''এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়''
উদ্দাম গতিতে ছুটে চলাই তারুণ্য, আর তারুণ্য রুখে দাঁড়ায় যত অন্যায়, অশুভ ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে। ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির পাঠ শেখায় ছাত্ররাজনীতি। যে ছাত্র পড়াশোনার আনুষ্ঠানিকতায় নিয়োজিত, সে খাতা-কলমের বিদ্যার্জনের সাথে সাথে হাত মুঠো করে স্লোগান দেয় আর এগিয়ে চলে দুর্বার গতিতে। কখনোবা নির্মল সুন্দরের আহবান কখনোবা উদ্ধত ভঙ্গিতে তার ছুটে চলা।
এই বঙ্গদেশে ছাত্ররাজনীতি ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে মূলধারার রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। সেইসময়কার ইয়ং বেঙ্গল, স্বদেশী আন্দোলনের বিপ্লবী ধারাটি ছিল ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত। বিশ শতকের শুরুতে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ছাত্রদের সক্রিয় রাজনীতিমুখী করে তোলে।
দেশবিভাগের পর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব সেই সময়কার জাতীয় রাজনীতির নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন ছাত্রদের বৈষম্য, অবিচারের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড় করায়। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজু হলে শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে ছাত্ররা দেখিয়ে দিয়েছিল তারুণ্যের বাঁধভাঙা ঢেউয়ের প্রবলতা।
৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ছিল তারই স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ। তাতে নড়ে গিয়েছিল আইয়ুব খানের মসনদ আর পূর্ব বাংলা এগিয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতার পথে। ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল তারই ফসল। ১৯৭১ সালের শুরু থেকেই ছাত্রদের দুর্বিনীত পদক্ষেপ ছিল একটি নতুন জাতিসত্তা নির্মাণের সূচনা। ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছিল ছাত্-জনতার রুখে দাঁড়াবার অকুতোভয় সাহস। বীর বাঙালি অস্ত্র ধরেছিল স্বাধীন দেশের পতাকা আকাশে পতপত করে উড়াবে বলে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে অস্থিরতা আর ঘোর অমানিশা নেমে আসে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে।
'৭৫-পরবর্তী সময়ে ছাত্রনেতাদের বিভক্তি আর বিরোধিতা ছাত্ররাজনীতির সুনামে কালিমা লেপন করে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা পুণরায় ঐক্যবদ্ধ হলেও তার অবক্ষয় ঘটেছিল দ্রুত। ছাত্ররাজনীতিতে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর নানা অপকর্ম বাসা বেঁধেছিল। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আর নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে ছাত্রনেতারা আস্থা হারাতে থাকেন সমাজে। বর্তমানে তারুণ্যের একটি বড় অংশ রাজনীতিবিমুখ - একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার প্রবণতা দেশের জন্য সুফল বয়ে আনার কথা নয়। কারণ, এ কথা সত্য এবং ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই বর্তমান রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রাথমিক ভিতটুকু তৈরি হয়েছিল আর আদর্শবান ছাত্রনেতারাই রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বর্তমান বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, গুজব আর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার গুরুদায়িত্ব ছাত্রসমাজের উপরেই বর্তায়। ক্ষুদে রাজনীতিবিদদের ত্যাগী, নির্লোভ আর আদর্শবান হয়ে আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে হবে।
নেতিবাচক কর্মকাণ্ড নয়, বরং ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দেশমাতৃকার সেবায় এগিয়ে এলে ছাত্ররাজনীতি আবারো দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে। এ পৃথিবীর যত জঞ্জাল সরিয়েছে তরুণরাই, কালের আবর্তনে তাকে ঢেলে সাজিয়েছে নতুনভাবে। তাই রাজনীতিবিমুখতা নয় সচেতনভাবে তাকে গ্রহণ করে নীতি আর আদর্শকে সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাওয়াই হোক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের মজবুত ভিত্তি। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয় ''আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে? তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে”।
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিবার্তা/কামরুল/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]