শিরোনাম
ব্লগিং করেই হাজার ডলার আয় করা যায়
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০১৬, ১৮:৪৫
ব্লগিং করেই হাজার ডলার আয় করা যায়
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

ব্লগিং একটা স্বাধীন পেশা। এখানে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করে ভালো উপার্জন এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব। বর্তমানে দেশের অনেক তরুণ-তরুণী এই পেশায় কাজ করছেন। দিনদিন একাজটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।


এমনই একজন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার জুয়েল রহমান।শৈশবে তার স্বপ্ন ছিল পাইলট হয়ে আকাশে ওড়ার।তাই গ্রামে এসএসসি পাস করে চলে আসেন ঢাকা শহরে। কিন্তু এই মহানগরীতে এসে বদলে যায় তার স্বপ্ন। এবার তিনি স্বপ্ন দেখতে থাকেন ব্লগার হওয়ার। ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করে বেছে নেন ব্লগিং ক্যারিয়ারকে।হয়ে যান সফল ব্লগার।বর্তমানে তিনি ব্লগিং করেই সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছেন।


সম্প্রতি বিবার্তা২৪.নেটের প্রতিবেদকের সাথে দীর্ঘ আলাপে বেরিয়ে আসে তাঁর ব্লগার হওয়ার নানা ঘটনা। সেই গল্প জানাচ্ছেন উজ্জ্বল এ গমেজ।


শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, এখন থেকে তিন বছর আগে ফ্রিল্যান্সিং শব্দটা প্রথম শুনতে পাই। এই বিষয়ে ঘাঁটাঘাটি শুরু করি। এক পর্যায়ে ওয়েব ডেভেলপিং শিখতে চেয়েও তা আর হয়ে ওঠেনি। কারণটা ছিল আমার এক বন্ধু। সে ব্লগিং সম্পর্কে আমাকে একটু ধারণা দেয়ার পর ব্লগিং করার ইচ্ছা জাগে মনে। পরে এলাকার এক ছোট ভাইয়ের কাছে ব্লগারডটকমে(blogger.com) কিভাবে ব্লগ শুরু করতে হয় তা কিছুটা শিখে নেই। শুরু করি গুগল সার্চিংডটগুগল (Google Searching. Google)। যখন ব্লগিং সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলাম পেয়ে গেলাম ব্লগিংয়ের রত্নভাণ্ডার। এর পর গুগলে আসক্ত হয়ে গেলাম। এখন আমি গুগল ও ইউটিউবকেই আমার বস হিসেবে মানি।


আলাপ প্রসঙ্গে জানা গেল, ইংরেজি Blog এর বাংলা প্রতিশব্দ ব্লগ, যা এক ধরণের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। ইংরেজি Blog শব্দটি Weblog এর সংক্ষিপ্ত রূপ। শব্দটি ব্যবহার করা হয় দশ বছর আগে ১৯৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর। শব্দটির স্রষ্টা মার্কিন নাগরিক জন বার্জার। এর দু’বছর পর ১৯৯৯ সালের এপ্রিল ও মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে পিটার মহোলজ নামে এক ব্যাক্তি Weblog শব্দটিকে ভেঙ্গে দুই ভাগ করেন- We Blog এর পরই বিশ্বব্যাপী ব্লগ জনপ্রিয় হতে শুরু করে। তবে মাঝামাঝি সময়ে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। তা হলো অনলাইনে দিনলিপি লেখার সুবিধা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘ওপেন ডায়েরি’, যা ছিল অনেকটা এখনকার ব্লগের মতোই। যারা ব্লগে পোস্ট দেয় তাদেরকে ব্লগার বলা হয়।


ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের মন্তব্য করতে পারেন। ব্লগিং জিনিসটাকে সংক্ষেপে বলা যায় বিভিন্ন ব্লগে বা ওয়েবসাইটে যা লেখালেখি হয় তাই হলো ব্লগিং।এ ছাড়া নিজের প্রাত্যহিক জীবনের কিছু ঘটনা বা একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করাকে ব্লগিং বলে।



ব্লগিং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হতে পারে। যেমন আপনার জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা একটি ডায়েরির মত সব কিছু গুছিয়ে রাখা এবং তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান সম্বন্ধে লেখা ইত্যাদি।


