
আমরা সবাই হাসতে ভালোবাসি শুধু যাদের সারা বছর দাঁতে ব্যথা থাকে তারা একটু কম ভালোবাসে হয়ত। হাসি ঈশ্বরের এক বিশেষ দান। হাসির মাধ্যমে খুব সহজেই অন্যের মন জয় করা যায়। আবার হাসির মাধ্যমেই আপনি কারো শত্রু হয়ে উঠতে পারেন। অর্থাৎ আপনি যদি কারো কঠিন বিপদে হাসেন। উইলিয়াম জেমস বলেছেন, ‘আমরা সুখি বলে হাসি না, বরং হাসি বলে সুখি।’
অনেকেই বলেন, লোকটা হাসতে হাসতে মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় হাসি দেয়া পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজ। মৃত্যু পথযাত্রীর হাসি যারা দেখেন তাদের জীবনে এটা থাকে তাদের দেখা অনেক গুলো স্মরণীয় ঘটনার একটা। এদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ একবার এমন অনুভূতির সামনে পড়েছিলেন। তিনি এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় ওয়েটিং রুমে পড়ে থাকতে দেখে ভীষণ ভয় পান। তার ভয়ের কারণ ছিল, মৃত ব্যক্তির মুখে কোণায় মৃদু হাসি। একথা আমরা তার জীবনী গ্রন্থে পাই।
কিছু মানুষের হাসি দেখলে আমরা আনন্দে অভিভূত না হয়ে পারি না, আবার কিছু মানুষের হাসি দেখলে মনে হয় কেউ একজন আমাদের শরীরে এসিড ঢেলে দিল।
কিছু মানুষকে মানুষ মনে রাখে হাসির কারণে, কিছু মানুষের হাসি অন্য মানুষের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। একজনের হাসিতে ভেসে ওঠে অন্য একজনের মুখ।
মানুষের চেহারার সম্পূর্ণ সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় যদি তার চেহারায় হাসি না থাকে।
মানুষ যখন যখন বোকা হয়ে যায় তখনি তার পাশের মানুষটি তার বোকামি দেখে হাসে। কিছু মানুষকে আমরা বোকা বানাই নিজেরা হাসার জন্য। তবে, অনেক সম্পর্ক নষ্ট হয় অন্যকে বোকা বানানোর জন্য। তাই, ক্ষণিকের আনন্দের জন্য প্রিয় মানুষকে বোকা বানিয়ে হাসার কোন মানে হয় না।
এলবার্ট হাবার্ড এর মতে, ‘প্রত্যেক মানুষই দৈনিক অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য নেহাত বোকা হয়ে যায়’। অর্থাৎ আপনার কিছু বোকামি অন্যের হাসির কারণ হয়।
হাসি নিয়ে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়ত আপনি খেয়াল করেন নি যে – আপনি একসঙ্গে হাসতে গিয়ে ভ্রুকুঞ্চিত করতে পারবেন না।
আমার মতে, আমরা প্রথম কোন বিষয় নিয়ে যেভাবে হাসি পরবর্তীতে একই বিষয় নিয়ে সেভাবে হাসি না। হয়ত, পরবর্তীতে আমরা ভাবতে থাকি, এই বিষয়ে কেন আমি এত হাসলাম।
অর্থাৎ, হাসি সম্পূর্ণ প্রকৃতির দান। কিছু মানুষ চাইলেও হাসতে পারেন না। তারা রোবট টাইপের মানুষ। তাদের থেকে দূরে থাকা ভালো। কেননা, একজন রোবট টাইপের লোক যতক্ষণ আপনার পাশে থাকবে আপনাকে রোবট বানিয়ে রাখবে আর একজন হাস্যরসিক লোক আপনাকে হাসতে বাধ্য করবে আর হাসতে শিখাবে।
প্রকৃতিগতভাবে একজন মেয়ে একজন ছেলের থেকে বেশি হাসে। আমার ধারণা, একজন কল্পনাবিলাসী মানুষ সাধারণ মানুষ থেকে বেশি প্রান খুলে হাসতে পারে।
আপনি যদি আপনার কথা দিয়ে অন্য কোন মানুষকে হাসাতে পারেন তাহলে বুঝবেন অন্যের হৃদয়ে আপনি একটু হলেও জায়গা করতে পেরেছেন।
