শিরোনাম
ভিয়েতনামের জঙ্গলে সত্যিকারের টারজান!
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০১৬, ১৮:৩৫
ভিয়েতনামের জঙ্গলে সত্যিকারের টারজান!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

তার পরনে গাছের ছাল ও পাতার পোশাক। তাকে দেখলে সুইডিশ অভিনেতা আলেকজান্ডার স্কারসগারদ-এর চাইতে আলাদা কিছু মনে হবে না। আলেকজান্ডার স্কারসগারদ নিউ টারজান মুভিতে অভিনয় করে অসংখ্য মানুষের মন জয় করেছিলেন।


এখানে যার কথা বলা হচ্ছে তিনি কোনো অভিনেতা নন, বরং সত্যিকারের টারজান। তার আছে অনেক অতিমানবিক ক্ষমতা। আছে গাছের ওপর বাড়ি, নিষ্ক্রিয় বোমার টুকরা-টাকরা দিয়ে তৈরি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং আপনার কল্পনার চাইতেও দ্রুত গতিতে বাদুড় ধরার ক্ষমতা।


এই মানুষটির নাম হো ভন লাং। গত ৪০ বছর ধরে তিনি ভিয়েতনামের জঙ্গলে বসবাস করছেন। এখন তাকে বাধ্য করা হচ্ছে সভ্যজগতে বসবাস করতে। কিন্তু তাতে জঙ্গলের জীবনের প্রতি তার আকর্ষণ একটুও কমেনি।


১৯৭২ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে লাং-এর পিতা হো ভন থানহ সভ্য দুনিয়া ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গেলে পিতার সঙ্গে পুত্রেরও জঙ্গলবাস শুরু হয়। এই দীর্ঘ সময় তারা কুয়াং নগাই প্রদেশের তেই ত্রা জেলার দুর্গম অরণ্যে কাটিয়েছেন।


লাং-এর পিতা ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। হানাদার মার্কিন বিমানের বোমাহামলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিহত হলে তিনি দুই পুত্রকে নিয়ে জঙ্গলে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।


জঙ্গলে গিয়ে তারা কাঠের বাড়ি বানিয়ে নেন। স্থানীয় নদীর পানি পান করতেন আর হেন কিছু নেই যা তারা খেতেন না। যেমন, নানা ধরনের ফলমূল, মধু এবং বানর, সাপ, টিকটিকি ও ব্যাঙের মাংস ইত্যাদি।


এভাবেই কেটে যাচ্ছিল ল্যাং ও তার ভাইয়ের জঙ্গলজীবন। ২০১৩ সালে এসে তারা স্থানীয় লোকজনের নজরে পড়ে যায়। ওই লোকজনই কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। কর্তৃপক্ষ তাদের বাধ্য করে সভ্য জীবনে ফিরে আসতে।


লাং ও তার পরিবারকে শনাক্তকারী আলভারো সেরেজো জানান, লাং-এর পিতা প্রবল সভ্যজগৎভীতিতে ভুগছেন। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন না যে, ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এই দীর্ঘ সময় দূর থেকে কোনো মানুষ দেখতে পেলেই তারা আরো দূরে পালিয়ে যেতেন।


দীর্ঘ বনবাসকালে কীভাবে বেঁচেছিলেন, তা স্বচক্ষে দেখতে তাকে উদ্ধারকারী সেরেজো তাকে নিয়ে পাঁচ দিনের জন্য ফের জঙ্গলে যান। এই পাঁচ দিনের কার্যক্রম নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি প্রামাণ্যচিত্র। তাতে ফুটে উঠেছে কী অদ্ভুত দক্ষতায় গহীন বনে বাস করেছেন ল্যাং। ইঁদুর-বাদুড় ধরা ও খাওয়ায় অতিশয় সিদ্ধহস্ত ল্যাং। ইঁদুরের মাথা তার প্রিয় খাদ্য।


এসব ছেড়ে এসে কিছুই ভালো লাগে না ল্যাং-এর। সে ভিয়েতনামী ভাষা বোঝে না, সূর্য চেনে কিন্তু সময় কী তা বোঝে না। বিদ্যুৎ দেখেও তার বিস্ময় কাটতে চায় না।


সভ্যজগতে আসার আগে নারীসঙ্গ কী তা শোনেইনি ল্যাং। পিতাও কোনোদিন এ বিষয়ে তাকে কিছু শেখাননি। সেরেজো বলেন, অবাক কাণ্ড হলো, এখন সে কোনটা নারী আর কোনটা পুরুষ চিনতে পারে, কিন্তু নারী ও পুরুষের মধ্যে যে মৌলিক কিছু পার্থক্য আছে তা বুঝতে পারে না।


লাং-এর ভাই ত্রি বলে, ল্যাং-এর শরীরটা শুধু বয়স্ক মানুষের, আসলে ও একটা শিশু। সারা জীবন জঙ্গলে কাটিয়েছে তো, তাই ওর ব্রেনটা শিশুর মতো। সামাজিক রীতিনীতির কিছুই বোঝে না। এই যেমন ধরুন আমি যদি এখন ওকে বলি কাউকে পেটাতে, ও কিন্তু তাকে বেদম পিটুনি দেবে। কাজটা ভালো না খারাপ, এই বোধটাই ওর নেই। আমি যদি বলি কাউকে ছুরি মেরে আসতে, সে তা-ই করবে। এতে যে লোকটা মারা যেতে পারে, তা সে চিন্তাও করতে পারে না।


সেরেজো বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতার বিষয়টি বাদ দিলে আমি বলবো, এমন শান্ত ও ভালো মানুষ আমি আমার জীবনে আর দেখিনি। তবে ভয় হয়, কারো অনুরোধে সে কাউকে খুনও করে ফেলতে পারে। কারণ, সে তো ভালো-মন্দ বোঝে না। অবশ্য নতুন জীবনের সঙ্গে ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে সে।


আধুনিক জীবনকে খুব কোলাহলপূর্ণ মনে হয় ল্যাং-এর। খুব হৈ চৈ এখানে। গাড়িতে চড়েও ভারি মজা পেয়েছে ল্যাং। মানুষের ঘরে পশুপালন দেখেও ভালো লাগে তার। সে বলে, বনে পশুরা আমাদের দেখলেই ছুটে পালাতো।


ল্যাং-এর পিতা কিন্তু খুব ভালো নেই। তার ধারণা, ভিয়েতনাম যুদ্ধ এখনো চলছে। তিনি কারো সঙ্গে কথাটথা তেমন বলেন না। তার একটাই ইচ্ছা, কোনো একদিন আবার বনে ফিরে যাওয়া। সূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট


বিবার্তা/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com