ঢাবিতে সরস্বতী পূজায় সাজবে ৭৩টি মণ্ডপ
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:১৮
ঢাবিতে সরস্বতী পূজায় সাজবে ৭৩টি মণ্ডপ
সাইদুল কাদের
প্রিন্ট অ-অ+

করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুইবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হল মণ্ডপে শুধু একটি প্রতিমা দিয়ে সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হয়েছে। মহামারি কাটিয়ে এবার বিভাগ ও ইনিস্টিটিউটের সমন্বয়ে সর্বমোট ৭৩টি মণ্ডপে উদযাপিত হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা।


বিদ্যাদেবীর কৃপালাভের আশায় রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ঘরে ঘরে এই পূজা উদযাপিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রীতি অনুসারে সরস্বতী বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে দেবী সরস্বতী জগতে আসেন।


আগামী ২৬ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই ধর্মীয় উৎসব। পূজা উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। করোনার কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে হলে পূজা উদযাপন হয়। এবার জগন্নাথ হলে পূর্বের মতোই বড় পরিসরে পূজা উদযাপন করা হবে। পূজার প্রস্তুতি নিয়ে জগন্নাথ হলে চলছে বিরাট কর্মযজ্ঞ। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এ কাজ।


এবারে মোট ৭৩টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে। জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে প্রধান পূজা হবে। এছাড়াও প্রতিবারের ন্যায় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে জগন্নাথ হলের পুকুরে সাদা হাসের উপর দেবী সরস্বতীকে রাঙিয়ে তোলা হবে। আর হলের মাঠজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনিস্টিটিউটের উদ্যোগে নির্মাণ করা হচ্ছে ৭১টি মণ্ডপ।


২৩ জানুয়ারি, সোমবার জগন্নাথ হল ঘুরে দেখা যায়, মূল বেদীতে মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। হলজুড়ে চলছে পূজা প্রস্তুতির কাজ। দৃষ্টিনন্দন সব মণ্ডপ তৈরি করতে কাজ করছেন শিল্পী, শিক্ষার্থীর এবং মজুররা। হলের দুই পাশের গেটে লাইটিংসহ সাজাসজ্জার কাজ প্রায় সম্পন্ন। সন্ধ্যার পর হলের চারপাশ আলোকসজ্জিত হয়। পূজার আগে আগে বাকি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।



জগন্নাথ হলের কর্মচারীর সন্তান চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রনয় রায় আনন্দ প্রকাশ করে বিবার্তাকে বলেন, আমি এখানে বড় হয়েছি। অনেকগুলো পূজো দেখেছি। করোনার কারণে গত দুইবছর একটা মণ্ডপ দিয়ে পূজা হয়েছে। কিন্তু এইবার শুনেছি অনেকগুলো মণ্ডপ হচ্ছে। অনেক খুশি আমি।


মণ্ডপ তৈরির কাজে সাহায্য করতে আসা জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব সাহা বিবার্তাকে বলেন, আমাদের মণ্ডপ তৈরির কাজ আজকে থেকে শুরু হয়েছে কেবল। প্রায় একমাস ধরে এটার জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছি। আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত পূজায় বাসায় থাকাতে হলের পূজা দেখিনি। প্রথমবারের মত হলের পূজার অভিজ্ঞতা নিতে যাচ্ছি। আশা করছি আমাদের পূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।


চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে পুকুরে মণ্ডপ সাজানোর কাজে নিয়োজিত রহিম বিবার্তাকে জানান, ছয়দিন ধরে কাজ করছি। আমি প্রতিবছর এখানে কাজ করি। আটদিন-নয়দিন লাগতে পারে পুকুরে প্রতীমা তুলতে। আমরা মূলত বাঁশ গেঁড়ে দেওয়ার কাজটুকু করি। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য কাজ করে। বৃহস্পতিবারের আগের রাতে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।



সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা কমিটির সভাপতি ড. মিহির লাল সাহা বিবার্তাকে বলেন, করোনার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে পূজার আয়োজন করেছি। এইবার আমরা বড় পরিসরে পূজার আয়োজন করতে যাচ্ছি। মাঠজুড়ে মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে বিভাগ ও ইনিস্টিউটের উদ্যোগে। ২০২০ সালে ৬৬/৬৮টি মণ্ডপ নিয়ে পূজা করা হয়েছিল। করোনার পরে আমরা এক নতুন পৃথিবী পেয়েছি। সেই নতুন পৃথিবীতে পূর্ণ উদ্যমে, সাড়ম্বরে পূজা আয়োজন করা হচ্ছে। একটি কেন্দ্রীয় এবং চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে একটিসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে মোট ৭৩টি মণ্ডপে পূজা দেওয়া হবে। এই পূজার দুইটি দিক আমরা দেখি। একটি হল ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা- যেখানে সকালে উপবাস থেকে পূজা দিয়ে শুরু করি। সকলের মঙ্গল কামনা করি- বিদ্যাদানের জন্যে। সরস্বতীকে আমরা বিদ্যার দেবী বলি; তাঁর কাছে মঙ্গল কামনা করি যাতে পৃথিবীকে বিদ্যার আলোয় আলোকিত করতে পারি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা একটা উৎসব করি। এটি হলো বাঙালির উৎসব। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এতে অংশগ্রহণ করি। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। অবিভাবক হিসেবে তিনি সকলকে পূজায় স্বাগতম জানান এবং সহযোগিতা কামনা করেন।


তিনি আরো বলেন, পূজায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিবারের ন্যায় এবারও পূজা সশরীরে পরিদর্শন করবেন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্যদ্বয়সহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি পূজা পরিদর্শনের আহ্বান জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় যারা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে আছে তাদেরও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। এছাড়াও সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সিসিটিভির সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলেও তিনি জানান।


বিবার্তা/সাইদুল/রোমেল/জেএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com