শিরোনাম
হৃদয় ছুঁয়েছে হাসিনা’র গল্প
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:১০
হৃদয় ছুঁয়েছে হাসিনা’র গল্প
উল্লাস চৌধুরী
প্রিন্ট অ-অ+

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত 'হাসিনা, অ্যা ডটার্স টেল' সাড়া ফেলেছে বোদ্ধা সমাজে। ইউটিউবে ট্রেলার মুক্তি পাবার পর ফিল্মটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয় সবার মাঝে। একজন পিতা যিনি সারাজীবন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সদাব্যস্ত ছিলেন, কারাবরণ করেছেন বারবার, একটি জাতিকে এনে দিয়েছেন স্বাধীনতার অমূল্য স্বাদ, দেশি-বিদেশি শত্রুদের চক্রান্তে শাহাদাতবরণ করেছেন সপরিবার, তাঁর বেঁচে যাওয়া দুই কন্যার বয়ানে তৈরি হয়েছে এই ডকুড্রামাটি।


ফিল্মটিতে দর্শক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়, বরং বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে আবিস্কার করবেন। সাবলীল ভঙ্গিতে তিনি বলেছেন তাঁর শৈশবকালের কথা, গ্রামে বড় হওয়া দুরন্ত যে দিনগুলো তাঁর মাঝে এনে দিয়েছিল প্রচণ্ড জীবনীশক্তি। বাবামায়ের প্রথম সন্তান হওয়ায় মায়ের সাথে তাঁর বয়সের পার্থক্য বেশি ছিল না। মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সব কথা শেয়ার করতেন কন্যা হাসিনার সাথে। পিতার জেলজীবন, জেল থেকে ছাড়া পাওয়া, আবার কারাবাস, পুলিশের ঘর তল্লাশি, সাজানো ঘর তছনছ করে শিশুকন্যার খেলনাগুলো নষ্ট করা - এসব তাঁর জীবনে রেখাপাত করেছে গভীরভাবে। অপকটে জানাচ্ছেন তাঁর ভাই কামাল শৈশবে হাসু আপার কণ্ঠ 'আব্বা' ডাক শুনে বলছেন, ''হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি!'' এই ছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের দিনযাপনের গল্প।


পিতার অনুপস্থিতিতে মাতার সাহসী অথচ সাদামাটা ঘরানার জীবনাদর্শে তাঁদের জীবন কেটেছে। অলস প্রকৃতির ছিলেন বলে শেখ হাসিনার ঘরটির নাম ছিল আলসেখানা। সারাদিন বই পড়ে আর গান শুনে সময় কাটাতেন তিনি।


শেখ মুজিবের এই কন্যা টি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন রাজনীতিসচেতন, সক্রিয় ছিলেন ছাত্ররাজনীতিতে। তবে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন সে কথা ভাবেননি কখনো। একজন শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর মায়ের অবদানের কথা বলেছেন বারবার।


মুভির এক পর্যায়ে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু একজন বিদেশী সাংবাদিককে বলছেন ২৫ মার্চের রাতে তাঁর গ্রেফতার হওয়ার গল্প। সে গল্প আমাদের বিস্মিত করে, যেন হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গনের কাহিনী।


মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্ত্রী-সন্তানদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার আবেগঘন পুনর্মিলনের কথা আমাদের জানান দেয় শুধু রাজনৈতিক কারণে একটি পরিবারের আত্মত্যাগের কথা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি দুর্বিষহ যন্ত্রণাময় এক অভিজ্ঞতা হয়ে আসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জীবনে। সে সময় তারা প্রবাসে ছিলেন, রাতের ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, পারিবারিক আবহে হাসি-তামাসা শেষে সকালের টেলিফোনের কর্কশ রিং তাঁদের জীবনে এমন দুঃসংবাদ আনবে, তা ছিল কল্পনাতীত। মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল তাঁদের জীবন।


গৃহকর্তার আদর-আপ্যায়ন সহসা বদলে রূপ নিল বিরক্তি আর অবহেলায়, তাঁরা বিদায় নিলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। জীবনের কঠিনতম সেই দিনগুলোতে তাঁদের আশ্রয় এবং সান্ত্বনা জোগান খ্যাতনামা কূটনীতিবিদ হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। পরবর্তীতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের ভারতে থাকার ব্যবস্থা করেন। শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়াকে চাকুরির ব্যবস্থা করে দেন। নাম-পরিচয় গোপন করে অন্য এক সংগ্রামী জীবন কাটাতে হয় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে।


আবেগাপ্লুত কণ্ঠে দুই বোনের বর্ণনা, শেখ হাসিনার অশ্রুসিক্ত দৃশ্যপট, ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল, সকলি ফুরায়ে যায় মা’ গানটির করুণ আবেদন আমাদের মনের অজান্তে দু' চোখ বেয়ে অশ্রুধারা নামায়।


প্রবাসজীবনের সে সময়গুলোতে দুই বোন ভাবতেন কীভাবে দেশে ফিরবেন, খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ফিরে এলেন স্বদেশের মাটিতে, এই বাংলার গণমানুষের মাঝে, স্বজন হারানোর ব্যথা ভুলে পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বেন বলে।


নব্বইয়ের স্বৈরাচারী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের স্মৃতিচারণ আমাদের হৃদয়কে আবারো নাড়া দেয়। বুকে পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা নূর হোসেন যেন শুধু শেখ হাসিনার নয়, আমাদের কাছেও হয়ে ওঠেন অতি আপনজন।


দেশ গঠনের কাজে অদম্য সংকল্পধারিণী, অক্লান্ত পরিশ্রমী, অকুতোভয় শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের আস্থার ঠিকানা হন অতি স্বল্প সময়ে। পিতার মতোই এ দেশের মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে কাজ করাই যেন তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। দুর্গম এই পথচলায় যেমন পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা তেমনি শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন বারবার।


২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়ার গল্প শেখ রেহানার বয়ানে শুনে আমাদের মর্মে নাড়া দেয়। জানিয়ে দেয় পিতার আদলে গড়া কন্যা তাঁর জীবন বাজি রেখেছেন কোনো ব্যক্তিস্বার্থে নয় বরং মানুষের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেবেন বলে। যে সোনার বাংলাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন বঙ্গবন্ধু, সেই সোনার বাংলার মাটিকে সোনার মানুষে পরিপূর্ণ করবেন বলে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।


এই ফিল্মটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততম সময়গুলোর মাঝ থেকে ব্যক্তিজীবনের কিছুটা সময় বের করে নিয়ে বানানো। এই ফিল্মের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার জীবন কাহিনী, আগামী প্রজন্মের কাছে এটি অনুপ্রেরণা ও পথচলার পাথেয় হয়ে থাকবে।


লেখক: সাবেক সহ-সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।


বিবার্তা/কামরুল/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com