আজ শত্রুমুক্তির ৬ ডিসেম্বর
যশোরের মাটিতে সর্বপ্রথম উড়েছিল বিজয়ের পতাকা
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬
যশোরের মাটিতে সর্বপ্রথম উড়েছিল বিজয়ের পতাকা
যশোর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দিনটি হয়ে আছে অপরাজেয় গৌরবের প্রতীক হয়ে। এই দিন বিকেলে শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন জেলা হিসেবে। আর সেই মুহূর্তেই যশোর সেনানিবাস ও শহরের আকাশে প্রথমবারের মতো উত্তোলিত হয় বিজয়ী বাংলাদেশের লালসূর্য খচিত সবুজ পতাকা। যশোরের মুক্তি শুধু একটি জেলা শত্রুমুক্ত হওয়ার ঘটনা নয় এটি ছিল পশ্চিমাঞ্চলের সামরিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ার অন্যতম বড় মোড়। যে পতনের ধ্বনি পৌঁছে গিয়েছিল সরাসরি রাওয়ালপিন্ডির সামরিক সদর দপ্তর পর্যন্ত।


বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স–মুজিব বাহিনীর বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের উপ–অধিনায়ক রবিউল আলম স্মরণ করেন সেই রুদ্ধশ্বাস দিনগুলোর কথা। ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর সদর, চৌগাছা, সলুয়া ও কেশবপুর–রাজারহাট এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে চলে তীব্র যুদ্ধ। একই সময়ে সীমান্ত থেকে অগ্রসরমাণ ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের বিমান ও আর্টিলারি হামলায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি ৯ম ডিভিশন।


৬ ডিসেম্বর দুপুরের আগেই পাক সেনারা বুঝে যায়, যশোর আর ধরে রাখা সম্ভব নয়। লে. কর্নেল শামস তার ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে যশোর ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে খুলনার দিকে পালিয়ে যান। পিছনে পড়ে থাকে অব্যবহৃত গোলাবারুদ, ট্যাংকের খোল, অগণিত সামরিক রসদ। বিকালেই মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করলে নিশ্চিত হয় যশোরের শত্রুমুক্তির খবর। শহরের রাস্তায় রাস্তায় মুহূর্তেই শুরু হয় আনন্দমিছিল,কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, কেউ বিজয়ের ধ্বনিতে কাঁপিয়ে তুলছেন পুরোনো শহরটিকে।


যশোর মুক্তির পেছনে যে বড় শক্তি কাজ করেছে, তার অন্যতম ছিল চৌগাছার ঐতিহাসিক জগন্নাথপুরের যুদ্ধ। ২০ নভেম্বর ঈদের সকালে যখন গ্রামের মানুষ নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ২০-২৫টি যান নিয়ে গ্রামে ঢোকে পাকবাহিনী। নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ৩০ জনকে। তিনজনকে ধরে এনে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বর্বরতার রেশ না কাটতেই রাতে শুরু হয় ভয়াবহ যুদ্ধ। মুক্তি ও মিত্রবাহিনী চাড়ালের বাগানে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট পতনের পর পূর্বাঞ্চলের সেনাধ্যক্ষ নিয়াজি তার প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে লিখেছিলেন যশোরের বিপর্যয়ের ফলে পশ্চিমাঞ্চলের পতন প্রায় নিশ্চিত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিশ্রুত বিদেশি সাহায্য না এলে আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরই একমাত্র উপায়।


পেট্রাপোল–বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ব্যবহৃত শেভরোলেট গাড়িতে যশোরে আসেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ।


মঞ্চে ছিলেন জহির রায়হান, এমআর আকতার মুকুল, সংসদ সদস্য ফণীভূষণ মজুমদারসহ অসংখ্য বিশিষ্টজন। হাজারো মানুষ তখন দেখেছিল নতুন বাংলাদেশের প্রথম নেতৃত্বকে। অবস্থা অনুকূল না দেখে পাক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান খুলনায় অফিস সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর চলে শেষ লড়াই। শেষ পর্যন্ত ৬ ডিসেম্বর দুপুরেই পাকবাহিনী পালিয়ে যায় খুলনার দিকে।ফাঁকা ক্যান্টনমেন্টে মেসে স্বাধীনতার প্রথম জয়গান। বিজয়োল্লাশ ধ্বনিতে কেঁপে ওঠে শহর যেখানে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ে।


বিবার্তা/আবেদ/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com