নেত্রকোণায় ইউএনওর লাঠি হাতে কিশোরকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ২০:২৬
নেত্রকোণায় ইউএনওর লাঠি হাতে কিশোরকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল
নেত্রকোণা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাতে লাঠি নিয়ে এক কিশোরকে মারধর করছেন এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।


ঘটনাটি গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে উপজেলার বানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে ঘটলেও সম্প্রতি ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউএনও রুয়েল সাংমার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন এক ব্যক্তি।


এ ছাড়া ৭ অগাস্ট রায়হান নামের এক যুবক ইউএনওর শাস্তি দাবি করে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন।


অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এরই মধ্যে ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় কার্যালয় পদক্ষেপ নিয়েছে।


স্থানীয় লোকজন ও অভিযোগপত্রের বরাতে জানা যায়, ২৪ মার্চ কোরবানির ঈদের আগে ইউনিয়ন কার্যালয়ে ভিজিএফের চাল বিতরণ চলছিল। একপর্যায়ে চাল নিতে আসা লোকজনের মধ্যে হুড়োহুড়ি সৃষ্টি হয়। অনিয়মের খবর পেয়ে ইউএনও রুয়েল সাংমা সেখানে যান। তখন ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে চাল নিতে আসা ১৭ বছরের ওই কিশোর ইউএনওর শরীরে পড়ে যান। পরে তাকে ইউএনও লাঠি দিয়ে মারধর করেন।


এ ঘটনায় ভাইরাল হওয়া ২০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভিড়ের মধ্যে ইউএনও রুয়েল সাংমা এক কিশোরকে মারধর করছেন। এ সময় সেখানে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়। কেউ কেউ ইউএনওকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। মারধরের মধ্যে একবার ইউএনওকে পড়ে যেতেও দেখা যায়।


পরে ওই কিশোরের চাচী মুচলেকার মাধ্যমে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ভয়ে দুর্জয় ও তার অসচ্ছল পরিবার ঘটনা চেপে যায়।


কিন্তু বিষয়টি ধীরে ধীরে এলাকায় জানাজানি হলে ওই দিনের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়া হলে ভাইরাল হয়।


পিটুনির শিকার কিশোর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “রমজান মাসে আমি ভিজিএফের চাল আনতে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে যাই। তখন লাইনে একটা বাঁশ ছিল। চাপের মধ্যে বাঁশটা খুলে দিছে। তখন ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। আমি ইউএনও স্যারের কাছে গিয়ে পড়ে যাই। তখন চড়-ধাপ্পড় দিছে।


“পরে ভিতরে নিয়ে গেছে। হাতে আর পিঠে লাঠি দিয়ে মারছে। তখন ইউএনও পায়ে ধরে মাফ চাইছি। তারপর সচিব স্যারের রুমে ইউএনও স্যার গেছে। পরে আমার চাচী জামিনদার হয়ে ছাড়াইয়া আনছে।”


দুর্জয়ের চাচী বলেন, তিনিও সেদিন চাল আনতে গিয়েছিলেন। তবে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা লাইনে চাল দিচ্ছিল। দুর্জয়কে ইউএনও মারধর করার পর তিনি গিয়ে ইউএনওর কাছে হাতজোর করে ক্ষমাও চান। তারপরও তাকে মেরেছে।


এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমার মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে কল করলেও তিনি ধরেননি।


জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনাটি মার্চ মাসের। ভিডিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম হচ্ছিল। তখন ইউএনও কাছে অভিযোগ দেয়। ইউএনও গিয়ে দেখেন, দুর্জয়, রায়হান এমন কিছু ছেলে চাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে তিনি নিজের টেম্পার ধরে রাখতে পারেননি। অবশ্যই তিনি অন্যায় করেছেন, তিনি লাঠি ধরতে পারেন না। এটা ঠিক হয়নি।


“এটার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। দুর্জয়ের ক্ষমাপ্রার্থনার মুচলেকা দিয়েছে। সেটা আছে। মার্চ মাসের ঘটনা অগাস্ট মাসে এসে কথা হচ্ছে। এখন কেন? সেটা তো মর্চ মাসেই হতে পারত।”


জেলা প্রশাসক বলেন, “ওই ইউনিয়নের সচিবকে বিভিন্ন অভিযোগে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে ওই সচিব পুরনো জিনিসটা সামনে নিয়ে আসে, গত সপ্তাহে তারা ইউএনওর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলাই করেছে। রায়হান নামের একজনকে দিয়ে। সাক্ষী করা হয়েছে দুর্জয়কে।


“যাই হোক, তারপরও আমরা এটাকে (ইউএনওর মারধর) সমর্থন করছি না। এ ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ইউএনও অন্যায় করেছেন। কিন্তু ওখানে অনিয়মও (চাল বিতরণে) হয়েছে। সব মিলিয়ে বিষয়টি ভাল হয়নি। বিভাগীয় কমিশনারে কার্যালয় থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছে।”


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com