গিভাইল এর মতে, ‘মানুষ একমাত্র সৃষ্টি যাকে বিধাতা হাসার ক্ষমতা দিয়েছেন।’
আপনার হাসি হওয়া চাই সবার চোখের সুন্দর অংশ। আপনি যদি বিনা কারণেই ফে ফে করে হাসেন তাহলে সবাই আপনাকে বোকা ছাড়া আর কিছুই ভাবার সুযোগ পাবে না।
জন ওজেল এ বিষয়ে একটা দারুন কথা বলেছেন, ‘যে বুঝে সুঝে সবার শেষে হাসে, তার হাসির একটা যথার্থ অর্থ আছে।’
তাই বলে বেশি বুঝতে গিয়ে আপনি যেন আবার হাসি না হারিয়ে ফেলেন এই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
উচ্চস্বরে হাসি খোলা মনের পরিচায়ক। তবে, সব জায়গায় উচ্চস্বরে হাসাটা বোকামি। হাসি সব সময় মৃদু হওয়াই সুন্দর। কেউ যদি প্রশ্ন করে পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর হাসি কার? আপনি হয়ত আমার সাথে একমত হবেন, যে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসি হল– মায়ের মুখের হাসি।
মানুষকে যেমন বিধাতা হাসার ক্ষমতা দিয়েছেন, তেমনি মানুষের হাসি বুঝার ক্ষমতাও দিয়েছেন। অর্থাৎ কোনটা মন থেকে আসা হাসি আর কোনটা বিদ্রুপের হাসি তা একজন জ্ঞানী মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারেন।
মানুষ কোন শারীরিক আঘাতে যতটা না কষ্ট পায় তার চাইতে বেশি মানুষিক কষ্ট পায় মানুষের বিদ্রুপের হাসিতে।
সবচেয়ে জটিল বিষয় হল নারীর হাসি। নারীর হাসির প্রসঙ্গ আসলে প্রথমে যে নাম মনে আসে তা হল মনালিসার রহস্যময়ী হাসির কথা।আমাদের কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নারীর হাসি নিয়ে বলেছেন, ‘পুরুষ জাতিকে পক্ষপাতি বিধাতা বিনা কৌতুকে হাসিবার ক্ষমতা দেন নাই কিন্তু মেয়েরা যে হাসে কি জন্য দেবা না জানন্তি কুতো মনুষ্যাঃ।’ কবি গুরু আরো বলেছেন, ‘নারী হাস্যে পৃথিবীতে যত প্রকার অনর্থপাত করে, তাহার মধ্যে বুদ্ধিমানের বুদ্ধিভ্রংশ একটি।’
হাসি নিয়ে অনেক কথা হল, এবার হাসি নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দিয়ে লেখা শেষ করছি:
হাসি আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হাসলে শরীরের ইমিউন (Immune) কার্য ক্ষমতা বেড়ে যায়। রক্তে এড্রেনালিনের পরিমান হ্রাস পায়। ফলে, সর্দি, কাশি, জ্বর বা ছোট খাট রোগ আক্রান্ত করার সুযোগ পায় না। অনেক রোগ নিজে নিজেই সেড়ে যায়। হাসি ব্লাড প্রেশার লো করে। বিরক্তিতে ভ্রু কুচকাতে আমাদের ৪৩ টি পেশিকে পরিশ্রম করতে হয় আর মুচকি হাসতে লাগে মাত্র ১৭টি।
বই পড়ে ও হাস্যরস উপভোগ করা যায়। কিছু বই হাস্যরসে ভরপুর তার মাঝে– শিবরামের রচনাবলি, জোরামের থ্রি ম্যান ইন এ বোট (ত্রিরত্নের নৌবিহার) এছাড়াও ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, পরশুরাম, ভিলহেলস বুশ (জার্মান), সুকুমার রায়ের লেখাও পড়তে পারেন।
মানুষের আসল হাসি মনে। আপনার মনকে প্রফুল্ল করার প্রধান হাতিয়ার হাসি। তাই, মন খুলে হাসুন, তবে অভিনয় করবেন না। তাহলে, আপনি হাসির আনন্দ থেকে দূরে সরে যাবেন।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]