্রমী কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন মনে।


রবিবার বিকেলে রাজধনীর উত্তর বাড্ডায় ই-কুরিয়ারের প্রধান কার্যালয়ে এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিপ্লব ঘোষ রাহুল কথা বলেন বিবার্তা২৪ডটনেটের সাথে। কথা হয় ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে। খোলামেলাভাবে তিনি বলেন ব্যবসা জীবনের শুরু থেকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার বিষয়ে। বিবার্তার পাঠকদের সেই উদ্যোক্তার গল্প জানাচ্ছেন উজ্জ্বল এ গমেজ।



বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কাস্টমার সার্ভিসের তিন বছর পার্টটাইম চাকুরির অভিজ্ঞতা থেকেই সার্ভিস মার্কেটিং শুরু করেন বিপ্লব। অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন কল সেন্টার সার্ভিসের কাজ। পাশাপাশি অন্য সার্ভিস মার্কেটিং টুলসগুলো নিয়েও কাজ করতে থাকেন। ২০১২ সালে ই-কমার্স জনপ্রিয় হতে থাকলে অনলাইনে প্রযুক্তিনির্ভর কিছু করার কথা ভাবতে থাকেন। ২০১৩ সালে একটা কুরিয়ার সার্ভিস কোং এর সল্যুশন প্রজেক্টের কাজ পান। প্রায় ৭ মাস কাজ করার পর কোম্পানিটি চুক্তি বাতিল করে দেয়। যেহেতু এই প্রজেক্টে বড় অংকের টাকা ইনভেস্ট করা হয়, তাই সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই ই-কুরিয়ার প্রতিষ্ঠা করার। তিনি এ সেবাকে নিয়ে যেতে চাইলেন অনলাইনে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আট মাস পর ২০১৩ সালের অগস্টে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন। অত্যাধুনিক গ্রাহক পরিসেবাটির নাম দেন ই-কুরিয়ার (eCourier.com.bd)।


ই-কুরিয়ার হলো একটা অত্যাধুনিক গ্রাহক পরিসেবা। এটির যোগাযোগব্যবস্থায় রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নিজস্ব ওয়েবসাইট। গ্রাহকদের যেকোনো ধরনের জিজ্ঞাসা ও সেবা প্রদানের জন্য রয়েছে কলসেন্টার, ট্র্যাকিং (Tracking) পদ্ধতি, যার সাহায্যে গ্রাহক যে কোনো সময় তার পণ্যের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবে। এতে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় গ্রাহক সেবা, পণ্য প্যাকেজিং, সার্বক্ষণিক ইমেইল ও ফোনে যোগাযোগ সুবিধা এবং অ্যাপসের মাধ্যমে অর্ডার দেয়ার সুবিধা।


ই-কুরিয়ারের মাধ্যমে নির্বাচিত গ্রাহক ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীর অফিসিয়াল বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র, পার্সেল পৌঁছে দেবে। এর গ্রাহকসেবার বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, অ্যান্ড্রয়েট অ্যাপ্লিকেশন, নিজস্ব ওয়েবসাইট ও এসএমএস সুবিধা, যার মাধ্যমে গ্রাহক যেকোনো সময় তার পণ্যের অবস্থান জানতে পারবেন।



পাঁচ বছর আগেও দেশের গ্রুপ ও মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে কেনাবেচা বা সেবা নেয়ার বিষয়ে এতো সচেতন ছিল না। মিটিং, প্রেজেন্টেশন, প্রোপজাল পাঠানো, আইডিয়া শেয়ার করে নতুন উদ্যোগের ধারণাটির সাথে মানুষের পরিচয় করিয়ে দিতেই বেশ কিছুটা সময় চলে যায় বিপ্লবের। শুরুতে গ্রাহকদের বিষয়টাকে বুঝাতে অনেক কষ্ট হতো। যেহেতু ই-কুরিয়ারে গ্রাহকদের সেবাটি দেয়া হয় সাইকেলে করে, তাই কেউ কেউ বলতো, সাইকেল চালিয়ে আবার অনলাইন কুরিয়ার হয় কীভাবে?


আস্তে আস্তে সাড়া পেতে শুরু করেন বিপ্লব। শুরুতে হাজারো প্রতিবন্ধকতা থাকলেও থেমে থাকেননি এই উদ্যোক্তা। দ্বিগুণ উৎসাহে এগিয়ে যেতে পরামর্শ নিয়েছেন ফেসবুকে ‘চাকুরি খুঁজবো না চাকুরি দেবো’ গ্রুপের উদ্যোক্তা মুনির হাসানের। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা দেয়ার মাধ্যমেই শুরু করেন তিনি এই উদ্যোগ।


ই-কুরিয়ার দিনের দুটি সময় পণ্যের অর্ডার নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই গ্রাহকদের কাছে পণ্যটি পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে গ্রাহকদের জন্য ‘নেক্সট ডে ডেলিভারি’ সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আর গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পণ্য পৌঁছে দেবার জন্য ই-কুরিয়ারের রয়েছে ডোর টু ডোর (Door to door) সুবিধা। এখানে গ্রাহকদের জন্য ডেডিকেটেড কাস্টমার সার্ভিসের ব্যবস্থা রয়েছে।