ব্লগ হচ্ছে বিশেষ ধরনের ওয়েবসাইট। অনেকে একে ব্যক্তিগত ডায়রি বলে থাকে। তবে সময়ের সাথে ব্লগিংয়ের ধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন ব্যক্তিগত ডায়রির পরিবর্তে ব্লগ একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে ওঠেছে। ওয়েবসাইট থেকে ব্লগের মূল পার্থক্য হল ওয়েবসাইট আপডেট করা হয় অনিয়মিতভাবে, অপরদিকে ব্লগ আপডেট করা হয় নিয়মিত। এমনকি কিছু কিছু ব্লগ প্রতি মিনিটে আপডেট হয়।


পরিশ্রম ছাড়া এই জগতে কোনো কিছুই অর্জন হয়নি। তেমনি কোনো ক্যারিয়ার গড়তে প্রথমে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। একটি ব্লগ দাঁড় করাতে শুরুর দিকে বেশি সময় দিতে হয়। ব্লগটি মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেলে প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা কাজ করলেই ভাল আয় আশা করা যায় বলে জানালেন ব্লগার জুয়েল।


একজন ব্লগারের প্রতি মাসে আয় কত হতে পারে জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, আমার প্রথম যে ব্লগটি শুরু করি সেখানে হোঁচট খাই অনভিজ্ঞতার কারণে। একটি পর্যায়ে ব্লগটি গুগল থেকে শাস্তি খেয়ে যায়। প্রথম ব্লগ হচ্ছে www.update29.com। এর পরে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নতুন আর একটি ব্লগ শুরু করি এবং সেই ব্লগটি থেকে মাসে ছয় হাজারের বেশি মার্কিন ডলার আয় হয়। আশা করি, আরও ভাল ফলাফল শিগগিরই চলে আসবে । www.update29.com ব্লগটিও আবার ভালভাবে দাঁড় করিয়ে ফেলব ইনশাআল্লাহ। অন্য ব্লগটি এখানে প্রকাশ করলাম না Google Adsense থাকার কারণে। আর ব্লগিং থেকে মাসে কত আয় করা যায় সেটা বলা মুশকিল। ব্লগে যত বেশি ভিজিটর আসবে, তত বেশি আয় হবে। তবে প্রতি মাসে ঠিকমতো পরিশ্রম করতে পারলে ৫০০০-১০,০০০ ডলারও আয় করা যায় । আমেরিকা ও ভারতের অনেক ব্লগাররা এ রকম আয় করছেন।


পেমেন্ট বিষয়ে ব্লগার জুয়েল বলেন, যারা ব্লগে Google Adsense নিয়ে কাজ করেন তারা পেমেন্টটা সহজেই ব্যাংকের ওয়ার ট্রান্সফারের (wire transfer) মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। আর যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate marketing) করেন তারা মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড বা পেপালের মাধ্যমে টাকা নিয়ে আসেন।



ব্লগিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে জানালেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। যদি একজন ছাত্র বা ছাত্রী ইংরেজিতে দক্ষ হন, তাহলে নিশ্চিত ব্লগিংয়ে ভাল করবেন। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ব্লগিং সম্পর্কে ধারণা দেয়া যেতে পারে। প্রতিবেশি দেশ ভারতের দিকে তাকালে দেখা যায়, হাজার হাজার তরুণ-তরুণীরা ব্লগিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। তারা ইংরেজিতে ভাল, তাই হাজার ডলার আয় করেন খুব সহজেই ।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্যারিয়ার হিসেবে ব্লগিংয়ের সম্ভাবনা কেমন? জবাবে জুয়েল বলেন, ব্লগিং বাংলাদেশ জন্য একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার। এখন এই সেক্টর এগিয়ে যাচ্ছে। যে কেউ চাইলে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেন। বর্তমানে শতশত তরুণ ব্লগিং করছেন এবং ভাল আয়ও করছেন। বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ব্লগিং একটি সময়োপযোগী ক্যারিয়ার।


উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেকার সমস্যা অনেক বেশি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও কম। ব্লগিংয়ে কাজ করার সুযোগ থাকার কারণে সারা বিশ্বের সকল জবগুলো এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। সেই সব কাজ করার মত করে নিজেদের যোগ্যতা তৈরি করে এসব জব করার সুযোগ নিতে হবে। আর অদূর ভবিষ্যতে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে এই সেক্টর যে বড় ভূমিকা রাখবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।


