তানোরে বোরো ধান কাটার উৎসব, ফলন ও দামে খুশি কৃষক
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ২১:৪৮
তানোরে বোরো ধান কাটার উৎসব, ফলন ও দামে খুশি কৃষক
অসীম কুমার সরকার, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীর তানোরে বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। উপজেলার বিলকুমারী বিলের বুকজুড়ে সোনালী বোরো ধানের গালিচা। দেখেই মন ভরে যায়। তবে অন্য জেলা থেকে শ্রমিক না আসায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।


কৃষকরা জানিয়েছেন, এবছর বিঘা প্রতি (৪০ কেজিতে মন) ২৫ থেকে ২৬ মণ ধান পাওয়া যাচ্ছে। আর বাজারে জিরাশাইল নতুন ধান ১ হাজার ২ শত ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাকা ধান ঘরে তুলতে পেরে কৃষকরা আনন্দিত। তারা বলেন, বিগত ৮-১০ বছরেও এমন ফলন হয়নি। ধানের ভালো ফলন আর ভালো দাম পেয়ে কৃষক বেশ খুশি।


যদিও গতকাল সোমবার (২৪ এপ্রিল) হালকা ঝড়বৃষ্টি নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত ছিল। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিলের জমির ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় কৃষি অফিস। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে দ্রুত ধান কাটা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত কৃষক।


ধানকাটা শ্রমিক সুজন, জগদীশ, সবুর। সবুর বিবার্তাকে জানান, ‘১০ জন শ্রমিক এক সাথে কাজ করছি। বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ মণ মজুরিতে ধান কাটা হচ্ছে। যেসব জমি একেবারেই নিচে সেগুলো থেকে ধান বহনে প্রচুর কষ্ট হয়। ওই সব জমিতে বিঘায় ৫মণ করে নেয়া হয়। আর রাস্তার ধারের জমিতে ৪ মণ।’


সুজন বিবার্তাকে বলেন, ‘বিলের প্রায় সব জমির ধান পেকে গেছে। নিচ থেকে ধান কেটে বহন করে রাস্তায় রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে ভ্যান, ভটভটি, ট্রলি কিংবা ট্র্যাক্টরে করে কৃষকের উঠানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’


শ্রমিক জগদীশ বিবার্তাকে বলেন, ‘আমরা একসাথে ১০ জন শ্রমিক ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছি। প্রতি বিঘা ৫ মণ ধানের চুক্তিতে কাটা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত উজ্জ্বলের দেড় বিঘা জমির এক বিঘার সামান্য বেশিতে মাড়াইয়ের পর ৩৮ মন ফলন হয়েছে।’


তারা আরো বলেন, বিগত ৮-১০ বছরের মধ্যে এবারের মত ফলন হয় নাই। প্রায় ১৫ দিন ধরে প্রখর তাপমাত্রা ছিল, এজন্য শুকনো ঝরঝরে ধান ও খড় পাচ্ছে কৃষকরা।



চৌবাড়িয়া থেকে মাদারিপুর রাস্তার পশ্চিমে একসঙ্গে ২২ জন শ্রমিক ধান কাটছেন। তারা সবাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকসা ইউনিয়ন থেকে এসেছেন। তারা বিবার্তাকে জানান ‘গত রোববার এসেছি ধান কাটতে। থাকছি মালশিরা গ্রামে। এখন পর্যন্ত ১৫-১৭ বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছি। বিঘায় নিম্নে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ফলন হয়েছে।’


চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শ্রমিক আকতার, সহিদুল, এমদাদুল বিবার্তাকে বলেন, ‘বিগত ১০-১২ বছরের মধ্যে ধানের এমন চেহারা দেখা যায়নি। যেমন ধানের ফলন হয়েছে তেমনিভাবে মিলছে খড়। যার কারণে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। ধান কাটা-মাড়াই, খাওয়া-খরচ বাদে ১৮-২০ মণ করে ধান নিয়ে যাওয়া যায় বাড়িতে। তবে বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি হলে সমস্যার শেষ থাকবে না।’


পৌর সদরের কৃষক মতিউর, সাহেব, মফিজ বিবার্তাকে বলেন, ‘আর এক সপ্তাহ খরতাপ থাকলে বিলের জমির ধান উঠে যাবে। বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে এবারে ফলন ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো। কিন্তু শ্রমিক সংকট আছে। অবশ্য বাহিরের শ্রমিকরা আসা শুরু করেছেন। পৌর সদরে চলে কাচির হিসেব। বিঘায় ৩৫-৩৮ মণ করে ফলন হয়েছে। আর পাকি হয়েছে ৩৩-৩৫ মণ।’


তানোর থানা মোড়ের ধান ব্যবসায়ী সুনিল চন্দ্র দাস বিবার্তাকে বলেন, ‘পাকি ধান ১১শ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে ধানের দাম আরো বাড়বে। উপজেলায় কাচি ও পাকি দুই ধরণের হিসাবেই ধান ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। ২৮ কেজিতে কাচি ১ মণ, বাজার মুল্য ৭০০ টাকা, আর ৩৭ কেজিতে পাকি ১ মণ- বাজার মূল্য ১১০০ টাকা।’


তানোর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী রেজা বিবার্তাকে জানান, ‘চলতি বোরো মৌসুমে ১৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে ৩৪৯ হেক্টর, ব্রি ১৮ চাষ হয়েছে ৯০০ হেক্টর, ব্রি ২৯ চাষ হয়েছে ২ হেক্টর, ব্রি ৫০ চাষ হয়েছে ১৬ হেক্টর, ব্রি ৫৮ চাষ হয়েছে ২ হেক্টর, ব্রি ৮১ চাষ হয়েছে ৫৭০ হেক্টর, ব্রি ৮৪ চাষ হয়েছে ৭ হেক্টর, ব্রি ৮৬ চাষ হয়েছে ১০০ হেক্টর, ব্রি ৮৮ চাষ হয়েছে ১০০ হেক্টর, ব্রি ৮৯ চাষ হয়েছে ১৯ হেক্টর, ব্রি ৯২ চাষ হয়েছে ১২ হেক্টর, ব্রি ৯৬ চাষ হয়েছে ১০ হেক্টর, ব্রি ১০০ চাষ হয়েছে ৫ হেক্টর, বিনা ধান ১৪ চাষ হয়েছে ৫৫ হেক্টর, ব্র্যাক ৫৭৬ ধান চাষ হয়েছে ২০৫৬ হেক্টর ও জিরাশাইল চাষ হয়েছে ৯০৭৭ হেক্টর জমিতে।


তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বিবার্তাকে বলেন, ‘এবার বোরো চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। সোমবার পর্যন্ত ৫০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। কেজির হিসেবে বিঘা প্রতি ২৫-২৬ মন করে ফলন হয়েছে। সেই হিসেবে ৭৯ হাজার ৬ শত লক্ষ মেট্রিক টন ফলন হবে। আমাদের টার্গেট ছিল ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। বৈশাখ মাস এজন্য কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে বলা হয়েছে। বিগত দশ বছরে এমন ফলন হয়নি এবার হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকুলে ছিল। সব সময় কৃষকের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতও ছিল।



বিবার্তা/রোমেল/এনএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com