শিরোনাম
বিশ্ববাসীকে ‘দেশরত্নের’ সেরা ‘ট্র্যাজি-কমেডি’ উপহার
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০১৮, ১৭:২৯
বিশ্ববাসীকে ‘দেশরত্নের’ সেরা ‘ট্র্যাজি-কমেডি’ উপহার
হায়দার মোহাম্মাদ জিতু
প্রিন্ট অ-অ+

সরদার ফজলুল করিমের মতে, ‘সাহিত্য সমাজের আত্মপরিচয় বহন করে এবং ইহা কখনই নিরপেক্ষ নয়’। আর সাহিত্য রচনার কারিগর যেহেতু মানুষই, সে হিসেবে এদের কেউ যদি নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করেন, তবে তা নিতান্তই ভাঁওতাবাজি।


তবে ট্র্যাজেডি হল বাঙালির জীবনে এখন এই ভাঁওতাবাজের সংখ্যাই বেশি এবং এরাই নিজেকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে দাবি করেন। তবে আশার কথা, গ্রামসির ফ্রেমকৃত নিক্তিতে এদের অন্তত মাপা যায় !


গ্রামসির চিন্তাকৃত দুই শ্রেণীর মাঝে এরা পোষাপালিত শ্রেণীর। অর্থাৎ, এরা সরাসরি উৎপাদনব্যবস্থার সাথে জড়িত না থেকে অন্যের অনুগ্রহে পালিত হন।


একটা সময় এদেশ বহিঃশত্রু (১৯৪৭-৭১) এবং স্বৈরাচারী (১৯৭৫-৯০) শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। তখন প্রেম-দ্রোহ-স্পর্ধার অনুরণনে এখানকার বুদ্ধিজীবীরা অন্যায়কে তর্জনী-তুবড়ি দেখিয়েছিল। অথচ আধুনিকতার এই উর্বর সময়ে একটা বৃহৎ অন্যায়কে এঁরা প্রায় ফাঁক গলে যেতে দিল !


বহুপক্ষীয় চিন্তার অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু সেই চিন্তার প্রয়োগ যদি গণমানুষের প্রাণনাশে ব্যবহৃত হয়, তবে তা একাধারে পরিত্যাজ্য ও শাস্তিযোগ্য।


২০১৪এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চালানো ‘বিএনপি-জামায়াত-শিবির জঙ্গি তৎপরতা’ সেই চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ। জনবিমুখ এসব সংগঠন নিজেদের নিশ্চিত পরাজয়ের গ্লানি ঘোচাতে বলি দিয়েছে নিরীহ সাধারণ মানুষকে।


২০১৪এর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে “২০১৩ এর ২৮ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি” পর্যন্ত তারা চালিয়েছে নারকীয় জঙ্গি তৎপরতা। ফলাফল, সারা দেশের ২২৪০৬ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ-আহত এবং ৫০৬ জন মানুষ নিহত।


রীতিমত জঙ্গি কায়দায় ঘুমন্ত বাসযাত্রীদের উপর পেট্রোল হামলা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, দিনের আলোতে চলন্ত যাত্রীবাহী বাসের ছিটকানি লাগিয়ে তাতে আগুন দিয়েছে।


অথচ পেট্রোল বোমার ইন্টারনেট অতীত বলে, ‘এটি মূলত ব্যবহৃত হতো অস্ত্রধারী পক্ষের বিরুদ্ধে’।সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কেন নিরস্ত্র মানুষের উপর ‘বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের’ পেট্রোল বোমার জঙ্গি তৎপরতা ?


সহজ উত্তর। ‘বিএনপি-জামায়াত-শিবির’ বিমুখী ভোট অস্ত্রই তাদের অপরাধ। যার ফলাফল এই তাণ্ডব।


শুধু তাই নয়, তাদের জঙ্গি ছোবল রেহাই দেয়নি জানমালের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকেও। তাদের জঙ্গি তৎপরতায় বাধা দেয়ায় নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে ১৩ জন পুলিশ এবং ২ জন বিজিবি সদস্যকে।