প্রচারের জন্যে শুরুতে এসএমএস মার্কেটিং, কলসেন্টার টেলিমার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংকে গুরুত্ব দিয়েছেন বিপ্লব। এছাড়াও তিনি ওয়ান টু ওয়ান মার্কেটিং করেছেন। মার্চেন্টরাও ই-কুরিয়ারের মার্কেটিং করে দিয়েছে।


এই সেবার লক্ষ্য হলো, একটা পরিসেবামূলক আদর্শ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, যার প্রথম লক্ষ্য গ্রাহক প্রত্যাশা পূরণ, ই-কমার্স সাইটগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে নিজেদের পেশাদার ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলা এবং সবচেয়ে ভাল সেবা দেয়ার মাধ্যমে প্রতি বছর ৫০ ভাগ গ্রাহক বৃদ্ধি করা। সেই সাথে ই-কুরিয়ার পরিবেশবান্ধব ‍উপায়ে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের যুগোপযোগী সেবা দেয়া।



সেবাটির চ্যালেঞ্জে বিষয়ে বিপ্লবের ভাষ্য হলো, যেকোনো ব্যবসার জন্য ফাইনান্স সাপোর্ট একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরে রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, টিম ম্যানেজমেন্ট করা আরেকটা চ্যালেঞ্জ। একজন উদ্যোক্তা ২৪ ঘন্টার মধ্যে দিনে ২০ ঘন্টা সার্ভিস দিতে পারবে। এক্ষেত্রে একজন কর্মচারী তো ওই সার্ভিসটা দিতে পারবে না। প্রতিটি বিজনেসের একটা টার্গেট থাকে, সেটা পূরণ করতে না পারলে ভোক্তাদের জন্য অনেক সমস্যা হয়। এসব কাজের জন্য সঠিক রিসোর্স পার্সন নির্বাচনও একটা চ্যালেঞ্জ। তাই আমরা চেষ্টা করছি সঠিক রিসোর্স পার্সনকে সঠিক জায়গায় দেয়ার। আবার অনেক সময় এমন হয়, এখানে একজন রিসোর্স পার্সন চাকুরি করছেন, এর চেয়ে ভাল প্রতিষ্ঠানে বড় বেতনে সুযোগ পেলে তিনি চলে গেলেন। তাদের ধরে রাখাও একটা চ্যালেঞ্জ। এই বিষয়গুলোকে আমরা সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।


বর্তমানে ই-কুরিয়ার ব্যবসা প্রত্যাশার চেয়েও ভাল অবস্থানে আছে বলে মনে করেন এ উদ্যোক্তা। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, গ্রাহকদের ফিডব্যাকের ভিত্তিতেই ভালোটা মূল্যায়ন করি। বর্তমানে গ্রাহকদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া পাচ্ছি। তাই দিনদিন আগের চেয়ে ভালোর দিকে যাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহক হিসেবে পাচ্ছি নিয়মিত।


সরাদেশে দুই হাজার ৭ শ’রও বেশি ক্লায়েন্ট রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এই অবস্থানে আসতে বিপ্লবকে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। বর্তমানে শুধু ঢাকাতেই ৬ টি অফিস রয়েছে। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী ও সিলেটে ই-কুরিয়ারের শাখা অফিস রয়েছে। ঢাকাতেই ৮২ জন কর্মী কাজ করছে। পরিকল্পা রয়েছে, চলতি মাসে আরো চারটা জেলায় শাখা অফিস চালু করার। জেলাগুলো হলো, ফেণী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া ও ময়মনসিংহ।



বিপ্লব বলেন, ই-কুরিয়ার ব্যবসাটাকে চাইলে আরো সুন্দর করে সাজানো যায়। আমরা এখন সে পর্যায়ে চলে আসছি। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি তো ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক উদ্যোক্তা এই সেক্টরে কাজ করার জন্য আসছেন। মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিগুলো ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকছে। তারা দেখছে কম খরচে যে কোনো পণ্য বিক্রির জন্য এটা একটা সুন্দর চ্যানেল। তবে তারা কিন্তু বুঝেশুনে আসছে। হুট করে কেউ আসছে না। এর জন্যই এই ই-কমার্সের বৃদ্ধির গতিটা একটু স্লো।


তিনি বলেন, আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি একটু ভিন্নভাবে। আমাদের মেইন ফোকাসটা করতে চাই টেকনোলজির উপর। টেকনোলজি দিয়ে ই-কুরিয়ার ব্যবসাকে কীভাবে আরো গতিশীল করা যায়। এখানে মোবাইল অ্যাপসসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।


দেশের প্রতিটি মানুষকে ই-কুরিয়ারের সেবা দিতে চান বিপ্লব। যদিও কাজটা সহজ না। কারণ দেশের জনগণ এখানো অনলাইনে বেচাকেনায় অতটা আগ্রহী হয়ে ওঠেনি। এর পরেও আশার আলো দেখছেন উদ্যমী এই উদ্যোক্তা। দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তাই গ্রাহকদের সেবা দেয়ার বড় একটা প্ল্যাটফর্ম হলো ডেলিভারি সার্ভিস। আর এই সুযোগটি পাচ্ছে ই-কুরিয়ার। তাই তিনি পরিকল্পিভাবে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com