ঢাকা লিট ফেস্ট: উপস্থিত দেশি-বিদেশি শিল্পী ও বিশিষ্টজনদের ভাবনা
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:৩৪
ঢাকা লিট ফেস্ট: উপস্থিত দেশি-বিদেশি শিল্পী ও বিশিষ্টজনদের ভাবনা
জামাল রুহানী ও মাজহারুল আলম
প্রিন্ট অ-অ+

করোনা মহামারীর কারণে তিন বছর বন্ধ থাকার পর ঢাকায় আবারও দেশি-বিদেশি সাহিত্যিক ও শিল্পীদের মিলনমেলা- ঢাকা লিট ফেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয়ে লিট ফেস্ট চলে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।


লিট ফেস্ট অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশি সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের সাথে আলাপ হয় বিবার্তার। তারা প্রত্যেকেই লিট ফেস্ট আয়োজন নিয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন এ আয়োজন অব্যাহত থাকে, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।



ভারতীয় লেখক পারো আনন্দ বলেছেন, আমি বাংলাদেশের তরুণদের ভালোবাসি। আর বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে যেটা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি, তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শিশুরা। তারা যথেষ্ট সংস্কৃতিবান এবং মার্জিত। বাংলা সাহিত্য নিয়ে আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে পারো আনন্দ বলেন, আমি নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পড়ছি। একসময় আমি বাংলায় কথা বলতে এবং লিখতে চেষ্টা করতাম। তবে এখন অনুবাদ করেই আমাকে বাংলা পড়তে হয়।




ঔপন্যাসিক ও বিখ্যাত ওয়েলশ কবি ওয়েন শিয়ার্স (owen sheers) বলেছেন, আমি এই লিট ফেস্ট উপভোগ করছি। এখানে বেশ কিছু চমৎকার ইভেন্ট দেখতে পেয়েছি। বিশেষ করে মঞ্চে আলোচনার সেশনগুলো ছিল সত্যিই উপভোগ করার মতো। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নানা ভাষা ও সংস্কৃতির লোক এসেছেন, কথা বলেছেন। এসব দারুণভাবে উপভোগ করেছি। এখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে, স্বেচ্ছাসেবকরা লিট ফেস্টের জন্য কাজ করছেন। এসব আমাকে মুগ্ধ করেছে।


বাঙালি সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়েন বলেন, আমি বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশি পরিচিত নই। তবে অবশ্যই জানব।



মালয়েশিয়ার টেলিভিশন উপস্থাপক ও পেন মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট শারাদ খাদেন বলেন, ঢাকা লিট ফেস্টে আমি তৃতীয়বারের মতো এসেছি। এর আগে ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে এসেছিলাম। শুধু বই কিংবা সাহিত্য নিয়ে নয়, আমি বাংলাদেশের অনেক কিছু সম্পর্কেই জানছি। এখানে অনেক আন্তর্জাতিক কবি-সাহিত্যিকরা এসেছেন, কিন্তু আমি এই দেশ সম্পর্কে জানছি। আমি মুন্সিগঞ্জেও গিয়েছি, অনেক চমৎকার জায়গা।


বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি তার আগ্রহের বিষয়ে সম্পর্কে জানতে চাইলে শারাদ বলেন, আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বেশ ভালো জানি। তিনি সারা বিশ্বেই পরিচিত। আমি বাংলা জানি না। তবে অনুবাদ করেই বাংলা সম্পর্কে জানছি। আমার কাছে কোক স্টুডিও বাংলা এবং বাউল গান ভালো লাগে। বাংলাদেশের খিচুড়ি ও বিরিয়ানি খুবই সুস্বাদু।



শেষ দিনের সমাপ্তিলগ্নে বাঙালি একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন ড. সলিমুল্লাহ খান। বিবার্তা প্রতিবেদকের আলাপকালে সলিমুল্লাহ খান বলেন, খুব অল্প সংখ্যক লোক এতো বিশাল আয়োজন করেছেন। তবে লিট ফেস্টে ইংরেজি ভাষার প্রভাবটা বেশিই পরিলক্ষিত হয়েছে। অন্য ভাষাভাষী যারা এসেছেন, তারাও ইংরেজিতে কথা বলেছেন। তবে আমাদেরকে অবশ্যই বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমরা যেন ইংরেজ না হয়ে যাই, সেটি অবশ্যই মনে রাখতে।



শেষ দিনে লিট ফেস্টে উন্মুক্ত আলোচনা উপভোগ করেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ। বিবার্তার সাথে আলাপকালে তিনি সবাইকে জাতি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিজেদেরকে তুলে ধরার চেষ্টা থাকলেও আমাদেরকে দেখতে হবে আসলে বিশ্বকে দেয়ার মতো কিছু আছে কি না।



কথাশিল্পী স্বকৃত নোমান বলেন, সাহিত্য উৎসবের মধ্য দিয়ে কখনোই সাহিত্যের উন্নতি সম্ভব হয় না। সাহিত্য চর্চা যিনি করেন, তাকেই একা পথ চলতে হয়, সাধনা করতে হয়। তার নৌকা কেউ পার করে দেয় না। তবে এ ধরনের উৎসবের একটা ইতিবাচক দিক হচ্ছে এর মাধ্যমে সাহিত্যপ্রেমী ও সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মীদের একটা সম্মিলন ঘটে। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ে। লিট ফেস্টের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লেখক-সাহিত্যিকরা এসেছেন, তাদের বই পড়া আর মুখোমুখি হয়ে কথা শোনা অবশ্যই আলাদা বিষয়। এতেই লিট ফেস্টের সার্থকতা।



এছাড়া, শেষ দিনে ঢাকা লিট ফেস্টে এসে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর সালিমুল হক। উন্মুক্ত আলোচনায়ও তিনি অংশ নিয়েছেন।


বিবার্তা/জামাল-মাজহার/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com