নজরে ২৮ অক্টোবর : সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি আসছে?
দেশের রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা : কী হতে চলেছে ২৮ অক্টোবর?
পরিস্থিতি অনুযায়ী আরো কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪৩
দেশের রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা : কী হতে চলেছে ২৮ অক্টোবর?
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। এই মহাসমাবেশে বড় জমায়েত করতে চায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করার ঘোষণা দিয়েছে দলটির শীর্ষ নেতারা। ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে হুঙ্কার, পাল্টা হুঙ্কারে দেশের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে চরম উত্তেজনা।



একই দিনে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের জনসভা ও শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত ইসলামী। এছাড়া ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, এলডিপি, এনডিএম ও লেবার পার্টিসহ বিভিন্ন সমমনা দলও।



বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দিয়েছেন ‘ওই দিন জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ে আন্দোলনের মহাযাত্রা শুরু হবে’। বিএনপি মহাসচিবের এ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পাল্টা ঘোষণা দিয়েছে, ‘ওই দিন তাদেরও মহাযাত্রা শুরু হবে, বিএনপি যদি অবরোধের মতো সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালন করে, তাহলে ক্ষমতাসীন দল বিএনপিকে অবরুদ্ধ করবে।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় তারাও প্রস্তুত।


এদিকে মহাসমাবেশকে সফল করার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। গত রবিবার ২২ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি মহানগর ও জেলায় জেলায় দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা ও মতবিনিময় করা হয়েছে। এছাড়া সমাবেশ সফল করতে সমমনা জোট ও দলগুলোর সাথেও দফায় দফায় বৈঠক করছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন দলের নেতাদের আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে দিক নির্দেশনা ও কর্মসূচি ঠিক করেছেন।


মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা কর্মীদের ধরপাকড় চলছে অভিযোগ করে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের কোন বাধাই আগামী ২৮ তারিখের মহাসমাবেশ আটকাতে পারবে না। সারা দেশ থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ মহাসমাবেশে যোগ দেবে। ২৮ অক্টোবর সারা দেশ থেকে রাজধানী অভিমুখে মানুষের স্রোত শুরু হবে।



বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দলটি এটিকে সরকার পতনের শেষ ধাপের চূড়ান্ত কর্মসূচি বলে মনে করছে। চূড়ান্ত কর্মসূচি জন্য সকল রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। রাজধানী ঢাকা ঘিরে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত কর্মসূচিতে ছাত্র যুব পেশাজীবীসহ সরকার বিরোধী সবাইকে সম্পৃক্ত করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। চূড়ান্ত কর্মসূচির জন্য ঢাকাসহ আশপাশের জেলা এবং মহানগরকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশও দিয়েছেন দলটি।



জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আগামী ৩০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি ও তার মিত্ররা। সোমবার ২৩ অক্টোবর রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বিএনপির বৈঠকে এই কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মহাসমাবেশ করতে পারলে সেখান থেকে ঘেরাওয়ের ওই কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। যদি তা না হয়, তাহলে তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী আরো কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।


বিএনপির সাংগঠনিক ১০ বিভাগে একটি করে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমন্বয় কমিটিতে কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছে, যারা এখন সব সাংগঠনিক জেলা সফর করছেন। এ টিম সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের ঢাকায় আসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। সে অনুযায়ী সারা দেশে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নেতাকর্মীদের বাধাহীনভাবে ঢাকায় আসতে হলে কমপক্ষে তিন দিন আগে ঢাকায় আসতে হবে। বিশেষ কোনো কাজ না থাকলে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে।



বুধবার (২৫ অক্টোবর) নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর শনিবার ঢাকায় নয়াপল্টন্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি’র উদ্যোগে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এই মহাসমাবেশ হবে নজীরবিহীন, ঐতিহাসিক। সারাদেশের গণতন্ত্রহারা বঞ্চিত মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েছে। যদিও সরকারী জুলুম—নির্যাতন—দমন—পীড়নের কোন কমতি নেই। অব্যাহত গণগ্রেফতারের মধ্যেও দীপ্ত অঙ্গীকারে তারা ঢাকার দিকে ছুটে আসছে।



নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বিবার্তাকে বলেন, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে সর্বোচ্চ নেতাকর্মীদের নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশ সফল করার জন্য আমরাও দফায় দফায় মতবিনিময় সভা করেছি। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সকলকে বলা হয়েছে। আশা করছি ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ অতীতের সকল রেকর্ডকে ভেঙে দেবে। এছাড়া আগামী দিনে যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা সফল করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।


ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনম সাইফুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করার জন্য কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে। মানুষের অধিকার গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া বাধা আসলে প্রতিরো গড়ে তুলতে বলা হয়েছে। সরকার আমাদের সিনিয়র নেতাদের একের পর এক সাজা দিচ্ছে। মামলা, হামলা, সাজা দিয়ে আমাদের চলমান আন্দোলন স্তব্ধ করা সম্ভব নয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।


বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বিবার্তাকে বলেন, সরকারের পতনের দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। এই সমাবেশ সফল করার জন্য ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে আর পিছনে ফেরার সময় নেই। সারা দেশের মানুষ এক হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এক হয়েছে কেউ এখন এই সরকারকে চায় না। মহা সমাবেশ থেকে যে কর্মসূচি ঘোষণা আসবে তাতে এই সরকারের পতন ঘটবে।


বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিবার্তাকে বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে রয়েছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মসূচি ঘোষণা করবো। পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে যেকোনো ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে।


বিবার্তা/এমই/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com