শিরোনাম
অরিত্রি ফিরবে না...
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:২৩
অরিত্রি ফিরবে না...
মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা
প্রিন্ট অ-অ+

বড্ড অভিমানী অরিত্রি বাবার অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। নবম শ্রেণীর অরিত্রির সামনে ছিল সোনালী ভবিষ্যত। মা-বাবারও স্বপ্ন ছিল অরিত্রি একদিন অনেক বড় হবে। আর সে কারণেই দেশ সেরা অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুলে অরিত্রিকে ভর্তি করেছিল। একই সাথে তার ছোট মেয়েকেও ভর্তি করেছেন।


যেখান থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার মেয়েরা গোল্ডেন এ+ পেয়ে নামীদামী কলেজে ভর্তি হয় সেখান থেকেই অরিত্রির লাশ বের হল। কিন্তু কেন? কত বড় অপরাধ করেছিল অরিত্রি? যার কারণে অরিত্রির বাবাকে ডেকে নিয়ে অপমান করতে হল।


আমাদের নতুন প্রজন্মের আধুনিকতায় প্রতিটি ঘরেই অরিত্রিরা বসবাস করছে। আমরা আর কত অরিত্রিকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেব?


অরিত্রির স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাতজোড় করে বলেছেন, ‘আমি দোষী প্রমাণিত হলে পদত্যাগ করব।’


শিক্ষামন্ত্রী স্কুলে গিয়ে বলেছেন, ‘তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’


অন্যদিকে মহামান্য হাইকোর্ট পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির গঠনের আদেশ দিয়েছেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি চৌধুরী কেন আত্মহত্যা করেছেন- এর কারণ খুঁজতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কোন আদেশেই অরিত্রি কি আর ফিরে আসবে?


তার সহপাঠীরা এই ঘটনার ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। ঠিক তখন, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আরাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার এসব জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।


ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেছেন, গতকাল রাতে জিনাত আরাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


এখন এসব করে কি হবে? কে কি হারিয়েছে আমরা জানি না তবে অরিত্রির মা-বাবা তাদের প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছে। দেশের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠে শিক্ষকদের যদি এই ব্যবহার হয় তবে আমরা যাব কোথায়? মা-বাবার পরেই শিক্ষাগুরু তাদেরকে আমরা সম্মান ও মর্যাদা দিতে শিখেছি। কিন্তু সেই শিক্ষক সমাজ এখনকি আগের মত শিক্ষাগুরুদের মতো আচরণ করছে? একদিকে কোচিং বাণিজ্য অন্যদিকে প্রাইভেট বাণিজ্য আর সেই সাথে যুক্ত হয়েছে শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি। এই তিন মিশ্রণে শিক্ষকরা কি আর শিক্ষক হিসেবে নিজেদেরকে রাখতে পারছেন কিংবা পরিচয় দিতে পারছেন? আমরা আমাদের সন্তানদেরকে সুসন্তান হিসেবে মানুষ করতে চাই আর নির্ভর করে থাকি শিক্ষকদের উপর। এই তার প্রাপ্তি?


অরিত্রির মতো অন্য কেউ এভাবে যেন আত্মহুতির পথ বেছে নিতে না হয়, সেজন্য সমাজের সর্বস্তরে জাগরণ তুলতে হবে। শিক্ষকরা দলীয় রাজনীতির অন্ধকারে কোনোভাবে নিজেদেরকে নিমজ্জিত করতে পারবে না। এবিষয়ে প্রয়োজনে আইন করতে হবে এবং সেই আইন তদারকি করতে হবে।


অরিত্রি তুমি আমাদের ক্ষমা কর। বিজয়ের ৪৭ এর সূর্যোদয়ে তোমার মতো তরুন সূর্যকে আমরা ধরে রাখতে পারলাম না। জাতি হিসেবে আমরা খুবই লজ্জিত ও ব্যাথিত। তোমার মা-বাবাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নাই। তবে এইটুকু বলবো, তুমি যেখানেই থেকো ভাল থেকো।


লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com