এসব ডিঙ্গিয়েও যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আগুয়ান, তখন বেগম জিয়ার নির্দেশে সারাদেশের রেল যোগাযোগ খাতকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থায় প্রায় ৪০০ বারের মত হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনা সরকার সারাদেশের রেল উন্নয়নে নিত্যনতুন লাইন এবং ট্রেনের সংযোগ দেবার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।


জননেত্রী শেখ হাসিনা গড়ার প্রত্যয়-প্রলয়ে জঙ্গি রাণী জিয়া একজন ডেভিল। কারণ তার এই নির্লিপ্ত মানুষ হত্যার কাসুন্দি।


তবে এত কিছুর পরও কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাদের পোষাপালিত ভৃত্যের সঠিক সংজ্ঞায়নের মান এবং জাত রেখেছেন।


সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রগতিশীলরা হারমোনিয়ামের রিড, কবিরা কবিতার শব্দঝংকার কিংবা নাটকের কেউ এই নারকীয় হত্যার সময়কে কুঠারাঘাত করেননি। উপন্যাসিকরা হয়ত পরেই লিখবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক মহাশয়কেও খুব বেশি বলিষ্ঠ কিছু করতে দেখা যায়নি।


তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করা ‘কোটা’ আন্দোলনে তাদের ঠিকই দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কালচারাল বিভাগগুলো’ তাদের শিক্ষার্থীদের নাটক-গান-পারফরম্যান্স মাধ্যমে একে বাতাস পর্যন্ত দিয়ে গেছেন !


অর্থাৎ, বাঙ্গালীর সামাজিক জীবনে গ্রামসি আবিষ্কৃত পোষাপালিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর আধিক্য রইলেও প্রান্তিক বুদ্ধিজীবী শ্রেণী প্রায় নিরুদ্দেশ ! ফলাফল মিথ্যার মোড়কে নিরপেক্ষ থাকবার চেষ্টা। যদিও প্রান্তিক শ্রেণীর উপস্থিতি থাকলে এই ফাঁড়া বহুলাংশেই কেটে যেত।


তবে এরপরও বাঙ্গালী স্বপ্ন বুনতে পারেন। কারণ তাদের বাতিঘর ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’। যার অকুতোভয় দেশপ্রেম জঙ্গি বেগম জিয়ার সব মরণফাঁদকে হটিয়ে ছুটিয়ে চলেছে ‘বাঙ্গালীর জয়রথ’। যার প্রমাণ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতিহাসে প্রথমবারের মত ২৮-০৫-২০১৮’তে দেশ সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের (১০৮৩৫ মেগাওয়াট) রেকর্ড গড়েছে। ‘রুপপুর এবং রামপাল’ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মত মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণিত করে ‘পদ্মা সেতুর’ মত প্রকল্প নিজের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে।


তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববাসীকে দেয়া ‘দেশরত্নের’ সেরা ‘ট্র্যাজি-কমেডি’ উপহার ‘বঙ্গবন্ধুর স্যাটেলাইট-১’।


ট্র্যাজিক এ কারণে যে যুক্তরাষ্ট্র একদিন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল আজ সেই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে, পুরো বিশ্বের সামনে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করল বাংলাদেশ।


আর কমিক কারণ মাদার অফ হিউম্যানিটি শেখ হাসিনা বাঙ্গালীর অসাধ্য সাধনে ওদের পুরো বোকা বানিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি আরো শুরু করেছেন ‘বঙ্গবন্ধুর স্যাটেলাইট-২’ এর কাজ।


সুইস ভাষাতাত্ত্বিক ফারদিনান্দ দ্যা দস্যুর ভাষা সংক্রান্ত সূত্রের একটি মতে, ‘শব্দের অর্থ তার মাঝে নিহিত থাকে’। সে হিসেবে আজ ‘শেখ হাসিনার’ নামের ভেতর নিহিত ‘বাঙ্গালীর নির্ভরতা এবং বর্তমানের আলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’।


আবার সরদার ফজলুল করিম মতে, ভাষা বড় চঞ্চল। সবাই তাতে জায়গা করতে পারে না। তবে ‘বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা’ সেটা পেরেছেন। ‘বাবা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অর্জনে এবং কন্যা একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ বিজয়ের মধ্য দিয়ে’।


বিবার্তা/জিতু/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com