শিরোনাম
মোর্শেদ হাসান খানকে রাখার ডাস্টবিন কোথায়!
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০১৮, ১৭:৫১
মোর্শেদ হাসান খানকে রাখার ডাস্টবিন কোথায়!
খন্দকার হাবীব আহসান
প্রিন্ট অ-অ+

নয়া দিগন্ত পত্রিকায় গত ২৬ মার্চ 'জ্যোতির্ময় জিয়া' শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খান যে কলাম লিখেছেন তা একই সাথে ইতিহাসবিকৃতি এবং বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতিকে নিয়ে একটি ঘৃণ্য মিথ্যাচার।


মোর্শেদ হাসান তার লেখার প্রথমেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, আধুনিক বাংলাদেশ, বহুদলীয় গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ নিয়ে যা বলেছেন, তা শুধু চক্রান্তের অংশই না, রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিলও।


এবার জিয়াউর রহমানের উত্থান ও তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনায় আসা যাক। জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর জিয়াউর রহমানের পরিবার পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গেলে জিয়াউর রহমানের কৈশোর-যৌবন সেখানে অতিবাহিত হয় এবং তখন থেকে তিনি পাকিস্তানপ্রেমী হয়ে বেড়ে ওঠেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে মেজর পদে উন্নীত হওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তানের চর হিসাবেই তাকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে পাঠানো হয় পূর্ব পাকিস্তানে।


মোর্শেদ খানের লেখার সূত্র ধরে ''স্বাধীনতার ঘোষক কে'' এই বিতর্ক তুলতে চাইলে বলতেই হয়, পাকসেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে যখন এদেশের নিরপরাধ ঘুমন্ত মানুষের উপর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানের ছক অনুযায়ী জিয়াউর রহমান কৌশলগত অবস্থান নেন। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাসভবন থেকে ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই রাত ১২.৩০ মিনিটে এবং ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরও করেন, যার কথা ১৯৭২-এর সংবিধানেই উল্লেখ আছে। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমেও এটা প্রমাণিত। ওই রাত ৩.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়।


ইপিআরের ওয়ারলেসে দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত, যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স এজেন্সি তাদের প্রকাশিত দলিলেই যা তুলে ধরেছিল। স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই নিউইয়র্ক টাইমস তাদের বৈকালিক সংষ্করণে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ছাপিয়ে লিখেছিল, 'পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র সময় ২.৩০ মিনিটে (দুপুর) স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।'


এদিকে জিয়াউর রহমান সেদিন পাকিস্তানী মেজর জানজুয়ার নির্দেশে চট্টগ্রাম পোর্টে অস্ত্র খালাস করতে গেলে পথ থেকে মেজর রফিকুল ইসলাম তাকে ফেরত নিয়ে আসেন। ২৬ মার্চ কালুরঘাট রেডিও স্টেশন দখল নেয়ার পর ট্রান্সফরমার না থাকায় ২৬ তারিখ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচারে বিলম্ব হয়। ২৭ মার্চ সকাল ১০ টায় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, পরবর্তীতে বেলাল মোহাম্মদ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাপত্র বারবার পাঠ করেন।


তারপর একজন সেনা অফিসার দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করানোর সিদ্ধান্ত হলে মেজর রফিকের অনুপস্থিতিতে মেজর জিয়াউর রহমানকে পাঠ করার সুযোগ দিলে সে পুনরায় জানজুয়ার চক্রান্ত অনুযায়ী, আর্মি চিফ প্রভিশনাল এন্ড এক্টিং প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা পাঠ করতে চাইলে ধমক দিয়ে বাধা দেন এম এ হান্নান। সেদিন ২৭ মার্চ সন্ধা ৭.৪৫ মিনিটে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।


তারপরও ইন্দিরা গান্ধী, সঞ্জীব রেড্ডির উদ্ধৃতি দিয়ে মোর্শেদ হাসানের মত মিথ্যা ব্যাখ্যা প্রদানকারী ও ইতিহাস বিকৃতিকারীদের নোংরামি বন্ধ করতে পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্টের রায়েও প্রমানিত হয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক।


জিয়াউর রহমানকে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার বলার ব্যাখ্যা কারো হয়তো জানা নেই মোর্শেদ হাসানদের ছাড়া। আর জিয়াউর রহমান দেশদ্রোহী রাজাকার, আলবদর এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টিকেই হয়ত বহুদলীয় গণতন্ত্রের চোখে দেখেছেন এই অন্ধ মোর্শেদ হাসান।


আসলে পরাজয়ের অপমান সইতে পারেনি পাকিস্তানিদের দেশীয় সহযোগী রাজাকার-আলবদররা। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাম্প্রদায়িক নানা চক্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যখন ঐ লোভী শ্রেণী বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র পরিচালনার সুকৌশলের কাছে ব্যর্থ হচ্ছিলো বারবার, তখন তারা বাঙ্গালী জাতির রাখালরাজা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। যে চক্রান্তে পরোক্ষভাবে জিয়াউর রহমানও জড়িত ছিলো, যা কর্নেল হামিদ পিএসসির লেখা 'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা' বইয়ে স্পষ্ট উল্লেখিত। চক্রান্ত আর পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তীতে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি একজন স্বৈরশাসক হিসাবে পেয়েছিলো জিয়াউর রহমানকে।


ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! বিএনপির অন্তঃকোন্দল মেটাতে চট্টগ্রাম অবস্থানকালে ১৯৮১ সালের ৩০ মে কিছু সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন জিয়াউর রহমান।


পরবর্তীতে বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এরপর দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন সুখী সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক উন্নয়নশীল ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপ পেয়েছে।


অথচ মোর্শেদ হাসান খানরা এদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করতে চান বারবার। দেখতে পান না আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো উন্নয়ন। কেবল পিছিয়ে নিয়ে যেতে চান বাংলাদেশকে, বিভক্ত করতে চান এদেশের তরুণ প্রজন্মকে স্বাধীনতার মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে।


আজ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম জানে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা। এরূপ অবস্থায় মোর্শেদ হাসান খান একজন অপ্রয়োজনীয় আবর্জনা এদেশের জন্য। যাদের উপস্থিতি এদেশের পরিবেশকে নোংরা করে, তার অবস্থান অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো হওয়া উচিত নয়ই, বরং সে গোটা বাংলাদেশের জন্য আবর্জনস্বরূপ, তার অবস্থান ডাস্টবিনে।


কিন্তু এই ইতিহাস বিকৃতিকারী, মিথ্যাবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী মোর্শেদ হাসান খানকে রাখার মতো ডাস্টবিন কোথায়?


লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com