
করোনা মহামারি শেষ হয়েছে বেশিদিন হয়নি। এর মধ্যেই পরবর্তী মহামারি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্বের প্রথম সারির একদল বিজ্ঞানী। অদূর ভবিষ্যতে ফের দেখা দিতে পারে মহামারির প্রাদুর্ভাব। আর এ মহামারি আসবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই সতর্কবার্তায় জানিয়েছেন, পরবর্তী মহামারি হতে পারে ফ্লুজাতীয় রোগের কারণে। এর মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়েই শঙ্কাটা বেশি।
এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে। প্রকাশিতব্য ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়, ৫৭ শতাংশ জ্যেষ্ঠ রোগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফ্লু ভাইরাসের একটি স্ট্রেইন পরবর্তী প্রাদুর্ভাবের কারণ হতে পারে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, আগামী সপ্তাহে বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা প্রকাশিত হবে। এতে বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞানীদের ৫৭ শতাংশ মনে করছেন, পরবর্তী মহামারি হতে পারে ফ্লুজাতীয় রোগের কারণে।
এই গবেষণা চালিয়েছেন কোলোগনে ইউনিভার্সিটির জন সালমানাতোন-গার্সিয়া। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে এই গবেষণা করা হয়েছে। এতে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর ধারণা, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা এ জাতীয় রোগের কারণেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহামারি হতে পারে। এটি করোনার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে দেখা যায়, এটি ক্রমাগত বিকশিত ও পরিবর্তিত হচ্ছে।
গার্সিয়া আরো বলেন, প্রতি শীতেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ফিরে আসে। এটাকে ছোটখাটো একটি মহামারি বলা যেতে পারে। এই ভাইরাসের ওপর তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কারণ, প্রতি মৌসুমেই নতুন স্ট্রেইনে হাজির হয় এটি। এর জন্য এটি নির্মূল সম্ভব নয়।
এই গবেষণার তথ্য নেয়া হয়েছে ১৮৭ জ্যৈষ্ঠ বিজ্ঞানীর কাছ থেকে। আগামী সপ্তাহে বার্সোলনায় অনুষ্ঠিতব্য ইউরোপীয়ান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিসেস সম্মেলনে এটি প্রকাশিত হবে।
গবেষণায় অংশ নেয়া ২১ শতাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইনফ্লুয়েঞ্জার পর পরবর্তী মহামারি হতে পারে একটি ভাইরাস। যার নাম দেয়া হয়েছে ডিজিজ এক্স। তবে, এ বিষয়ে এখনও তেমন কিছু জানেন না বিজ্ঞানীরা। তাদের বিশ্বাস, পরবর্তী মহামারিটি এমন একটি অণুজীবের কারণে ঘটবে যা এখনও পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল কোভিড ভাইরাসের সময়।
কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের কাছে এখনও করোনা মাহামারি একটি হুমকি। গবেষণায় অংশ নেয়া ১৫ শতাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, করোনার জন্যই অদূর ভবিষ্যতে নতুন মহামারি আসতে পারে। এছাড়া প্রাণঘাতী লাস্সা, নিপাহ, ইবোলা ও জিকা ভাইরাস বিশ্বের জন্য হুমকি হতে পারে বলে মনে করেন ১ থেকে ২ শতাংশ বিশেষজ্ঞ।
এপ্রিলের মাঝামাঝিতে ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে একটি সতর্ক বার্তা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ওই সময় বৈশ্বিক সংস্থাটি জানায়, এইচ৫এন১ স্ট্রেইনের ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। প্রতি বছর লাখ লাখ প্রাণি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে ও এতে লাখ লাখ পোল্ট্রি মুরগি মারা যায়। এ ছাড়া লাখ লাখ বন্যপাখিও মারা গেছে এই ভাইরাসে। সম্প্রতি গৃহপালিত পশুপাখিও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।
১০০ বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লুর ভয়াবহতা দেখেছে বিশ্ব। সম্প্রতি করোনা নামের এক ভাইরাস আবির্ভূত হয় মহামারি হিসেবে। প্রাণ গেছে প্রায় ৭০ লাখ। গত বছর নতুন আরেক ভাইরাসের ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, নতুন এই রোগের নাম এক্স। এটি কোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের কারণে হতে পারে।
এ নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল। তাতে নেওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের সাবেক প্রধান কেট বিংহামের সাক্ষাৎকার। তিনি বলেন, করোনা মহামারির চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে নতুন এই রোগ।
পৃথিবীতে এখনো অনেক ভাইরাস রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ২৫টি ভাইরাস ‘পরিবার’ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এর প্রতিটিতে আছে বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার ভাইরাস। এসব ভাইরাস এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে যেতে পারে। ফলে যেকোনো সময় যেকোনো ভাইরাস থেকে মহামারি সৃষ্টি হতে পারে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]