লামায় জমি জবর দখলের অভিযোগ
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩, ১৬:৪৬
লামায় জমি জবর দখলের অভিযোগ
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

২০০৪ সাল থেকে হেডম্যান রিপোর্ট মূলে সাঙ্গু মৌজার পাঁচ একর পাহাড়ি জমি ফলজ বনজ বাগান করে ভোগ করে আসছি। কেউ এ জমি জবর দখল করলে আমি আত্মহত্যা করবো। কারণ এ জমি ছাড়া আমার আর কোন জমি নেই। এ জমিই আমার পরিবারের সদস্যদের উপার্জনের একমাত্র উৎস। আর কোন বিকল্প নেই।


১২ জুন, সোমবার সকালে কান্না জড়িত কণ্ঠে স্থানীয় সাংবাদিকদের কথাগুলো বললেন, পাহাড়ি রামগতি পাড়ার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বাসিন্দা মৃত নবী চন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে বৃদ্ধ হরি চন্দ্র ত্রিপুরা (৬০)।


তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ গিয়াস উদ্দিনের বাবা আবদুর রাজ্জাকের নামীয় রাবার প্লট থেকে আমার জমির দূরত্ব প্রায় ৩৫০ ফুট। আমার বাগানে কোনো রাবার গাছও নেই। অথচ গিয়াস উদ্দিন আমার ভোগদখলীয় জমি তাদের দাবি করে অযথা হয়রানি করে আসছেন।


এদিকে প্রতিপক্ষ দ্বারা আরেক ভুক্তভোগী ক্যচিং মুরুং বলেন, ১১২নং হোল্ডিং মূলে ৫ একর জমি আবাদ করে বসতঘর সহ বাগান করে দীর্ঘ বছর ধরে ভোগ করে আসছি। কিন্তু গিয়াস উদ্দিন গং এ জমিও তাদের দাবি করে বিভিন্ন সময় মামলা হামলা নির্যাতন করছেন। এ জমি জবর দখল করলে পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।


তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের দিকে এ জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে হেডম্যান, ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়। কিন্তু মীমাংসিত বিষয়টিকে উপেক্ষা করে আদালতে মামলা দিয়ে পুনরায় আমাদেরকে হয়রানি শুরু করেছেন প্রতিপক্ষ গিয়াস উদ্দিন গং।


তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন ও তার ভাই ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন মামুন জানান, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাঙ্গু মৌজার ৭২৭ নং দাগের রাবার হোল্ডিং নং ৮ মূলে তাদের বাবা আবদুর রাজ্জাকের নামে ২৫ একর রাবার প্লট রয়েছে। কয়েক বছর আগে বাবা আবদুর রাজ্জাক মারা যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং মুরুং সহ অন্যরা বিভিন্ন সময় রাবার প্লটে ঢুকে গাছের চারা রোপণ করে প্রায় ১০ একর জমি জবর দখলে নেন।


পরে এ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে গত মে মাসে স্থানীয় হেডম্যান, মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রতিপক্ষরা পুনরায় রাবার প্লটে ঢুকে জঙ্গল পরিষ্কার করে গাছ লাগানোর চেষ্টা করেন। এ কারণে প্রতিপক্ষের ৫ জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করা হয়, যেন তারা রাবার প্লটে যেতে না পারে। এমনকি কারো জামি দখল করেনি বা দখলের চেষ্টাও করছে না বলে জানান তারা।


অভিযোগে জানা যায়, ২০০৪ সালে হরি চন্দ্র ত্রিপুরা হেডম্যান রিপোর্ট মূলে দুই একর প্রথম শ্রেণি ও তিন একর দ্বিতীয় শ্রেণির জমি আবাদ করে খামার ঘর সহ বিভিন্ন ফলজ বনজ গাছের বাগান করে ভোগ করে আসছেন। একই ভাবে পাশের ক্যাচিং মুরুং ১১২ নং হোর্ল্ডি মূলে তিন একর তৃতীয় ও দুই একর দ্বিতীয় শ্রেণির জমি আবাদ করে বসতঘর ও বিভিন্ন ফলজ বনজ বাগান করে ভোগ করছেন। পাশে বগাইছড়ি গ্রামের আবদুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তির নামে ২৫ একর রাবার প্লট রয়েছে।


আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর ২৫ একর রাবার প্লটের কাগজ দেখিয়ে ৩৫ একর জমি দখল করে আছে তার ওয়ারিশরা। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে অতর্কিতভাবে ৯-১০ জন শ্রমিক লাগিয়ে হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং মুরুং জমির প্রায় ৩০০ কলা গাছ সহ বিভিন্ন গাছের চারা কেটে দেন আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন মামুন।


এ ঘটনায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও ভুক্তভোগীরা কোনো সুরাহা পায়নি। একপর্যায়ে গত মে মাসে স্থানীয় হেডম্যান, কারবারি, ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি মীমাংসা হয়। কিন্তু মীমাংসিত বিষয়টিকে উপেক্ষা করে কিছুদিন যেতে না যেতেই শুধু মাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে গত ২৪ জুন ইউপি সদস্য হোসাইন মামুনের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলাতে ক্যাচিং মুরুং, থাংবুই মুরুং, বলি চন্দ্র ত্রিপুরা, হরিচন্দ্র ত্রিপুরা ও তার ছেলে এনজিও কর্মী চন্দ্রমনি ত্রিপুরাকে বিবাদী করা হয়।


এ বিষয়ে মামলার বিবাদী চন্দ্র মনি ত্রিপুরা বলেন, জমি আমার বাবার। আমার সাথে কারো কোন বিরোধ নেই। আমি একজন এনজিও কর্মী। অথচ আমাকেও মামলায় আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে।


এদিকে বিরোধ মীমাংসা করে দেয়ার পরও গিয়াস উদ্দিন গং পুনরায় হরি চন্দ্র ত্রিপুরা ও ক্যচিং মুরুং এর জমি দখলের চেষ্টা সহ মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলে জানান সাঙ্গু মৌজা হেডম্যান চম্পাট মুরুং।


এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হোসাইন চৌধুরী জানায়, আমার জানা মতে ১৯৮৬ সাল থেকে গিয়াস উদ্দিনরা প্লটের জমিতে রাবার বাগান করে দখলে আছেন। গত কয়েক বছর আগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও গিয়াস উদ্দিনদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় হেডম্যান, ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় পরিমাপ চিহ্নিত করে যার যার জমি তাকে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এখন আর জমি নিয়ে বিরোধ থাকার কথা না।


বিবার্তা/আরমান/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com