শিরোনাম
জামায়াত-শিবিরের 'তাকিয়া' কৌশল
প্রকাশ : ১৪ মে ২০১৮, ১৮:২৩
জামায়াত-শিবিরের 'তাকিয়া' কৌশল
এম আই কে রাশিদুল ইসলাম রাশেদ
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী। বর্তমান জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান ১৯৭১ সালের পূর্বে জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন "ছাত্র সংঘ"-এর নেতা ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করায় স্বাধীনতার পর জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে ডাঃ শফিক ১৯৭২ সালে জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) সিলেট জেলা শাখার প্রভাবশালী ছাত্রনেতা বনে যান। আবার ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান "রাজনৈতিক দল বিধিমালা" জারি করে জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিলে ডাঃ শফিক জামায়াতের রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং তিনি বর্তমানে জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল।


১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ডাঃ শফিকের জাসদের রাজনীতিতে থাকা ছিলো জামায়াতে ইসলামীর 'তাকিয়া' পদ্ধতির আওতায় রাজনীতির অংশ।


জামাত-শিবির তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের লক্ষ্যে অনুকূল সময়টাতে সাংগঠনিকভাবে যেমন 'তাকিয়া' পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে , ঠিক তেমনি রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশে এই পদ্ধতি আরো ব্যাপকহারে প্রয়োগ করে থাকে।


জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠনের দুটি ভাগ একটি ইসলামী ছাত্রশিবির, অপরটি ইসলামী ছাত্রীসংস্থা। জামাতে ইসলামের মাস্টারমাইন্ডগণ তাদের ছাত্ররাজনীতি যেন বর্তমান বৈরি পরিবেশে প্রসারিত হয়, সেজন্যে তাদেরকে এই 'তাকিয়া' পদ্ধতিভিত্তিক কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে ২৮অক্টোবর ২০০৬সালের পল্টন মোড়ে অান্দোলনের পর থেকে তারা এই পদ্ধতিতে সংগঠনের প্রসার দৃঢ় করার বিষয়ে গভীর মনোনিবেশন করে এবং বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়।


'তাকিয়া' শব্দটি বিশেষ্য ও বিশেষণ দুটি পদে ব্যবহার হয়, যার অর্থ দ্বীনের স্বার্থে প্রতারণা, চক্রান্ত করার যে অনুমতি (সূত্র - উইকিপিডয়া)। এই পদ্ধতির প্রয়োগ অারো বেড়ে যায় জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার যখন একে একে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করেন।


বর্তমানে এই পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অর্গানে এরা নীরবে কাজ করে যাচ্ছে, নিজস্ব লোকবলকে কাজে লাগিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিল করছে। এরা যাদুকরের মতো চোখে ধুলা দিতে দক্ষ। কাউকে বুঝতে দেবে না যে আপনার আপন না এরা। বরং আপনাকে যত ধরণের তোষামোদ করা যায়, ঠিক ততটা বা তার চাইতেও বেশি করতে এদের দ্বিধা নেই এবং করেও থাকে তাই। বলতে গেলে এটাই তাদের মূল হাতিয়ার।


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে এসব 'তাকিয়া' ভিত্তিক অনুপ্রবেশ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা। শুধু তাই নয়, প্রগতিশীল রাজনীতির ভেতর এবং বিভিন্ন প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠানে এদের অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। যেমন- বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও পত্রিকাতে 'তাকিয়া' ভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছে এরা। তাদের নেতাদের যুদ্ধ অপরাধের জন্য যে ফাঁসি দেয়া হয়েছে সেটার প্রতিশোধ নেয়াই তাদের একান্ত কাম্য। সাম্প্রতিক কোটাপ্রথাবিরোধী অান্দোলনের প্রক্রিয়াটা হলো তাদের একটি প্রাথমিক এক্সপেরিমেন্ট। যেটার ধারাবাহি্তায় কোনো এক সময় সামাজিক অান্দোলন গড়ে তুলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অাসীন হওয়া এবং মওদুদীবাদ প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য।


মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এই জামায়াতি 'তাকিয়ারা' বিশেষ টার্গেট করে নিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতান্ত্রিক মূলনীতি। সুতরাং এই মূলনীতি বাস্তবায়ন ও রক্ষা একমাত্র স্বাধীনতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সুনিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে মুজিব আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাঙালি জাতিসত্তার জাতীয়তাবাদ খুব মনেপ্রাণে ধারণ করে - এমন ছাত্রনেতৃত্ব অতি প্রয়োজন। নতুবা রক্তের মূল্যে কেনা বিজয়কে বিদ্রুপ বিদ্ধ হতে হবে প্রতিনিয়ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিদ্রুপ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, অসম্মানিত হতে হবে পিতা মুজিব অাদর্শের সৈনিকদেরকে। আর অন্যদিকে পৈশাচিক উল্লাসে নাচবে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের 'তাকিয়া' নামক অপশক্তি।


লেখক : সদস্য, বন ও পরিবেশ উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com