শিরোনাম
ডিমের সাত-সতেরো
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৫৬
ডিমের সাত-সতেরো
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যখন কেউ ‘ডিম’শব্দটি উচ্চারণ করেন, তখন তাঁর মনে সাদা কিংবা হালকা মেটে রঙের প্রায় গোলাকার একটি বস্তুর দৃশ্যচিত্রই ফুটে ওঠে। কিন্তু আমরা কি জানি এই ডিমের ইতিবৃত্ত, ঠিক কবে জল থেকে ডাঙায় উঠে এলো ডিম? বা ডিমের রং কি সব সময়ই সাদা কিংবা মেটে রঙের হয়? অথবা শুধুই গোলাকার আকৃতির?


ডিমের বিবর্তন: সাধারণত যে প্রাণীগুলো ডাঙায় ডিম পাড়ে, তাদের ডিম জলে যারা ডিম পাড়ে তার তুলনায় ভিন্ন হয়। ডাঙায় বাস করা প্রাণীদের ডিমের এ ইতিহাস প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন বছরের প্রাচীন, সেই কার্বন যুগের। সে সময় টিকটিকির মতো ছোট সরীসৃপ প্রাণীদের এ ধরনের ডিম পাড়তে দেখা যেত। শক্ত খোসাযুক্ত এ ডিমের খোসায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঝিল্লি আছে, যার মাধ্যমে ডিমের ভেতরে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বের হতে পারে। এ ধরনের ডিম ডাঙায় রাখলেও শুকিয়ে যায় না, তাই প্রাণীরা তাদের শুকনো স্থানেই রাখে। শক্ত খোসাযুক্ত ডিম আবার দুই ধরনের হয়। একটি, যারা ডিম পাড়ে কিন্তু স্তন্যপায়ী, অন্যটি সরীসৃপ ও পাখির ডিম। পাখি সম্ভবত এক ধরনের মাংসাশী ডাইনোসরের বির্তনের ফল।



অদ্ভুত আকৃতি: কেউ যদি আপনাকে গোলাকার কোনো জিনিস দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে, বলুন তো, জিনিসটি কিসের মতো গোল? আপনি হয়তো বলবেন, ডিমাকৃতির গোল। কিন্তু ডিম কি শুধু একটি নির্দিষ্ট আকৃতিরই হয়? উত্তর যদি হয়, না! যদি বলি না, ডিম আরো গোলাকার কিংবা সুচালোও হতে পারে, তবে নিশ্চয়ই আপনার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে! তবে তা হাঁস কিংবা মুরগির ডিম নয়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডিমের আকৃতি-প্রকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়। যেমন উড়িয়া আলগের কথাই ধরা যাক না কেন। এর আকৃতি অনেকটা নাশপাতি আকারের। এই পাখি সাধারণত সমুদ্রের তীরবর্তী পাহাড়ের ঢালু খাঁজে বাসা বাঁধে। আর এ পাখির ডিমের এই অস্বাভাবিক আকারই একে সুরক্ষা দেয়।


রং-বেরঙের ডিম: মানুষের চোখে ডিমকে সাদা দেখায়। ডিমের ওপরের আবরণটি ক্যালসিয়াম কার্বনেটের তৈরি বলেই খালি চোখে আমরা ডিমকে সাদা দেখি। কিন্তু কিছু কিছু ডিম আবার বেগুনি রঙেরও হয়। তা মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। পাখি কিন্তু ঠিকই সেই বেগুনি রং দেখতে পারে। অনেক পাখির ডিমের খোসার রঙে বেশ বৈচিত্র্য দেখা যায়। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি দেশে এ প্রকার ক্ষুদ্র ডানাওয়ালা গায়ক পাখি দেখা যায়, যার ডিমের রং উজ্জ্বল নীল রঙের। দুটি রঞ্জকজাতীয় পদার্থ ডিমের এ বহু রঙের জন্য দায়ী। এর মধ্যে বিলিভারডিনস, যা নীল-সবুজ রং এবং প্রটোপরফিরিনস নামক রঞ্জক হলুদ, লাল এবং বাদামি রং তৈরিতে ভূমিকা রাখে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ডিমের মধ্যে ছোপ ছোপ দাগ কিংবা লাইনটানা দেখা যায়। এ দাগগুলো শিকারি থেকে ডিমগুলো রক্ষা করে। উদাহরণস্বরূপ উত্তর-পূর্ব আমেরিকার উপকূলীয় এলাকায় একটি ছোট বাদামি রঙের পাখি পাইপিং প্লভারের কথা ধরা যাক। এ পাখিগুলো বালিতে বাসা করে। এ পাখি যখন ডিম পাড়ে, তখন এর ডিমের খোসাতেও বালুর মতো দাগ দেখা যায়, যাতে ডিমটি বালুর সঙ্গে একেবারে মিশে যায়।



অবিশ্বাস্য আকার: ডিমের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো বিলুপ্তপ্রায় উটপাখির ডিম। এর আকৃতি একটি আমেরিকান ফুটবলের সমান। প্রায় ১১ ইঞ্চি বা ২৮ সেন্টিমিটার। এ পাখিগুলো নিজেই প্রায় ১০ ফুট লম্বা। বিলুপ্তির আগে মাদাগাস্কার অঞ্চলে এদের আবাস ছিল। সম্ভবত ১৮ শতকে ওই অঞ্চলে আসা নাবিকরা তাঁদের ক্ষুধা মেটাতে গিয়ে পাখিগুলোর বেঁচে থাকাকে হুমকির মুখে ফেলেন।বিপরীত দিকে হামিংবার্ডের ডিম পাখির ডিমের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতি। এর ওজন পেপার আটকানোর একটি ক্লিপের সমান।


মোটা-পাতলা খোসা: অধিকাংশ ডিমের খোসা এত পাতলা যে এর ভেতরে থাকা শাবক নিজে নিজেই বের হয়ে আসতে পারে। কিন্তু তা আবার ভেতরে বাড়তে থাকা ভ্রূণের ওজন রক্ষা করার পক্ষে যথেষ্ট পুরু এবং শাবকের বাবা-মা যখন তাতে তা দেয়, তখনো সেটি ভেঙে যায় না। কোনো কোনো পাখির ডিমের খোসা আবার অতিরিক্ত পুরু। সাধারণত নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের যে পাখিগুলো উড়তে পারে না, যেমন—উটপাখি বা পেঙ্গুইন তাদের ডিমের খোসা খুবই পুরু হয়। সবুজ রঙের এ ডিমগুলোর খোসা প্রায় এক ইঞ্চি বা ০.৬ সেন্টিমিটার পুরু। এগুলো দেখতে একটি বড় আকারের অ্যাভোকাডো ফলের মতো।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com