‘আগুনে সব শ্যাষ, এই শীতের রাতে থাকমু কই’
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০২:০৫
‘আগুনে সব শ্যাষ, এই শীতের রাতে থাকমু কই’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

লুৎফর রহমান ও তার স্ত্রী আসমা ১০ বছর ধরে বাস করেন রাজধানীর কড়াইল বস্তির একটি ঘরে। তাদের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। লুৎফর রিকশা চালান আর আসমা কাজ করেন গার্মেন্টসে। দুইজনের আয়ে এমনিতেই টানাটানিতে চলে তাদের জীবন। এর মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলের আগুনে তাদের ঘরবাড়ি সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কি করবেন দিশা পাচ্ছেন না। এমনকি রাতে থাকবেন কই, তাও জানেন না। এমন হৃদয়বিদারক গল্প কেবল লুৎফর দম্পতির নয়, কড়াইল বস্তিবাসীর অনেকের গল্প এটি।


লুৎফর রহমান জানান, বিকেলে আগুন লাগার সময় তিনি গুলশানে রিকশা চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই সেখানে শুনতে পান কড়াইল বস্তির বৌবাজারে আগুন লেগেছে। এ সময় তিনি দ্রুত বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাস্তা বন্ধ করায় আর যেতে পারেননি।


তিনি বলেন, ‘সঙ্গে মোবাইল নেই। আগুন লাগার পরে আর স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়নি। আরেকজনের মোবাইলে কল দিয়েছি কিন্তু মোবাইল বন্ধ। ঘরের জিনিসপত্র সব পুড়ে শেষ। এখানে দাঁড়িয়ে আছি স্ত্রী-সন্তান এদিকে আসলে খুঁজে বের করবো।’


রাব্বি কাজ করেন সিটি করপোরেশনে সড়ক মেরামতের। তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনসহ কড়াইল বস্তির নৌকাঘাটে থাকেন। আগুন লাগার সময় তিনি ছিলেন মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকায়। তার স্ত্রীও ছিলেন গার্মেন্টসে। কেউ ঘরে ছিলেন না। কিন্তু আগুনের খবরে বস্তিতে এসে দেখেন তাদের ঘর পুড়ে ছাই। জমানো ২০ হাজার টাকা ছিল, সেটাও পুড়ে গেছে।


রাব্বি বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে এসে স্ত্রীর দেখা পেলেও ঘরের কিছুই পাইনি। আগুনে আমার সব শ্যাষ। এই শীতের রাতে থাকমু কই।’


সরেজমিনে দেখা যায়, বস্তিবাসীর আহাজারিতে আশেপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে। এখনও কোনো হতাহতের খবর না এলেও আগুনে পোড়া অংশের প্রায় সবাই 'সবকিছু' পুড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।


বস্তির বাসিন্দা সুমন আহম্মেদ বলেন, ‘আগুনের সময় বাসার বাইরে ছিলাম। আগুনের খবর শুইনা দৌড়াইয়া আইসা দেখি সব শেষ।’


স্ত্রী ও দুই সন্তান নিরাপদে বাসা থেকে বের হতে পারলেও কিছুই সঙ্গে নিয়ে বের হতে পারেননি বলে জানান তিনি।


ফজলু নামে আরেকজন বলেন, আগুনে ৫ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। আগুন লাগা অংশে ‘কিছুই অবশিষ্ট নেই’।


বস্তির যেসব ঘরে এখনও আগুন লাগেনি কিন্তু আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব ঘর থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। কেউ মাথায় করে কেউ হাতে করে তাদের জিনিসপত্র বের করছেন।


আগুনে ঘর পুড়েছে বস্তির বাসিন্দা লাভলী বেগমের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার সব আগুনে পুড়ে শেষ। সাত বছর ধরে এই বস্তিতে আছি। অনেক কষ্টে তিল তিল করে জিনিসপত্র কিনেছিলাম। ঘরে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কিনেছি। মাসে মাসে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। এ আগুনে আমার সব শেষ হয়ে গেল।’


এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিদ্যুৎহীন রয়েছে কড়াইল বস্তি এলাকা। মোবাইল ফোনের আলো ও টর্চ লাইট জ্বা‌লি‌য়ে চলাচল কর‌ছেন স্থানীয়রা। ক্ষ‌তিগ্রস্ত কয়েকজন বাসিন্দাকে দেখা গেছে, যে যার যতটুকু মালামাল রক্ষা করতে পেরেছেন, অন্ধকার সড়ক ধরে তা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।


আগুনের কারণে ওয়ারল্যাস মো‌ড়ে আট‌কে দেওয়া হ‌চ্ছে যানবাহনগুলোকে। সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পু‌লি‌শের পাশাপা‌শি শিক্ষার্থী ও রেড ক্রিসে‌ন্টের স্বেচ্ছা‌সেবকরা কাজ করছেন। ঘটনাস্থলে দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছেন সেনাবা‌হিনীর সদস্যরাও।


দেখা গেছে, কড়াইল ঝিলে পাম্প ব‌সি‌য়ে পাইপ দি‌য়ে পা‌নি ছিটাচ্ছেন ফায়ার ফাইটাররা। পানি সরবরাহ করছে ওয়াসার গাড়িও।


উল্লেখ্য, ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে ঢাকার মহাখালী এলাকার কড়াইল বস্তি। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে সেখানে আগুন জ্বললেও পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫টা ২২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস, এরপর একে একে ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছেন, যানজটের কারণে প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সময় লেগেছে, এরপর সরু গলির কারণে গাড়িগুলো অনেকটা দূরে রেখেই দীর্ঘ পাইপ টেনে পানি ছিটাতে হচ্ছে।


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com