চসিকে মশক নিধন ব্যয়
দুদক বলছে দরপত্র ছাড়াই, সচিব বলছে দরপত্রের মাধ্যমেই কেনা!
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৪১
দুদক বলছে দরপত্র ছাড়াই, সচিব বলছে দরপত্রের মাধ্যমেই কেনা!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

প্রতি বছরে লাখ লাখ টাকা খরচ হলেও মশা থেকে নগরবাসীর রেহাই হয়নি। গতবছর নগরজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪৪৫ জন। আর প্রাণহানি হয়েছে ৪১ জনের। চলতি বছরেও মারা গেছেন তিনজন। গত পাঁচ বছরে মশা মারতে চসিকের খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।


চসিক বলছে, সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ অংকে বড় মনে হলেও পাঁচ বছরে তা অনেক কম। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের এক বছরের মশক নিধন ব্যয় এর চেয়েও বেশি। এ খাতে বাজেট অপ্রতুল। যদিও গত পাঁচ বছরে এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পাঁচ ভাগের এক ভাগও খরচ করতে পারেনি সংস্থাটি। বাজেটের অর্থ ব্যয় করতে না পারার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে লোকবল সংকট।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ওষুধ ছিটালে মশক নিধন হবে না। মশক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে কার্যকর ওষুধের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। একইসঙ্গে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে সকালে ওষুধ (লার্ভিসাইডিং) ছিটানোতে জোর দিতে হবে। আর বিকেলে ফগিং (উড়ন্ত মশা মারার ওষুধ) করতে হবে।


চসিকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি অর্থবছরে মশক নিধন খাতে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। গত পাঁচ বছরে মশক নিধন খাতে চসিকের ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৮ টাকা। এরমধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ১৯ লাখ ৩৪ হাজার ১৯০ টাকা। এর পরের অর্থবছরে এই খাতে খরচ হয় ১ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৪৪ লাখ ১৪ হাজার ১৫২ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে খরচ হয় ৮৬ লাখ ৩৫৬ টাকা। সবশেষ চলতি অর্থবছরে (গত জুন থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) খরচ হয়েছে ১২ লাখ টাকা।


তবে গতবছর ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি গবেষকদল চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর, আগ্রাবাদ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডবলমুরিং এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকাকে ডেঙ্গু প্রার্দুভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে।


এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য আরেকটি গবেষণায় উঠে আসে নগরের ৩৩ স্থানে এডিস, ৩৯ স্থানে এনোফিলিস ও ২২ স্থানে এডিস ও এনোফিলিস দুটো মশা পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৮ স্থানে এডিস ও ১২ স্থানে এনোফিলিস পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে ১৫ স্থানে শতভাগ এডিস ও দুই স্থানে শতভাগ এনোফিলিস পাওয়া গেছে। গবেষণাটি এক বছর ধরে চলে এবং নগরের ৯৯টি স্থানের মধ্যে ৫৭টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে গবেষণা করে গবেষকরা।


দীর্ঘদিন নিস্ক্রিয় থাকার পর পুনরায় সচল হচ্ছে চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশকনিধন শাখা। পরিচ্ছন্নতা বিভাগের অধীনে ম্যালেরিয়া ও মশকনিধন শাখা থাকলেও দীর্ঘ ১৮ বছর কোনো কার্যক্রম ছিল না। সম্প্রতি এই শাখার অধীনে একজন ম্যালেরিয়া ও মশকনিধন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে সংস্থাটি। এখন থেকে চট্টগ্রামের মশক নিধনে এই শাখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’নামে এডাল্টিসাইড এবং ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’ নামে লার্ভা ধ্বংসকারী লার্ভিসাইড ও ‘মাসকুবার’ নামে এডাল্টিসাইডসহ তিন ধরনের কীটনাশক নিয়মিত ব্যবহার করে চসিক।


এ বিষয়ে চসিকের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, ‘৩ কোটি টাকা বলতে অনেক বেশি শোনালেও পাঁচ বছরে সেটা কিন্তু কম। আমরা এখনো বলবো আমাদের মশক নিধনের ওষুধ ও লোকবলের ঘাটতি আছে। কার্যকর ওষুধ বলে আমরা বারবার যেটাকে ব্যবহার করছি সেটার রেজাল্ট কিন্তু সেভাবে পাচ্ছিনা। এটাই বাস্তবতা। আরও বেশি কার্যকর ওষুধের সন্ধান যদি পাই তাহলে সেসব ব্যবহার করবো। তবে এ খাতে আমাদের বরাদ্দ অত্যন্ত অপ্রতুল। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সেটা এক বছরে খরচ করে সেটা আমাদের পাঁচ বছরেও হয়না। সে হিসেবে আমরা পর্যাপ্ত মশার ওষুধ ছিটাতে পারছি তা বলবো না। তবে আমরা মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি।’


অভিযোগ রয়েছে, দরপত্র ছাড়াই একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুরেফিরে বারবার মশার ওষুধ কিনেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তিনদিন আগের একটি অভিযানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মশা মারার ওষুধ কেনায় অনিয়মের প্রমাণও পায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।
 
সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ও মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, 'যেসব ওষুধ কেনার বিষয়ে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, তার অধিকাংশ আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে কেনা হয়েছিল। আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছিল। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে আমিও বিষয়টি খেয়াল করেছি। তারপরও জরুরি ভিত্তিতে এক বছরের প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে ক্রয়পরিকল্পনা করা হয়। এরপর দরপত্রের মাধ্যমেই তা কেনা হচ্ছে।'


বিবার্তা/জাহেদ/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com