শিরোনাম
দেশে দেশে বড়দিন উদযাপনের রীতিনীতি
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:২৬
দেশে দেশে বড়দিন উদযাপনের রীতিনীতি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন একটি পবিত্র ও উৎসবের দিন। বড়দিন মানেই অনেক অনেক আনন্দ। সবাই মিলে হৈচৈ করে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, সান্তাক্লজের কাছ থেকে দারুণ দারুণ সব উপহার পাওয়া, গির্জার কীর্তন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া আর নতুন পোশাক পরে ছোটাছুটি করা ইত্যাদি নানা আয়োজন হয় বড়দিনকে ঘিরে। বড়দিনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকেই। রাত বারোটার দিকে গির্জাগুলোতে শুরু হয় প্রার্থনা। পৃথিবীর একেক দেশে বড়দিন পালিত হয় একেকভাবে ।


বাংলাদেশ: আমেরিকারও অনেক আগেই আমাদের দেশে বড়দিনের উৎসব পালন শুরু হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতে আসার সূত্রে সোয়া দু’শ’ বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে বড়দিন ছুটির দিন হিসেবে উদযাপিত হয়।১৬ শতকে পর্তুগীজরা এদেশে খ্রিস্টধর্ম নিয়ে আসে। বাংলাদেশে তথা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম চার্চটি তৈরি হয় ১৫৯৯ সালে পুরনো যশোরের কালিগঞ্জের কাছে সুন্দরবন এলাকায়। ভারতীয় উপমহাদেশে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা জব চার্নকই প্রথম বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে উদযাপন করেন। ১৬৬৮ সালে হিজলি যাবার পথে সুতানুটি গ্রামে বড়দিন উৎসব পালনের জন্য তিনি যাত্রাবিরতি করেন। এই অঞ্চলে ইংরেজদের সেই প্রথম বড়দিন পালন। বাংলাদেশে খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বড়দিন পালন হয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে। সাজানো হয় ক্রিসমাস, পরা হয় নতুন পোশাক আর সেই সাথে খাওয়াদাওয়া তো আছেই!


ভারত: ভারতের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ও বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে বড়দিন পালন করে থাকে। এ দিন বাংলাদেশের মতো ভারতেও সরকারি ছুটি থাকে। অন্যান্য দেশের খ্রীষ্টানরা ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে ঘর সাজালেও ভারতের গ্রামের খ্রিস্টানরা আমগাছ বা কলাগাছ দিয়ে তাদের ঘর সাজায়। দক্ষিণ ভারতে জানালা বা ছাদের ওপর জ্বালানো হয় ছোট ছোট মাটির বাতি। তবে শহরের খ্রীষ্টানরা পাশ্চাত্যের মতোই তাদের অনুষ্ঠান পালন করে।


ইতালি: ইতালিতে বড়দিনে উৎসব শুরু হয়ে যায় ১ ডিসেম্বর থেকেই। তারা বড়দিনকে বলে নভেনা। অন্যদের মতো তারাও ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে ঘর সাজায়। যিশুর জন্ম মুহূর্তের ঘটনা ফুটিয়ে তুলতে মা মেরি, জোসেফ, যিশু, একটি গাধা ও একটি হাঁসের ক্ষুদ্র মডেল তৈরি করা হয়। একে বলা হয় প্রিসেপে। ছোট বাচ্চারা রাখালদের পোশাক পরে, পাইপ বাজিয়ে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বড়দিনের গান গায় ও ছড়া আবৃত্তি করে। এক বলে ক্রিসমাস ক্যারল।



আর্জেন্টিনা: আর্জেন্টিনায় বড়দিনে সবাই পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটায়। তারাও ক্রিসমাস ট্রি, উপহার ও সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করে থাকে। বাড়ি সাজাতে তারা সাদা ও লাল রঙের কাগজ ব্যবহার করে। এ দিন অনেকেই দলবেঁধে পিকনিক করে বা বারবিকিউয়ের আয়োজন করে থাকে। বড়দিনে তারা মাংস, সেদ্ধ ডিম, রসুন ও মসলা দিয়ে বানানো ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘নিনোস এনভুয়েটা’ খেয়ে থাকে।


স্কটল্যান্ড: ১৬ শতক থেকে স্কটল্যান্ডে বড়দিন উদযাপন শুরু হয়। এখানে বড়দিন পালিত হয় অন্য দেশের চেয়ে কিছুটা ভিন্নভাবে। খ্রিস্টধর্মের আগে এখানে বড়দিনের বদলে পালন করা হতো প্যাগান উৎসব। পরবর্তীতে সেটাই বড়দিন হিসেবে পালন করা হয়। এখানেও ক্রিসমাস ট্রি, বারবিকিউ, উপহার আদান-প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে বড়দিন পালন করা হয়। এছাড়া প্রিয়জনদের দাওয়াত দেয়া হয় ক্রিসমাস কার্ড দিয়ে। করা হয় বিশেষ আলোকসজ্জা। ক্রিসমাসে আলোকসজ্জার জন্য স্কটল্যান্ড বিখ্যাত।