উন্নত দেশগুলোতে ব্লগিং নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্লগিং পরিচয়টা কিছুটা উপেক্ষিত। কেন এমন ধারণা, এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁর নিপাট উত্তর, বাংলাদেশে ব্লগিংয়ের সুফলগুলো ভোগ করা শুরু হয়েছে অল্প কিছুদিন ধরে। সুতরাং তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ঘরে বসেই যে অন্যদেশের কোনো কম্পানীতে চাকুরি করা সম্ভব, বিষয়টি অনেকের কাছেই এখনও অবিশ্বাস্য। আবার অনেকের এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণাই নেই। সেজন্যই ব্লগিং ক্যারিয়ারটি এখনও উপেক্ষিত। আমি মনে করি, ব্লগিং চমৎকার একটা পেশা। এটাকে স্বীকৃতি দেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। যেমন কেউ হাসপাতালে ডাক্তারি কাজ করলে বলা হয় ডাক্তার। এটা একটা পদবী। তেমনিভাবে ব্লগিং যে একটা সম্মানজনক পেশা, এর মাধ্যামে ঘরে বসে বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন করা য়ায় এরও একটা পদবী দেয়া দরকার।



বিশ্বের কোটি কোটি ব্লগের মধ্যে অনেকেরই স্বপ্ন থাকে নিজের ব্লগটিকে গুগল অ্যালেক্সায় (Alexa) এক লাখের নিচে নিয়ে আসার। অনেকের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়, আবার অনেকেরই হয় না। জুয়েলেরও ওই একই আশা ছিল, সেটিও তিনি পূরণ করতে পেরেছেন।


বাংলাদেশে ব্লগিং আরও পরিচিত এবং জনপ্রিয় করার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে? জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, ব্লগিংয়ের মূল ধারণা সম্পর্কে সবাইকে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, অনলাইন ও মুদ্রণ মাধ্যম পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে, সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে এ বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। যারা বর্তমানে ব্লগিং করছেন তারা এ ব্যাপরে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।


একজন ব্লগারের সাফল্যের মূলমন্ত্রটা বিষয়ে জুয়েল বলেন, ধৈর্য্, শেখার আগ্রহ, আত্মবিশ্বাস - এই তিনটি গুণ একজন ব্লগারের অবশ্যই থাকা দরকার। আমি এই ক্যারিয়ারে সফল হবোই - এই আত্মবিশ্বাসই একজন ব্লগারকে এগিয়ে নিয়ে যায় অনেক দূর। যে কোনো কাজ করার আগে পুরো ব্যাপারটি ধৈর্য্ ধরে জানুন এবং শিখুন। হাতে মোটামুটি একটা ভাল সময় রাখুন। লেগে থাকার মানসিকতা থাকতে হবে। ব্লগিং করে কেউই রাতারাতি সফল হয়নি। লেগে থাকলে যেকোন ক্ষেত্রেই সফল হওয়া যায় এই বিশ্বাস নিয়েই কাজ করতে হবে। তবে কাজ জানলে কাজ পাবেন। কেউ আগে পায়, কারো একটু দেরী হয়, এই যা পার্থক্য। ভালো মানের একজন ব্লগার হতে হলে যে স্কিলে কাজ করবেন তা ভালোভাবে শিখে বা প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে হাত দিতে হবে। আর ইংরেজি ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে। তবেই সফল হওয়া যাবে।


সবাই যেমন নিজ নিজ ক্যারিয়ারে সফল হতে চান, জুয়েলও তার ব্যতিক্রম না। তাঁর স্বপ্ন একজন সফল ও বিখ্যাত ব্লগার হওয়ার, আর এই পেশাটিকে সব সময় উপভোগ করার।


জুয়েল জানান, ভারতের একজন বরেণ্য ব্লগারকে খুব ভাল লাগে তার। ওনার মত বা তার চেয়েও একজন ভাল ব্লগার হতে চান তিনি। তার ইচ্ছে ব্লগিং লিখে একদিন আরো ভাল আয় করবেন। তখন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষজন তাকে এক নামে চিনবে, জানবে।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com