শিরোনাম
খালেদার রায় : পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ভারত
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৬:২৩
খালেদার রায় : পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ভারত
দীপক দেবনাথ
প্রিন্ট অ-অ+

দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের রায়-পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপের আগ্রহ নেই দিল্লির।


সাউথ ব্লকের বিশ্বাস এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা আরো বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য শেখ হাসিনাই তাদের কাছে সেরা বাজি।


জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে বৃহস্পতিবারই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ওই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ আরো চারজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।


আদালতের ওই রায়ে চলতি বছরে সাধারণ নির্বাচনে খালেদার অংশগ্রহণ একপ্রকার অনিশ্চিত। স্বাভাবিক ভাবেই খালেদার অনুপস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক ফায়দা পেতে যাচ্ছে বর্তমান শাসকদল আওয়ামী লীগ। যদিও সেটি খুব একটা স্বস্তির বিষয় হবে না আওয়ামী লীগের জন্য। বিষয়টি সেদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে ভালো না হলেও এমন পরিস্থিতিতে খালেদার প্রতি কোনো সহানুভূতি নেই দিল্লির।


খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। প্রধানত এই দুই রাজনৈতিক দলই বাংলাদেশের রাজনীতিতে কর্তৃত্ব করে আসছে। আর সেই কারণে সেদেশের রাজনীতি ‘ব্যাটল অব দ্য বেগম’ বলেও পরিচিত।


১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। শেষবার ২০০১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। মাঝে কয়েকটা বছর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর ২০০৮ সালে বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসেন হাসিনা।


এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে সাধারণনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় সেবারও কোনো রকম শক্ত বাধা ছাড়াই ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। যদিও বিরোধীসহ কোনো কোনো মহল থেকে সেই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তোলা হয়।


তবে বিএনপির চেয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকেই বেশি ভরসা নতুন দিল্লির। কারণ আওয়ামী লীগ সবসময় ভারতের বন্ধু বলেই পরিচিত। খালেদার শাসনকালে উত্তরপূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি ঘাঁটি গেড়েছিল বাংলাদেশে। যেটা ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় হুমকির কারণ হয়ে উঠেছিল।


২০০৮ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর বাংলাদেশে আত্মগোপনকারী উত্তরপূর্বের ভারতীয় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উচ্ছেদে তৎপর হন। এসময় বহুআলফাসহ উত্তরপূর্বের জঙ্গি নেতাদের ভারতের হাতে তুলে দিয়ে শেখ হাসিনা উত্তরপূর্বে ভারত সরকারের দুশ্চিন্তার অবসান ঘটান। জঙ্গি দমনেও আপ্রাণ চেষ্টা করেছে হাসিনার সরকার।


ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে স্বাধীনতাপন্থী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই চেষ্টা চালিয়ে গেছে। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরই ভারতের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কেও অনেক গতি এসেছে। পোশাকসহ কয়েকটি খাতে বাংলাদেশি রফতানিকারকদের সাথে ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দিল্লিও বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে কানেকটিভিটি বেড়েছে।


২০০৯ সাল থেকে প্রতিবেশী এই দুই দেশের যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিরাজ করছে তা আগে কখনোই দেখা যায়নি। দুই দেশের রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবীরাও এই বিষয়ে একমত যে, বর্তমানে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।


সম্পর্কের শুরুটা হয়েছিল ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের আমলে। আর শক্তিশালী হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময়ে। বিশেষ করে ২০১৫ সালে যখন ৬৪ বছরের পুরনো স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন হলো। তারও আগে ২০১৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় প্রত্যার্পণ চুক্তি হয়। ভিসার সরলীকরণের ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতওসহজতর হয়েছে।


আর সেদিকে তাকিয়ে এইমুহূর্তে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি নিয়েছে সাউথ ব্লক। প্রতিবেশী দেশটিতে ঘটে চলা প্রতিটি ঘটনার ওপর কড়া নজর রাখছে তারা। আসলে দিল্লির দৃঢ় বিশ্বাস সমস্ত জটিলতা দূর করে শেখ হাসিনার সরকার শান্তি বজায় রাখতে সফল হবে।


ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক এক ভারতীয় হাইকমিশনার জানান, দুর্নীতি মামলায় খালেদার আটকের ঘটনাটা খুবই জটিল। কারণ শেখ হাসিনা ভারতের বন্ধু বলেই পরিচিত। এই অবস্থায় ভারত প্রতিবেশি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না বলেই মনে হয়। কিন্তু বিএনপি বা জামায়াত সেখানে কোনো সমস্যা তৈরি করছে কি না- দিল্লি তার দিকে পুরো নজর রাখছে।


তিনি আরো জানান, এই রায়ের ফলে খালেদা হয়তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু তার দল নির্বাচনে যেতে পারে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। কিন্তু এবার হয়তো সেটা হবে না।


এ প্রসঙ্গে পুরনো সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তার অভিমত ভারতের এখন উচিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিটি সেরে ফেলা। কারণ বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকারের তরফে এটি দীর্ঘদিনের দাবি।


লেখক : সাংবাদিক (কলকাতা প্রতিনিধি, বিবার্তা২৪ডটনেট)


বিবার্তা/ডিডি/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com