রাজশাহীতে সহকর্মীকে ধর্ষণ মামলায় কলেজর অধ্যক্ষ কারাগারে
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ২২:৪১
রাজশাহীতে সহকর্মীকে ধর্ষণ মামলায় কলেজর অধ্যক্ষ কারাগারে
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহী নগড়ীরহড়গ্রাম মডেল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ডঃমারুফ তার সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় রাজশাহীর একটি কলেজের অধ্যক্ষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শরনিম আক্তার এ আদেশ দেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


অভিযুক্ত অধ্যক্ষের নাম ড. মারুফ হোসেন। তিনি নগরীর হড়গ্রাম মডেল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ এবং কাশিয়াডাঙ্গা থানার ফুদকিপাড়া খিরশিন এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে।


জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২১ এপ্রিল হড়গ্রাম মডেল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ড. মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করেন একই কলেজের এক নারী প্রভাষক। মারুফ ওই নারী শিক্ষকের আপন মামাতো ভাই। নিকট আত্মীয় হওয়ায় ও চাকরির সুবাদে বাড়িতে এবং কর্মস্থলে তার সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।


মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট নারী প্রভাষকের বাড়িতে কেউ না থাকায় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ তাকে ধর্ষণ করেন এবং বিষয়টি কাউকে জানালে চাকরির সমস্যা হবে বলে হুমকি প্রদান করেন। এরপর বিয়ের প্রলোভনে প্রায় ৭ বছর ওই নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন ড. মারুফ। একপর্যায়ে ওই প্রভাষক ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ের কথা বললে অধ্যক্ষ মারুফ বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান এবং নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন।


এজহারে আরও বলা হয়, শুধু তাই নয়; কর্মস্থলে মিথ্যে অভিযোগ এনে নানারকম কৈফিয়ত তলব করতেন অধ্যক্ষ মারুফ। এছাড়া কলেজর সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়ে নানা রকম হয়রানি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী প্রভাষক তৎকালীন কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডিজি শিক্ষা, আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান সভাপতি, কারিগরি শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন দফতরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অধ্যক্ষ ড. মারুফ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সান্নিধ্যে থাকায় সেই অভিযোগগুলো আলোর মুখ দেখেনি। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন মারুফের বাবা আমজাদ হোসেন।


মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার এড়াতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মারুফ আত্মগোপনে চলে যান। পরে ২০২৩ সালের ৮ মে উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান তিনি। জামিনের মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির হয়ে পবিত্র হজে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালতা তা মঞ্জুর করেন। এরপর ২০২৩ সালের ৮ আগষ্ট মামলাটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসলে সেখানে বদলি জামিন নেন অধ্যক্ষ মারুফ হোসেন। এরপর চলতে থাকে নিয়মিত হাজিরা। সর্বশেষ তিনি মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে হাজির হন এবং জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে গত ৩০ এপ্রিল মারুফের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. শরিফুল ইসলাম।


এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল ইসলাম বলেন, আদালত মঙ্গলবার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। তবে আগামীতেও ন্যায় বিচার পাব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


এ বিষয়ে মামলার বাদী ওই নারী প্রভাষক বলেন, আদালতের আদেশে আমি সন্তুষ্ট। আদালত এ আসামির সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করবে বলে আমি আশাবাদী।


বিবার্তা/মোস্তাফিজুর/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com