শিরোনাম
বিএনপি আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করছে না?
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৪৫
বিএনপি আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করছে না?
মো. আরিফুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

শিরোনামের উত্তর খুঁজতে হলে একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে। তবে বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। কিছুদিন পূর্বে বিএনপি কার্যালয়ে ঘটে এক বীভৎস ঘটনা। যা দেশের জন্য খুবই অশুভ ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ঘটনার আইনগত কোনো ধরনের বৈধতা আছে কি?


প্রথমই বলি, আইনের পোশাক পরিহিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর গত ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের সময় অতীত ইতিহাসের মত বর্বরোচিত নিন্দনীয় হামলা করে, তারা যে আইনের প্রতি কতটুকু বিশ্বাসী ও শ্রদ্ধাশীল তা আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন।


যেখানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিধান অনুযায়ী কোনো নগরিকের উপরই কোন ধরনের হিংস্রাত্মক আঘাত করা আইনত দণ্ডনীয়, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপরের হামলাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?


এমন কার্যকলাপের ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা তো স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রীয় অধীন মামলার শিকার হবে। এটা কি স্বাভাবিক নয়?


এগুলোকে তারা গায়েবী মামলা বলে প্রচার করে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চায়। বস্তুত এখানে সরকারের বিন্দু পরিমানও সম্পৃক্ততা নেই। বিষয়টা আরেকটু স্পষ্টভাবে বলা যায়, মামলার দুইটি পক্ষ থাকে, বাদী-বিবাদী। বাদী, মানে অভিযোগকারী পক্ষকে দেখলেই বুঝতে পারবেন মামলা কোন দিকের কিংবা কোন গতির। দেখবেন, অধিকাংশ মামলাই বাদী হল রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেছে।


অপরাধীদের বিচারহীনতা অপসংস্কৃতি তো এ দেশের জিয়াউর রহমানই এনেছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে, যা এখন বাংলাদেশ কেন পুরা বিশ্বের কাছেও পরিষ্কার। কিন্তু বিপরীতে আওয়ামীলীগ বিচারহীনতা যে অপসংস্কৃতি তা মুক্ত করে বিচারব্যবস্থায় এনেছে স্বচ্ছতা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধী বিচারের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে করেছে কলঙ্কমুক্ত।


এবার আসা যাক, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়ার প্রসঙ্গে। এটাও এক প্রকার রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মের সামিল। প্রথমত: যেখানে বাংলাদেশের সংবিধানে ২১(ক)ধারা অনুযায়ী জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা নাগরিক দায়িত্ব, সেখানে যদি রাষ্ট্র সম্পত্তি রক্ষা ব্যতিরেকে জাতীয় সম্পত্তিকে সজ্ঞানে পরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করে তারা কি নাগরিক বিধান লঙ্ঘন করছে না? রাষ্ট্রীয় নাগরিক বিধান লঙ্ঘন করাটাই রাষ্ট্রদ্রোহিতা সামিলও বটে।


এমন, ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বিএনপির ইতিহাস অনেক পুরোনো। বিগত নির্বাচনের ইতিহাসেও বাংলাদেশের মানুষ তা প্রত্যক্ষ করেছে, কিভাবে তারা বাংলাদেশে জ্বালাওপোড়াও করে দেশে অরাজকতা তৈরি করেছে। যার ফলে বিএনপির জনমতের আস্থা হারিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।


মূলত বিএনপির কার্যালয়ে ঘটিত তাদের অর্ন্তকোন্দল কারণ বশত: সৃষ্ট নেক্কার জনক ঘটনার দোষ আওয়ামীলীগ উপর চাপিয়ে নির্বাচনে পূর্বে দেশের অভ্যান্তরে ও দেশের বাইরে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। যার প্রমাণ, মির্জা ফখরুল মিথ্যাচার করে ছাত্রলীগের গায়ে দোষের কালিমা লেপনের চেষ্টার মধ্যদিয়ে স্পষ্ট করেছেন।


যদিও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এ ব্যাপারে মির্জা ফখরুলকে নিঃস্বার্থ ক্ষমা না চাইলে বিএনপি কার্যালয় ঘেরাও করার আল্টিমেটাম ঘোষণা দিয়েছেন। এবং আইগত প্রক্রিয়া দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছেন।


এবার আসা যাক নির্বাচনীয় ও দলীয় প্রসঙ্গে, দলীয় বিধিবিধান অনুযায়ী কোনো ফৌজদারি দণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি দলের চেয়ারম্যান হিসাবে বহাল থাকতে পারে না। কিন্তু তারেক রহমান এখনো বহাল রয়েছে।


বিএনপির পলাতক, মুদ্রা পাচার ও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে রোববার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেন। যা পুরোপুরি সংবিধানে বহির্ভূত এবং নির্বাচনীয় আচরনবিধির বহির্ভূত ও নীতিরও লঙ্ঘন।


বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬নং অধ্যায়ে সংসদে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা বিধানের ২(ঘ) উপধারায় স্পষ্ট বলা আছে, "তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি আপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসর দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল না অতিবাহিত হইলে" তবে সেই ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী যোগ্যতা হারাবে। আর যে ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা হারায় নির্বাচনীয় বিধান অনুযায়ী সে সকল নির্বাচনীয় কার্যক্রম করা অবৈধ।


এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, বিএনপি তারেক রহমান সংবিধানের এই আইনটিও অমান্য করছেন। দলীয় ব্যক্তিদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক রহমান, যা নির্বাচনীয় নীতি বহির্ভূত।


তরুণ প্রজন্মের আওয়ামীলীগ নেতা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যরিষ্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ ব্যাপারে পরিস্কারভাবে বলেন, “তারেক রহমান এ মুহূর্তে পলাতক এবং দণ্ডিত ব্যক্তি। একজন পলাতক ও দণ্ডিত ব্যক্তি রাজনৈতিক ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন না। যেহেতু উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে, তাকে ঘিরে কোনো ধরনের লাইভ স্ট্রিমিং, ব্রডকাস্টিং, কনফারেন্স ইত্যাদি দেখানো যাবে না তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে।


“তিনি কোর্টের অর্ডার ভঙ্গ করছেন, দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে তিনি নির্বাচনী আচরণবিধিও লঙ্ঘন করছেন। বিএনপি যে কাজটি করছে সেটা শুধু অবৈধই নয়, অনৈতিকও বটে।”


আদালতের নির্দেশনা মেনে তারেকের খবর প্রচার না করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান নওফেল।


এব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানসহ দলীয় নেতা কর্মীরা নির্বাচন কমিশন বরাবর অভিযোগ পত্রও পেশ করেন।


কথা খুব পরিস্কার, যে ব্যক্তি দেশের আইন-আদালত-সংবিধান চরম লঙ্ঘনকারী, সেই ব্যক্তি থেকে দেশ ও জাতি কি শিখবে!যে দলের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তারেক রহমানসহ প্রত্যেকেরই আইনের প্রতি অনিহা আর আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে, তাদের দলের কাছ থেকে দেশের মানুষ কি আশা করতে পারে?


লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com