কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ছয় দিনে পাঁচ হত্যাকাণ্ড!
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ১৫:৩১
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ছয় দিনে পাঁচ হত্যাকাণ্ড!
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রতিদিনই ঘটছে হত্যাকান্ড। উদ্ধার হচ্ছে লাশ। গত ৬ দিনে দৌলতপুরে ৫ খুনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে দৌলতপুরের বাতাসে এখন লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে পরিবেশও হয়ে উঠেছে ভারী। প্রশাসনের নজরদারি ও তৎপরতা বাড়লেও স্বস্থি মিলছেনা দৌলতপুরবাসীর। দিন কাটছে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা নিয়ে। জনমনে ছড়িয়েছে আতঙ্ক।


২ মে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকির মোল্লা (৪৫) নামে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর শাহাপুর গ্রামে হত্যাকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির মোল্লা শাহাপুর গ্রামের আরব আলীর ছেলে।


পুলিশ বলছে তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধের ১৩টি মামলা ছিল। একই এলাকার আবু মন্ডলের কৃষি জমি জবর দখল করে রাখার অভিযোগ ছিল জাকির মোল্লার বিরুদ্ধে। আবু মন্ডল অনেক দেন দরবার করেও ওই জমি দখলমুক্ত করতে পারেননি। এবার ওই জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন জাকির মোল্লা। মঙ্গলবার সকালে জাকির মোল্লা ওই ক্ষেতে গেলে আবু মন্ডলের লোকজন তার ওপর হামলা চালিয়ে ধারালো হাসুয়া দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।


এ ঘটনায় জাকির মন্ডলের লোকজন প্রতিপক্ষের চারটি বাড়িতে আগুন জ্বালিয় দিলে ফায়ার সার্ভিস দল ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


অপরদিকে একইদিন সন্ধ্যায় দৌলতপুরের পদ্মারচর থেকে মারুফ হোসেন (৩৮) নামে এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচরের নীচে পদ্মা নদী থেকে ওই যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবক দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চককৃষ্ণপুর গ্রামের হাজী আসালত মন্ডলের ছেলে।


গত ২৪ এপ্রিল থেকে মারুফ নিখোঁজ ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে পদ্মার বালুচরে খেলতে গিয়ে স্থানীয় শিশুরা ওই যুবকের পুঁতে রাখা হাত ও মাথার অংশ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসীকে জানায়। শিয়াল লাশটির সন্ধান পেয়ে খুড়লে লাশের হাত ও মাথার অংশ বের হয়ে আসে। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করলে পরিবারের লোকজন পোশাক ও মাথা দেখে নিশ্চিত হয় তা মারুফ হোসেনের লাশ।


মারুফ হোসেনকে অপহরন করে হত্যা শেষে পদ্মার বালুচরে পুঁতে রাখা হয়েছে বলে পরিবারের দাবি। এঘটনায় দৌলতপুর থানা পুলিশ চকদৌলতপুর গ্রামের আজমত আলীর ছেলে সাগর (২৭) কে গ্রেফতার করার পর ৩ মে, বুধবার আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনে রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


এছাড়াও গত ২৪ এপ্রিলে উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে নুর সালাম (৩০) নামে এক মানষিক প্রতিবন্ধীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সে একই এলাকার শুকুর মন্ডলের ছেলে। ওইদিন ভোরে প্রতিবন্ধী নুর সালামকে কে বা কারা গলা কেটে গুরুতর আহত করে সোনাইকুন্ডি উত্তরপাড়া জামিয়াতুল মাদ্রাসার পাশের রাস্তায় ফেলে রাখে। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে ৩০ এপ্রিল, রবিবার দিবাগত রাত ২.৩৫টায় তিনি মারা যান।


এ ঘটনায় ২৬ এপ্রিল নুর সালামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত একই এলাকার আবুল বাসারের ছেলে মাসুম রানাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।


এরআগে চিলমারীর চরে রাস্তার জন্য মাত্র এক শতাংশ জমি নিয়ে শিকদার ও খা পক্ষ বনাম মন্ডল পক্ষের মধ্যে প্রায় দুইমাস ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের জের ধরে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে শিকদার ও খা পক্ষের লোকজন সংগবদ্ধ ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্বিত হয়ে মন্ডল পক্ষের লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় তারা পেট্রোল ঢেলে বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক লুটপাট চালায়। হামলায় ৬ জন আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধসহ ১৬ জন আহত হয়। আহতদের কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অগ্নিদগ্ধদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার দুপুরে চিলমারী উত্তরপাড়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন গেদার ছেলে আক্তার মন্ডল (৩৭) ও মৃত নবীর মন্ডলের ছেলে দিনু মন্ডল (৭০) মারা যান।


এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে এখনও মুমূর্ষু অবস্থায় লাইফ সার্পোটে রয়েছেন আরো ২জন। আগুনে ইকবাল মন্ডল, মোজাম্মেল মন্ডল, জহুরুল মন্ডল ও রানা মন্ডলের বাড়ি পুড়ে ভষ্মিভূত করা হয়। এসময় হামলকারীরা ওইসব বাড়ি থেকে গরু, ছাগল, ঘরের আসবাবপত্র ও সম্পদ লুট করে নিয়ে যায় এবং কেটে ফেলে ফলদ ও বনজ বৃক্ষ।


খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ঘটনায় মন্ডল পক্ষের মোজাম্মেল মন্ডল বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে দৌলতপুর থানায় হত্যার চেষ্টা ও বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধারায় ৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ ১২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন যার নং-৭০।


মামলার সূত্র ধরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ও র‍্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের অভিযানিক দল শুক্রবার রাতে চিলমারীর চরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার ১৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করে। পরদিন আসামীরা জামিনে ছাড়া পেলে এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।


হত্যাকান্ড ও লাশ উদ্ধারের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধসহ বিভিন্ন কারণে যেসকল ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং হত্যাকান্ড ও লাশ উদ্ধার হয়েছে সেসব ঘটনায় দৌলতপুর থানায় পৃথক মামলা হয়েছে। আসামীও গ্রেফতার হয়েছে। বাঁকী আসামীদের গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


তবে দৌলতপুরবাসীর দাবী আর কোন পরিবার যেনস্বজন, সন্তান বা অভিভাবক হারানা হয়। সেজন্য প্রয়োজন সকলের আন্তরিক প্রয়াশ,এমনটাই মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।


বিবার্তা/শরিফুল/তুহিন/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com