শিরোনাম
নেতৃত্ব নির্বাচনে তরুণরাই হবে মূলশক্তি
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:২০
নেতৃত্ব নির্বাচনে তরুণরাই হবে মূলশক্তি
সৌরভ সাহা
প্রিন্ট অ-অ+

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে তরুণরাই হবে মূলশক্তি। তারা একটা মোটা অংকের ভোট ব্যাংক।


ভোটার হাল নাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নবম জাতীয় নির্বাচন থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে মোট ভোটার সংখ্যা (সম্ভাব্য) ১০ কোটি ৪৬ লাখের বেশি। সে হিসাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুই আমলে নতুন ভোটার হচ্ছে ২ কোটি ৩৫ লাখ ১২ হাজার ৯৯৭ জন। এর মধ্যে –
>২৭ বছর বয়সী ভোটার রয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৮৪ হাজার ১৪৬ জন।
>২১ থেকে ২২ বছর বয়সী ভোটার রয়েছে ৮০ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৩ জন।
>একেবারে নতুন অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সী ভোটার হচ্ছে প্রায় ৪৬ লাখের মত।


নির্বাচন কমিশন হতে প্রাপ্ত এসব সম্ভাব্য হিসাব হলেও চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারিতে চূড়ান্ত হিসাব জানা যায়।


২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ভোটার সংখ্যা ছিল মোট ১০,১৪,৪০,৬০১ জন। এর সাথে নতুন করে যুক্ত ভোটার ৩৩,৩২,৫৯৩ জন। নতুন পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৬,৩২,৯৭১ আর নারী ভোটার ১৬,৯৯,৬২২ জন। অন্যদিকে মৃত ভোটার ১৭,৪৮,৯৩৪ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে।


সবশেষে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী দেশে মোট ভোটার রয়েছে ১০,৪১,৪২,৩৮১ জন।


ফ্যাক্ট : আগামী নির্বাচনে যারা নতুন ভোটার, জীবনে প্রথম ভোট দেবেন তাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছর। কারও কারও হয়তো আরও একটু বেশি। গত প্রায় দশ বছর ধরে তারা আওয়ামী লীগের শাসন দেখে আসছেন। আওয়ামী লীগের আগে দুই বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অর্থাৎ আজ থেকে একযুগ আগে বিএনপির শাসনব্যবস্থা (২০০১-০৬) কেমন ছিল, তা তাদের জানার বা বোঝার কথা নয়। কারণ, সে সময় তারা ছিল ৬ থেকে ৮ বছরের শিশু, সর্বোচ্চ ১০ বছরের বালক-বালিকা। ১২ বছর আগের ঘটনা আমাদের গণমাধ্যমেও তেমনভাবে আসে না। সুতরাং তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির, শেখ হাসিনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার, ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের, সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে তারেক রহমানের যৌক্তিক তুলনাগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে।


বাস্তবতা :বিএনপি এখন অনেক ভালো ভালো কথা বলছে।


তাদের নীতিবাগীশ নেতৃবৃন্দ জনগণকে 'সব ভালোর' এক বাংলাদেশের মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কথায় আস্থা রাখা একেবারেই নিছক কল্পনা। ২০০১ সালে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার এবং সুশাসনের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু মানুষের মোহ কাটতে সময় লাগেনি। যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে সারাদেশকে তারা স্বা্ধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে সংখ্যালঘু নির্যাতন, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে হত্যা, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, দেশব্যাপী জঙ্গিবাদের বিস্তার জনজীবনকে আতঙ্কগ্রস্ত ও দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ছাত্রদলের সন্ত্রাসে কেবল ছাত্রলীগ বা নিজ দলের প্রতিপক্ষকে নয়, বাবার কোলে থাকা নিষ্পাপ শিশু, বুয়েট শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনির মতো অনেক সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।


দুর্নীতিতে ধারাবাহিকভাবে চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আন্তর্জাতিক লজ্জা অর্জিত হয়েছে বিএনপির সময়ে! খাম্বার ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিলেও বিদ্যুতের অভাবে মানুষকে হাহাকার করতে হয়েছে। বিএনপির আমলে সারের জন্য কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। আজ আমরা কোটা নিয়ে কথা বলছি। তখন একটাই কোটা ছিল, হাওয়া ভবন! একের পর এক শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করার ফলে জীবন কত দুর্বিষহ হতে পারে, তা কেবল ভুক্তভোগী জানেন।


বিএনপি-জামায়াত সরকারের এসব দুঃশাসন এবং অরাজকতার চিত্র তরুণদের সামনে তুলে ধরতে হবে, প্রচার করতে হবে।মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিটি তরুণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমাদের কাজ করে যেতে হবে নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। তরুণদের আঙুলের ছাপ কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শক্তির বাইরে যেতে পারে না।


প্রতিটি আসনে গড়ে ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত তরুণ ভোটার রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এরাই জয়-পরাজয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখবেন।


সংখ্যার দিক দিয়ে ভোটারদের মধ্যে তরুণরাই এগিয়ে রয়েছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তরুণদের অধিকাংশই সচেতন ও গুজবে বিশ্বাসী নয়। এই দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের দিকগুলো ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে প্রচার করতে হবে। সেটা যে কোনো মাধ্যমেই হতে পারে। আমাদের প্রত্যকটি উন্নয়নকে চিহ্নিত করে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে সঠিকভাবে।


এবারের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’শিরোনামে থাকবে তরুণদের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা। যাতে শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য একটি এবং গ্রামের তরুণদের জন্য আরেকটি আলাদা পরিকল্পনা থাকবে।


ডেল্টা প্ল্যানে আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। ১০০ বছরের কয়েকটি ধাপ উল্লেখ করে কোন সময়ে কী করা হবে— তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকছে ইশতেহারে। ১০০ বছর পর অর্থাৎ আগামী ২১০০ সালে দেশ কোথায় থাকবে তা নিয়ে রয়েছে সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য। আর ব্লু ইকনোমিতে সমুদ্রসীমা জয়ের পর সেখানকার সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করা হবে, কীভাবে সমুদ্র সুরক্ষা করা হবে— এসবের দিকনির্দেশনা থাকছে এবারের ইশতেহারে। প্রকৃতি ও পরিবেশ ঠিক রেখে সমুদ্রসম্পদকে কীভাবে কাজে লাগানো যাবে, তার বিস্তারিত থাকছে ইশতেহারে।


সেই দিকগুলো তরুণদের মাঝে বিস্তারিত প্রচার করতে। আমাদের প্রচেষ্টাই পারে তরুণদের ভোটকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিশ্চিত করতে।


বিবার্তা/মৌসুমী


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com