পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্র ভাঙছে মানুষের শুক্রাণু
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৪৩
পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্র ভাঙছে মানুষের শুক্রাণু
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পদার্থ বিজ্ঞানের জগতে ধ্রুবতারা অ্যাইজাক নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্র। তৃতীয় গতি সূত্র অনুযায়ী, ‘প্রতিটা ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে’। তবে প্রকৃতির সর্বত্র এই তত্ত্ব সমানভাবে কাজ করে না। মানবদেহে এই নিয়মের ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গিয়েছে।


মানুষের শুক্রাণু লেজের সাহায্যে ঘন তরল পদার্থের মধ্য দিয়ে পথ করে নিয়ে এগিয়ে চলে। কিন্তু এই এগিয়ে চলার পথে শুক্রাণু পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম মৌলিক সূত্র, যা নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র নামে পরিচিত, সেই সূত্রকেই অমান্য করে। সম্প্রতি প্রখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী পিআরএক্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।


যৌন মিলনের সময় লাখ লাখ শুক্রাণু স্ত্রীদেহের প্রবেশের পর ডিম্বানুর দিকে ছুটতে শুরু করে। গবেষকদের দাবি, এই সময় দেহ বিকৃত করে সাঁতার কাটে শুক্রাণু। আশপাশের কোনও কিছুতেই সাড়া দেয় না তারা। এতে নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্রটি ভঙ্গ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।


জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটির গণিতজ্ঞ কেন্তা ইশিমতো ও তার সহকর্মীরা গবেষণা করে দেখেন, শুক্রাণুসহ একই ধরনের চলৎশক্তিসম্পন্ন বস্তু বা অণুজীবগুলো কীভাবে মানুষের শরীরের ঘন তরলের ভেতর দিয়ে সাঁতার কাটে। বিশেষ করে, এসব ঘন তরলে সাঁতার কাটার ক্ষেত্রে এসব তরলের ঘনত্ব শুক্রাণুর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত। অন্তত পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব তাই বলে। সে বিষয়টি জানতেই বিস্তর গবেষণা করেন তারা।


প্রসঙ্গত, বিষয়টি বোঝার জন্য গবেষকরা শুক্রাণু কোষ ও ক্ল্যামিডোমোনাস শৈবালের তথ্য পরীক্ষা করেন। এই দু’টির মিথস্ক্রিয়া নিয়েও দীর্ঘ গবেষণা চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্র মানা হচ্ছে না বলে সিদ্ধান্তে এসেছেন তারা।


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শুক্রাণু ও ক্ল্যামাইডোমোনাস শৈবালের মধ্যে থাকে ফ্ল্যাজেলা নামের একটি উপাঙ্গ। যা শৈবাল বা শুক্রাণুকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। লেজের মতো দেখতে কোষ থেকে ফ্ল্যাজেলার উৎপত্তি হয়। কোষ থেকে বেরিয়ে এসে এগুলি প্রসারিত হতে থাকে। কিন্তু শুক্রাণুর মধ্যে তরলের ভাব বেশি থাকায় ফ্ল্যাজেলার আকারের পরিবর্তন ঘটে। তখনই দ্রুত এটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু ওই সময় ফ্ল্যাজেলার মধ্যে সমান ও বিপরীতমুখী কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। সেই কারণেই শুক্রাণুর ক্ষেত্রে নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্রটি লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে মনে করছে বিজ্ঞানীরা।


গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, কোষ কীভাবে নড়াচড়া করবে তা ফ্ল্যাজেলামের স্থিতিস্থাপকতার উপর পুরোপুরি নির্ভর করে। ফলে অদ্ভুত স্থিতিস্থাপকতার ধারণাটি কার্যকর হয়। পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শক্তি ব্যয় না করে কীভাবে ফ্ল্যাজেলাকে সরতে হবে, তার উপর শুক্রাণুর দৌড় নির্ভর করে। এর পাশাপাশি কোন শুক্রাণু ছুটে গিয়ে ডিম্বানুকে নিষিক্ত করবে, এই নিয়েও নতুন তথ্য দিয়েছেন গবেষকরা।


২০২০-র একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শুক্রাণুরা এটা নিজে থেকে ঠিক করতে পারে না। ডিম্বানুই বেছে নেয় সঠিক শুক্রাণু। শুধু তাই নয়, একটি রাসায়নিক সংকেতও দেয় ডিম্বানু। স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএইচএস ট্রাস্টের তরফে গবেষণায় এই দাবি করা হয়েছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com