
সন্তানের শিক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্যকোটা)- পুনর্বহাল করাসহ ৮ দফা দাবিতে দুই দিন অর্ধ-দিবস কর্মবিরতি পালনের পর এবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এই কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা।
কর্মবিরতির অংশ হিসেবে পরীক্ষা ও জরুরি সেবা ছাড়া অধিকাংশ বিভাগ ও দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এসময় প্রশাসনকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত সিদ্ধান্ত জানানোর আল্টিমেটাম দিয়েছেন তাঁরা। এসময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে পরবর্তী দিন থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি পালনের হুশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই আন্দোলনকে অযৌক্তিক দাবি করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত করার প্রতিবাদে পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা ১১টার দিকে উপাচার্য ভবনের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবিগুলো হলো- ক্যাম্পাসে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পর্যাপ্ত আবাসিকতার ব্যবস্থা করা পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন; শিক্ষকগনের জন্য ব্যক্তিগত চেম্বারের ব্যবস্থা ও গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধিকরণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের শিক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রদান কর্মকর্তা ও কর্মকর্চারীদের দাপ্তরিক কাজের পরিবেশ উন্নয়ন এবং ফ্যাসিবাদী, দুর্নীতিবাজ ও নিপীড়কদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা।
কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে রাবি অফিসার সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, অধিকার-প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা আদায় এগুলো বাংলাদেশের কোনাে বিচ্ছিন্ন অংশ নয়। বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ঢাকা,জাহাঙ্গীরনগর, সিলেট, চট্টগ্রাম সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পেয়ে থাকে, তাহলে আমরা বঞ্চিত হবাে কেন? এই জবাব প্রশাসনকেই দিতে হবে। যতক্ষণ না আমাদের অধিকার আদায় হবে আমরা ঘরে ফিরে যাবাে না। আমাদের অধিকার আদায় না হলে আমরা আরো কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবো।
রাবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রশাসনকে আগামীকাল বিকেল পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছি। এর মধ্যে যদি দাবি মেনে নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানায় তাহলে আমরা আন্দোলন স্থগিত করব। কিন্তু দাবি মানা না হলে পরবর্তী দিন আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করব।
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানের জন্য দাবিকৃত প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাকে পোষ্যকোটা এবং অযৌক্তিক দাবি উল্লেখ করে বিক্ষোভ সমাবেশে করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এই সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাবির সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্যকোটার কবর বহু আগে রচিত হয়েছে। অথচ এতোদিন পর এসে সেটিকে ইস্যু করে নতুন করে আন্দোলন শুরু করা হয়েছে।
আর এখানে জামায়াত, বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকরা এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আর এমন সময় এই আন্দোলন শুরু হলো, যখন আগামীকাল আমরা রাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করব। তাই এই মুহূর্তে পোষ্যকোটা পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টাকে আমরা ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করছি। তাদের এই কর্মসূচিকে আমরা রাকসু নির্বাচন বানচালের পায়তারা হিসেবে দেখছি। রাকসু বানচালের যেকোনো প্রক্রিয়া আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করব।
স্টুডেন্ট রাইটস্ আ্যসুসিয়েশন-এর সভাপতি ফাহির আমিন বলেন, তাঁরা বাংলাদেশকে বৈষম্যহীন কিন্তু কোটাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। তারা বাংলাদেশকে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে চায় না। আজকে যদি কোটা ভিত্তিক রাষ্ট্র বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দৃশ্যপট কেমন হতে পারে। ‘৪৭শে যারা দেশ ভাগে অংশ নিয়েছিল তাদের নাতি-নাতনিকে কোটা দিবেন,
একাত্তরের যারা যুদ্ধ করেছিল তাদের সন্তানদের কোটা দেবেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছিল তাদেরও কোটা দেবেন, এরপরে ২৪শের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের আহত ও নিহত পরিবারদের কোটা দেবেন,
এরপরে রয়েছে চাচা কোটা, মামা কোটা, দলীয় কোটা। এখন আপনি যদি এতো কোটা দিয়ে রাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্মকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেন, তাহলে মেধা ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মান করার জন্য যে আন্দোলন করেছিলাম, সেই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
বিবার্তা/মোস্তাফিজুর/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]