শিরোনাম
একটি বুলেটবিদ্ধ রাষ্ট্র
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৮, ১৭:২৩
একটি বুলেটবিদ্ধ রাষ্ট্র
ফারমিন মৌলী
প্রিন্ট অ-অ+

বাঙালি জাতির ইতিহাস খুব প্রাচীন। এর সাথে মিশে আছে বিপ্লব ও প্রেম। বিপ্লবীদের রক্তে স্নাত বাংলার পবিত্র ভূমি।


বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্মের ইতিহাস খুব দূরের নয়। বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে প্রথম বাঙালি জাতিকে দ্বিখণ্ডিত করে ব্রিটিশরা। কারণ, তারা জানতো বাঙালী জাতি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। তারা প্রতিবাদ করতে জানে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এবং অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতেও বিপন্ন হয় না।


বাঙালি জাতিকে প্রায় সব কালেই লড়াই করতে হয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। প্রতি বছর বর্গিরা এসে এ দেশে লুটতরাজ করতো। সামন্ত রাজারা চুষে খেয়েছে এই বাংলার ধনসম্পদ ও ফসলের হাসি। মোঘল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজা যখন বাংলার নবাব ছিলেন তখন বাংলা ফুঁলে ফেঁপে ওঠে অর্থ বাণিজ্য ও ধনসম্পদে। বাংলার সম্পদের লোভে ভিড় জমায় সাদা চামড়ার বেনিয়ারা। পলাশীর প্রান্তরে বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষের স্বাধীনতা হারিয়ে বাংলা পড়ে যায় অতল গহ্বরে।


এ বাংলা জন্ম দিয়েছে বৃটিশবিরোধী বিপ্লবের। বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছেন নেতাজী সুভাষ বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা, বিপ্লবী ইলা মিত্র ও ক্ষুদিরামের মতো বিপ্লবীরা। অবশেষে রক্তের পথ মাড়িয়ে দুশো বছরের ব্রিটিশ পরাধীনতার জিঞ্জির ভেঙে নবোদয় হয় ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটো রাষ্ট্র। আবারো বাংলা ভেঙে দু ভাগ হলো। পশ্চিম বাংলা পেলো ভারত, পূর্ব বাংলা জুটলো পাকিস্তানের ভাগে। নাম হলো পূর্ব পাকিস্তান। সাংস্কৃতিক বা ভাষাগত কোনো মিল না থাকার পরেও শুধুমাত্র ধর্মের কারণে সোনার বাংলা হলো পাকিস্তানের উপনিবেশ।


পাকিস্তানিরা জানতো একটি জাতিকে ধংস করতে হলে সবার আগে তার মুখের ভাষা রোধ করতে হবে। তাই প্রথম আঘাত এলো বাংলা ভাষার ওপর। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়ী হয়েও সরকারে থাকতে পারেনি। পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরায়ার্দীও পাক মিলিটারির কবলে পড়ে টিকে থাকতে পারেননি।


এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও সরকার গঠন করতে পারেনি। পাক জান্তার তালবাহানা চলতে চলতে এলো ২৫ মার্চের কালোরাত। হত্যার উৎসব শুরু হলো দেশজুড়ে। কান্না আর রক্তের স্রোতে লাল হলো বাংলা। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে এক সাগর রক্ত মাড়িয়ে এলো কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বিশ্ব দেখলো সদ্যস্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে।


স্বাধীন বাংলাদেশ এসেছিলো অনেক রক্ত ও অশ্রুর সাগর পাড়ি দিয়ে। বাঙালির চোখের জল তখনও শুকোয়নি, এরই মাঝে তৈরি হলো সিরাজ শিকদারের গুপ্তঘাতক বাহিনী। লুণ্ঠিত হতে লাগলো বাংলার ভূমি।


রাষ্ট্রটি তখনও সদ্য জন্ম নেয়া একটি শিশু। পাকিস্তানিরা কিছুই রেখে যায়নি, ব্যংকের ডলার, রেমিটেন্স, অর্থ সম্পত্তি কিছুই ছিলো না। সদ্য তিন বছর পেরোনো শিশু রাষ্ট্রের বুকে আচমকা নেমে এলো এক কালো রাত। রাষ্ট্র হারালো তার পিতাকে। জাতি হারালো তার সূর্যসন্তানকে।


রাষ্ট্র দেখলো জনকের বুলেটবিদ্ধ নিথর দেহ। মুজিবকে ভয় পেতো ইয়াহিয়ার মতো পশুও। সেই মুজিব নিহত হলেন তার অনুগত সেনাদেরই হাতে। খুব সচেতনভাবে একদল লোক বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার সম্পৃক্ততা এড়িয়ে চলেন। অথচ এ ঘৃণ্য হতাকারী জাতির পিতার খুনের অন্যতম কুশীলব। না পাঠক, এ কোনো বানানো গাল গল্প নয়। বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ফারুক-রশিদের স্বীকারোক্তি তা-ই বলে।


পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছে আজ ৭১ বছর হলো। এতো দিনেও তারা পারেনি একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন করতে। অথচ বাংলাদেশে জাতির জনক তা করেছেন মাত্র এক বছরে। আমাদের দেশ পৃথিবীর অনেক সভ্য দেশের আগেই ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন করেছে। বিশ্বের অনান্য দেশ তখনও আদিম শিকারে লিপ্ত। ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রচার ও সংস্কৃতি রক্ষায় বঙ্গবন্ধু নেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ। এভাবে ঘাত প্রতিঘাত চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলা দেশ এগিয়ে যাচ্ছিলো।


কিন্তু ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিলো একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন। বুলেটবিদ্ধ হলেন জাতির জনক, বুলেটবিদ্ধ হলো রাষ্ট্র। একটি বুলেটবিদ্ধ রাষ্ট্রের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাংলার ফল ফসলের মাঠ, বাংলার মাটি বাংলার জল। আজও সেই বুলেটবিদ্ধ রাষ্ট্র জনকের শোকে শোকাহত।


লেখক: সাবেক ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ।


বিবার্তা/হুমায়ুন/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com