চীন: বড়দিন উপলক্ষে চীনারা কাগজ দিয়ে বানানো শিকল, ফুল ও বাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজায়। চীনে ক্রিসমাস ট্রিকে বলা হয় আলোর গাছ। বড়দিনে বাচ্চারা পরে নতুন পোশাক। তারা আশা করে এদিন ‘ডান চি লাও’ রেন (চীনাদের সান্তা) তাদের উপহার দেবেন।


অস্ট্রেলিয়া: বড়দিনে অস্ট্রেলিয়রা ঐতিহ্যবাহী খাবার ছাড়াও টার্কি ডিনার খেয়ে থাকে। এছাড়া বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ এক ধরনের পুডিং তৈরি করা হয়। এর মধ্যে থাকে সোনার টুকরো। সবাই মিলে সেই পুডিং খাবার সময় যার ভাগ্যে সোনার টুকরো পড়ে তাকে সৌভাগ্যবান বলে ধরা হয়।


বেলজিয়াম: বেলজিয়ামে ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ‘সিন্টারক্লজ বা সেইন্ট নিকোলাস’ নামের একটি অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়। এটি বড়দিন বা ক্রিসমাস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের অনুষ্ঠান। সান্তাক্লজকে বেলজিয়ামে বলা হয় ‘কেরস্টম্যান’ বা ‘লি পেরে নোয়েল’।


ব্রাজিল: ব্রাজিলে সান্তাক্লজকে ডাকা হয় ‘পাপাই নোয়েল’ বলে। ব্রাজিলে যারা একটু বেশি ধনী তারা বড়দিনে খাবারের তালিকায় মুরগি, টার্কিসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও চকোলেট আর কনডেন্সড মিল্কের মিশ্রণে তৈরি বিশেষ ধরনের মিষ্টিও থাকে। এর নাম ‘ব্রিগেডেইরো’।


ফ্রান্স: ফ্রান্সে বড়দিনকে বলা হয় 'নোয়েল' আর সান্তাক্লজকে বলা হয় ‘পেরি নোয়েল’! ফ্রান্সে লাল রঙের রিবন মুড়িয়ে তার সঙ্গে সাদা মোমবাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। ফ্রান্সের সবাই ক্রিসমাসের রাতের খাবারটি পরিবারের সঙ্গেই খেয়ে থাকে।


নিউজিল্যান্ড: নিউজিল্যান্ডে বড়দিনের শুরুটি হয় ক্রিসমাস ট্রির নিচে রাখা উপহারের প্যাকেট খোলা দিয়ে। এরপর বড়দিনের দুপুরের খাবার পরিবারের সবাই একসঙ্গে খায়। টার্কি আর মুরগির মাংস দিয়েই চলে খাওয়ার পর্ব। এরপর শুরু হয় চা পানের আসর। আর রাতে আপনজনদের নিয়ে চলে বারবিকিউ পার্টি।


রাশিয়া: পুরো পৃথিবীতে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করা হলেও রাশিয়ায় বড়দিন পালিত হয় ৭ জানুয়ারি। এর কারণ হলো রাশিয়ায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুরনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়ে থাকে। তবে কেউ চাইলে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করতে পারে। তবে সবাই ৭ জানুয়ারিতেই বড়দিন পালন করে থাকে। মূলত রাশিয়ায় বড়দিনের চেয়ে নববর্ষকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে।


সুইডেন: সুইডেনে বড়দিন আয়োজনের অন্যতম দিন ক্রিসমাস ইভ। বড়দিনে সুইডেনবাসীরা একে অপরকে উপহার দিয়ে আর বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়েই উদযাপন করে থাকে। বড়দিনের সকালে অর্থাত্‍ ২৫ ডিসেম্বর সবাই চার্চে মিলিত হয়।


আমেরিকা: ডিসেম্বরের আগেই আমেরিকায় বড়দিনের উৎসবের ছোঁয়া লেগে যায়। আমেরিকায় বড়দিনের আগের চারটি সপ্তাহকে তুলনামূলক বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এ চার সপ্তাহ জুড়েই চলে বড়দিনের প্রস্তুতি। ঘর সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি, মোমবাতি ও আলোকসজ্জা দিয়ে। একজন আরেকজনকে শুভেচ্ছা জানায় উপহার প্রদানের মধ্য দিয়ে।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com