কুষ্টিয়ায় খুনের ঘটনায় পুরুষ শূন্য গ্রাম, সুযোগে লুটপাট
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:২৫
কুষ্টিয়ায় খুনের ঘটনায় পুরুষ শূন্য গ্রাম, সুযোগে লুটপাট
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের বাগোয়ান কান্দির পাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বাঁশবাগানে হত্যা করা হয় সারফান সর্দারকে (৫০) । এ ঘটনার পর মন্ডল বংশের উপর নির্বিচারে হামলা, লুটপাট, মিথ্যা মামলা ও জীবন-জীবিকার ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ভয়াবহ সংকটে রয়েছেন তারা। পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম।


স্থানীয়রা জানান, তারা কৃষিনির্ভর নীরিহ পরিবার। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর সর্দার, বিশ্বাস ও মুন্সি বংশ একত্র হয়ে মন্ডল বংশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করেছে। তাদের পুরুষ, নারী ও শিশুদের বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না, ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, মাঠে চাষাবাদও এখন বন্ধ।


হত্যাকাণ্ডের পর একাধিক লুটপাট ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর সোহেল ও সাদ্দাম মন্ডলের বাড়ি লুটপাট ও গরু নিয়ে যাওয়া হয়, ১৭ সেপ্টেম্বর মিলন মন্ডলের মায়ের কাছ থেকে মরিচ কেড়ে নেওয়া, হাপি মন্ডলের পান বিক্রির টাকা ছিনতাই, মাহিন মন্ডলকে ক্ষেত থেকে বেগুন তোলায় বাধা ও জমি থেকে তাড়ানো হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর কামাল মন্ডলের জমির ঘাস কেটে নিয়ে যায় ও মারধর করে, ২৫ সেপ্টেম্বর রমজান মন্ডলের পান ভেঙে নেওয়া হয়, ১ অক্টোবর জানু, সামাজুল ও আকরাম মন্ডলের বাড়ি লুটপাট করা হয়, ২ অক্টোবর মকলেস মন্ডলের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়, ৩ অক্টোবর হাবু মন্ডলের বরজের পান ভাঙচুর, কহবত মন্ডলের ধান খেত থেকে সেচের স্যালো মেশিন চুরি করে নেয়া হয়। ওই দিনই আলম মন্ডলের দুইটা পান বরজ থেকে সব পান ভেঙে নেয়া হয়। এছাড়া আরও অসংখ্য হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।


মন্ডল বংশের মানুষরা এখন সকলে বাড়িছাড়া। কেউ বাড়িতে এলেই হামলার শিকার হচ্ছে এবং প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছে। কৃষক পরিবারগুলোর জীবন-জীবিকা ধ্বংস হয়ে গেছে। মেয়েদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, আর ছোট-বড় ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য লিখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।


এ বিষয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মন্ডল বংশের লোকজন বলছেন, থানাকে জানালেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। মন্ডল বংশের আত্মীয় সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টর শামীম মুসা অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকলে সোহেলের বাড়িতে হামলা বা হত্যাকাণ্ড ঘটতো না।


মন্ডল বংশের সাধারণ মানুষ দৌলতপুর সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করে তদন্ত, সেনা টহল, নিরাপত্তা, লুটপাট-হামলা-খুন ও মিথ্যা মামলার সত্য উদঘাটন এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়া তারা নিরাপদ হতে পারছেন না।


এ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সোলায়মান শেখ গণমাধ্যমকে জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হত্যার পর থেকে পুলিশ দীর্ঘদিন ঘটনাস্থলে অবস্থান করেছে। এখনো প্রতিদিন রাতে টহল দেওয়া হচ্ছে। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটত, তাহলে আমরা অবশ্যই জানতে পারতাম। তাছাড়া আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগও আসেনি। তারপরও আপনি বললেন আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।


বিবার্তা/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com